ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

দাবির টাকা দিচ্ছে না ৩২ জীবনবিমা কোম্পানি, বিপাকে গ্রাহক

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৩ ২২:৪৭:১৩
দাবির টাকা দিচ্ছে না ৩২ জীবনবিমা কোম্পানি, বিপাকে গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সময় ছিল, ‘জীবনবিমা’ মানে ছিল ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, পরিবারকে নিশ্চিত সহায়তা। এখন? এখন এটি অনেকের কাছে নিছক একপ্রকার দুর্ভাগ্যের নাম। কারণ, নিয়মিত কিস্তি দিয়ে জীবনবিমা করেও বছরের পর বছর ধরে নিজের পাওনা টাকা তুলতে না পেরে আজ হাহাকার করছেন লাখো গ্রাহক।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এক ভয়াবহ চিত্র উন্মোচন করেছে। দেশের ৩২টি জীবনবিমা কোম্পানির কাছে গ্রাহকদের দাবি করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকারও বেশি। অথচ আইন বলছে, মেয়াদ শেষে কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই সেই অর্থ পরিশোধ করার কথা।

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, টাকা আসছে না

কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কেউ তিন বছর, কেউ পাঁচ, কেউবা এক যুগ ধরেও ঘুরছেন বিমা অফিসে—কিন্তু আশার আলো দূর অস্ত। আইডিআরএ জানাচ্ছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ভোগের ভাঁড়ার।

পাঁচ প্রতিষ্ঠানের হাতে আটকে ৮০% টাকা

সবচেয়ে ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স একাই আটকে রেখেছে ৫৯৯ কোটি টাকা। এর ৯৮ শতাংশ দাবিই আজও ঝুলে আছে।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ—যার নাম এখন অনিয়মের প্রতীক, তারা আটকে রেখেছে বিশাল অঙ্কের অর্থ—২,৯৪৬ কোটি টাকা!

পাশাপাশি পদ্মা ইসলামী লাইফ (২৬১ কোটি), প্রগ্রেসিভ লাইফ (২০১ কোটি) ও বায়রা লাইফ (৮৩ কোটি)-এর অবস্থাও অবাক করার মতো।

এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কারণেই যেন পুরো জীবনবিমা খাত আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

আস্থাহীনতার ছায়া

এক দশক আগেও জীবনবিমা খাত দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) ১ শতাংশ অবদান রাখত। আজ সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ০.৪৫ শতাংশে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে, আর তার পেছনে মূল দায় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব।

আইডিআরএ’র হুঁশিয়ারি, ব্যতিক্রমও রয়েছে

নিয়ন্ত্রক সংস্থা অবশ্য চুপ করে বসে নেই। তারা বলছে, অনিয়মকারী কোম্পানিগুলোকে সম্পদ বিক্রি করে হলেও দাবির টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

সব প্রতিষ্ঠান যে খারাপ, তা নয়। পপুলার লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী, চার্টার্ড, সোনালী, মার্কেন্টাইল, সন্ধানী, মেঘনা ও রূপালী লাইফ—এই আটটি প্রতিষ্ঠান ৯৯ শতাংশের বেশি দাবি পরিশোধ করে ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

সমাধান কোথায়?

সমস্যার শেষ কোথায়? একটাই উত্তর—জবাবদিহিতা। জীবনবিমা খাতকে রক্ষা করতে হলে এখনই চাই দৃঢ় পদক্ষেপ। অনিয়মকারীদের শাস্তি, নিয়মিত তদারকি এবং দাবি নিষ্পত্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা গেলে মানুষ বিমার দিকে আর ফিরে তাকাবে না। তখন হয়তো বিমা নামটি শুধু একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে—একটি বিশ্বাসভঙ্গের গল্প।

FAQ বিভাগ (Google FAQ Schema অনুযায়ী)

Q1: কোন কোন কোম্পানি সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে রেখেছে?

উত্তর: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, সানফ্লাওয়ার, পদ্মা ইসলামী, প্রগ্রেসিভ ও বায়রা লাইফ মিলিয়ে প্রায় ৮০% দাবি ঝুলে আছে।

Q2: বিমা দাবি পাওয়ার নিয়ম কী?

উত্তর: মেয়াদ শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করার কথা।

Q3: আইডিআরএ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

উত্তর: অনিয়মকারী কোম্পানিগুলোকে সম্পদ বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে।

Q4: সব কোম্পানিই কি অনিয়ম করছে?

উত্তর: না, পপুলার লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী, সোনালী লাইফসহ কয়েকটি কোম্পানি ৯৯% এর বেশি দাবি পরিশোধ করেছে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ