ঢাকা, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

তিন বছর খাজনা না দিলে জমি হবে খাস, আসছে নতুন আইন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ২০:০৫:০৮
তিন বছর খাজনা না দিলে জমি হবে খাস, আসছে নতুন আইন

ভূমি আইন ২০২৪-এর খসড়ায় যুক্ত হচ্ছে কঠোর নিয়ম, আসছে স্মার্ট জমির কার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: আপনার নামে জমি আছে, কিন্তু বছরের পর বছর খাজনা দিচ্ছেন না? সাবধান! সরকার এবার এমন এক আইন আনছে, যাতে টানা তিন বছর খাজনা না দিলে সেই জমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে নিয়ে নেওয়া হবে।

এ বিধান যুক্ত হচ্ছে নতুন ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪’-এর খসড়ায়। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের জমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তুলতেই এই নতুন আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খাজনা বকেয়া থাকলে জমির মালিকানা হারাবেন

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে—

একটানা তিন অর্থবছর খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) না দিলে জমি সরকার বাজেয়াপ্ত করবে এবং সেটি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এই আইন কার্যকর হলে জমির মালিক, তাঁর মালিকানার অধিকার হারাবেন। অর্থাৎ, জমি আর তাঁর থাকবে না।

আসছে ভূমি স্মার্ট কার্ড (সিএলও)

প্রতিটি জমির মালিককে দেওয়া হবে একটি আধুনিক ভূমি মালিকানা সনদ (সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ বা সিএলও)। এতে থাকবে:

ইউনিক নম্বর

কিউআর কোড

মালিকানা ও জমির যাবতীয় তথ্য

এই স্মার্ট কার্ড হবে জমির মালিকানার চূড়ান্ত দলিল। জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এই সনদের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হবে।

ভূমি জালিয়াতিতে শাস্তি: ২ বছর জেল, ৫ লাখ জরিমানা

জমি জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর বিধান থাকছে নতুন আইনে।

জাল দলিলে জমি দখলের চেষ্টা করলে হতে পারে—

২ বছর জেল

৫ লাখ টাকা জরিমানা

বা উভয় শাস্তি

ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, এতে জমি দখল ও প্রতারণার প্রবণতা কমবে।

কৃষিজমির রক্ষা পাচ্ছে বিশেষ মর্যাদা

সরকার দুই বা তিন ফসলি জমি উন্নয়ন প্রকল্পে অধিগ্রহণ করতে পারবে না,

শুধুমাত্র বিশেষ মন্ত্রণালয় অনুমতি থাকলেই তা সম্ভব

অগ্রাধিকার পাবে অনুর্বর বা কম উৎপাদনশীল জমি

এর মাধ্যমে কৃষিজমির অবাধ দখল ঠেকানো সম্ভব হবে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তনেও থাকছে বিধিনিষেধ

সরকারের অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ

এক বিঘা পর্যন্ত জমির ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়

নিয়ম লঙ্ঘনে—

১ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে

স্যাটেলাইট ভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র

দেশের প্রতিটি জমির শ্রেণি, অবস্থান ও ব্যবহার নির্ধারণে চালু হবে স্যাটেলাইট চিত্রভিত্তিক ভূমি মানচিত্র। এতে চিহ্নিত করা যাবে:

আবাসিক

বাণিজ্যিক

জলাভূমি

বনভূমি

কৃষি জমি ইত্যাদি

এর মাধ্যমে ভূমি পরিকল্পনায় আসবে স্বচ্ছতা।

নামজারি ও তথ্য হালনাগাদ বাধ্যতামূলক

জমি হস্তান্তরের পর নামজারি ও খাজনা হালনাগাদ করতে হবে

পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিএলও স্মার্ট কার্ড হালনাগাদ বাধ্যতামূলক

নির্ধারিত ফি দিয়ে এটি করতে হবে

বর্তমান নিয়মে কী আছে?

বর্তমানে, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির ওপর খাজনা নেই, তবে দাখিলা সংগ্রহ (১০ টাকা) বাধ্যতামূলক।অনেকে সেটিও করেন না, যা ভবিষ্যতে জমি মালিকানার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।

সরকার বলছে: ভূমি খাতে বিপ্লব

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন,

“নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে জমি নিয়ে জালিয়াতি কমবে, খাজনা আদায়ে শৃঙ্খলা আসবে, মালিকরা আরও দায়িত্বশীল হবেন।”

খাজনা বাকি থাকলে জমির মালিকানা ঝুঁকিতে

নতুন ভূমি আইন বলছে—মালিকানার জন্য শুধু কাগজ নয়, নিয়মিত খাজনাও দিতে হবে। নয়তো তিন বছর পর আপনার জমি আর আপনার থাকবে না।

স্মার্ট মালিক হতে হলে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থার সঙ্গেও তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

FAQ (এক লাইনে):

প্রশ্ন: তিন বছর খাজনা না দিলে কী হবে?

উত্তর: জমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে নিয়ে নেবে সরকার।

প্রশ্ন: স্মার্ট জমির কার্ড কী?

উত্তর: জমির মালিকানা সনদ, যেখানে ইউনিক নম্বর ও কিউআর কোড থাকবে।

প্রশ্ন: জমি শ্রেণি পরিবর্তনে কী শাস্তি আছে?

উত্তর: এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ