ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

হজযাত্রায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন প্রকাশ

২০২৫ মে ১৩ ২০:৪৯:১০
হজযাত্রায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখো মুসলমান হজ পালনে সৌদি আরবের পবিত্র ভূমিতে গমন করেন। তাঁদের অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তবে ডায়াবেটিস থাকা মানেই হজে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ—এমন নয়। কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই দীর্ঘ ও পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে আদায় করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হজে যাওয়ার আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং কিছু অতিরিক্ত সচেতনতা একজন ডায়াবেটিস রোগীর হজযাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে।

হজে যাওয়ার আগে যে প্রস্তুতি নিতে হবে

মানসিক প্রস্তুতি: হজ একটি পরিশ্রমের ইবাদত। তাই মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

শারীরিক অনুশীলন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে হজের সময় হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্তি কম হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ: হজে যাওয়ার আগে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। ইনসুলিন বা ওষুধের ডোজ ঠিকমতো নেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করুন।

প্রয়োজনীয় টিকা: অন্তত ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) টিকা গ্রহণ করতে হবে।

ওষুধ ও গ্লুকোমিটার: কমপক্ষে ৪৫ দিনের প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিন। একটি ভালো গ্লুকোমিটার, স্ট্রিপ, ল্যানসেট ও অ্যালকোহল সোয়াব সঙ্গে রাখুন।

ইনসুলিন ব্যবহারে সতর্কতা: ইনসুলিন সংরক্ষণের জন্য ফ্লাস্ক বা ঠান্ডা ওয়ালেট ব্যবহার করুন। ইনসুলিন মূল লাগেজে না রেখে হাতের ব্যাগে রাখুন এবং হোটেলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে ইনসুলিন ব্যবস্থার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিন।

জরুরি খাবার: গ্লুকোজ ট্যাবলেট, খেজুর, চকলেট, বিস্কুট, জুস, কেক ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। কারণ খাবার পেতে দেরি হতে পারে।

অন্যান্য করণীয় ও সতর্কতা

আরামদায়ক জুতা ও মোজা ব্যবহার করুন।

অতিরিক্ত একটি চশমা ও সাদা ছাতা সঙ্গে রাখুন।

হজ ক্যাম্পে আগেই জানিয়ে দিন আপনি ডায়াবেটিস রোগী। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

হজকালীন জটিলতা ও করণীয়

১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া (সুগার বেশি বেড়ে যাওয়া):

ইনসুলিন বা ওষুধ ঠিকমতো না নিলে অথবা বেশি খেলে রক্তে সুগার বেড়ে যেতে পারে। উপসর্গ দেখা দিলে গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তে গ্লুকোজ ও কিটোন পরীক্ষা করুন। সুগার নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

২. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (সুগার কমে যাওয়া):

পরিশ্রম বা খাবারের অনিয়মে সুগার কমে যেতে পারে। উপসর্গ দেখা দিলে গ্লুকোজ, খেজুর বা মিষ্টি বিস্কুট খেয়ে ১৫ মিনিট পর সুগার টেস্ট করুন। প্রয়োজনে ইনসুলিনের ডোজ ২৫% কমাতে হতে পারে।

৩. পানিশূন্যতা:

গরম ও ঘামের কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন। জমজম পানি পান করা উত্তম। অ্যাজমা রোগীরা ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলুন।

৪. পায়ের ক্ষত ও প্রদাহ:

আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন, অজুর পর পা শুকনো রাখুন। পায়ে ফোসকা বা ক্ষত হলে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হতে পারে। প্রতিদিন পা পরীক্ষা করুন ও ময়েশ্চারাইজার লাগান।

৫. হিটস্ট্রোক:

রোদ এড়িয়ে চলুন, সাদা ছাতা ব্যবহার করুন। শরীর ঠান্ডা রাখতে ইহরামের কাপড় ভিজিয়ে শরীরে রাখুন। অসুস্থবোধ করলে কাছের মেডিকেল সেন্টারে যান।

৬. সংক্রমণ (ইনফেকশন):

মাস্ক ব্যবহার করুন। হাত ধোয়া ও পরিষ্কার রাখা জরুরি। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করুন। ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খান।

সঠিক পরিকল্পনা, ওষুধ গ্রহণ, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও হজ পালন করা একেবারে নিরাপদ ও সম্ভব। হজযাত্রার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রস্তুত থাকুন শারীরিক ও মানসিকভাবে। আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাদের হজ কবুল করুন।

মোঃ রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ