ঢাকা, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

নবীজির (সা.) কোরবানি কেমন ছিল, কি ধরনের পশু পছন্দ করতেন

২০২৫ মে ০২ ১৪:২৭:২৬
নবীজির (সা.) কোরবানি কেমন ছিল, কি ধরনের পশু পছন্দ করতেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নবীজির (সা.) কোরবানির সুন্নত: ভালোবাসা, ইতিহাস ও ইবাদতের অনন্য শিক্ষা

কোরবানি—এটি শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং ত্যাগ, ভালোবাসা এবং আনুগত্যের প্রতীক। এই ইবাদতের সূচনা হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী আদম (আ.)-এর সময়েই। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ইবাদত, যা মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ হয় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে।

নবীজি (সা.) কখনো কোরবানি ত্যাগ করেননি

রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ের প্রতিটি বছরেই তিনি নিজ হাতে কোরবানি করেছেন। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর কোরবানি করেছেন।” (তিরমিজি: ১৫০৭)

পরিবারের ও উম্মতের পক্ষ থেকেও কোরবানি

কোরবানির সময় তিনি কেবল নিজের জন্য নয়, বরং তাঁর পরিবার এবং পুরো উম্মতের পক্ষ থেকেও কোরবানি করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এই কোরবানি মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার ও উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’” (আবি দাউদ: ২৭৯২)

আরও পড়ুন:

কোরবানি কবুল হবে না যদি এই ১০টি ভুলের একটি হয়

২ ধরনের শরিক নিলে কোরবানি কবুল হবে না!

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, “তিনি দুটি শিংযুক্ত, মাংসল, ধুসর রঙের খাসি ক্রয় করতেন। একটি নিজ উম্মতের জন্য এবং অপরটি নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন।” (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)

কেমন পশু দিয়ে কোরবানি করতেন?

রাসুলুল্লাহ (সা.) সবসময় দৃষ্টিনন্দন, স্বাস্থ্যবান পশু কোরবানির জন্য বেছে নিতেন। তাঁর কোরবানির পশুর মধ্যে ছিল—

গরু: স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গাভি কোরবানি করেছেন (বুখারি: ২৯৪)

মেষ/ভেড়া: মাংসল ও শিংযুক্ত মেষ কোরবানি করেছেন (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)

দুম্বা: নিজ হাতে দুম্বা জবাই করেছেন (আবি দাউদ: ২৭৯২)

উট: বিদায় হজে ১০০টি উট কোরবানি করেন, যার ৬৩টি তিনি নিজ হাতে জবাই করেন (ত্বহাবি: ৬২৩৬)

ছাগল: নাতি হাসানের আকিকায় ছাগল ব্যবহার করেছেন

নিজ হাতে করতেন কোরবানি

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই পশু জবাই করতেন। ঈদগাহে গিয়ে নহর করতেন এবং ছুরি নিজে ধার করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, “তিনি বললেন, হে আয়েশা, ছুরি দাও। এরপর ছুরি ধার করে নিয়ে দুম্বাকে কাত করে শোয়ান ও বললেন—‘বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ, এই কোরবানি মুহাম্মদ ও তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’” (আবি দাউদ: ২৭৯২)

কোরবানির গোশত তিনি নিজেও খেতেন

কোরবানি কেবল জবাই করেই শেষ নয়। মহানবী (সা.) গোশত খেতেন এবং তা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “তিনি গোশতের এক-তৃতীয়াংশ নিজে খেতেন, এক-তৃতীয়াংশ প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ দান করতেন।” (আল-মুগনি: ৯/৪৪৯)

কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়—এটি একটি সুন্নত, যে সুন্নতের মাধ্যমে ভেসে আসে ত্যাগ, প্রেম আর আনুগত্যের সৌরভ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান ইবাদত যেন আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়, আর আমরা যেন তা যথাযথভাবে পালন করতে পারি।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ