ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

বিনিয়োগকারীদের অর্থ কি ঝুঁকিতে? বেক্সিমকো বন্ডে বিএসইসির তদন্ত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১২:৪৩:৩৪
বিনিয়োগকারীদের অর্থ কি ঝুঁকিতে? বেক্সিমকো বন্ডে বিএসইসির তদন্ত

পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত তহবিলের সম্ভাব্য অপব্যবহারের অভিযোগে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া এবং আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে দুটি পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই কমিটিগুলোকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বিএসইসির ৯৬৫তম কমিশন সভায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তদন্তের আওতায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা:

২০২১ সালে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালে আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। গ্রিন সুকুক বন্ডের অর্থ তিস্তা ও করতোয়া সোলার প্রকল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল, অন্যদিকে শ্রীপুর টাউনশিপ বন্ডের অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত ছিল।

আরও পড়ুন:

এক কোম্পানির শেয়ার 'জেড' থেকে 'এ' ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর

এক কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর

শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন: ডিএসইর রেকর্ড ডেট প্ল্যান!

শেয়ারবাজারের সব গুরুত্বপূর্ণ খবর এখানে

এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সঠিকভাবে নির্ধারিত প্রকল্প ও খাতে বিনিয়োগ হয়েছে কিনা, তা এখন বিএসইসির তদন্তের মূল লক্ষ্য। বিনিয়োগকারীদের তহবিল যথাযথ খাতে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাই এই তদন্তের মূল উদ্দেশ্য।

গঠিত তদন্ত কমিটিসমূহ:

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, উপ-পরিচালক আসিফ ইকবাল এবং সহকারী পরিচালক মো. সাগর ইসলাম।

অন্যদিকে, আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মাদ রাকিবুর রহমান, উপ-পরিচালক শাহনেওয়াজ এবং সহকারী পরিচালক মো. হাসান।

তদন্তের পরিধি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ:

বিএসইসির আদেশ অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার ক্ষেত্রে প্রবর্তক বেক্সিমকো লিমিটেড, তার সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেড, স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি)/ বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক ট্রাস্ট, ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস-এর বন্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ও উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার নিয়ে তদন্ত করা হবে।

একইভাবে, আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের ক্ষেত্রে ইস্যুয়ার শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, ট্রাস্টি সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস-এর বন্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ও উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তদন্ত কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।

বিএসইসির নতুন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ:

তথ্য অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে, যা পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

বিএসইসির বক্তব্য:

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গণমাধ্যমকে জানান, "বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের সংগৃহীত তহবিলের সঠিক ব্যবহার যাচাই করার লক্ষ্যে বিএসইসি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগে বন্ড অনুমোদন প্রক্রিয়া যাচাই করা হলেও সংগৃহীত তহবিল সঠিক খাতে ব্যবহার করা হয়েছে কি-না তা এবার খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে কোনো অপব্যবহার পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

এই তদন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ