ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ঢাকায় গভীর রাতে ভূমিকম্প! বিশেষজ্ঞরা দিলেন বড় সতর্কতা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৯ ০১:০৫:৪১
ঢাকায় গভীর রাতে ভূমিকম্প! বিশেষজ্ঞরা দিলেন বড় সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৪০ মিনিট। গভীর রাতে যখন রাজধানী ঢাকা ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন হঠাৎই অনুভূত হয় এক মৃদু কম্পন। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.২। অনেকে হয়তো টেরই পাননি, কেউ কেউ জানালার কাঁচ কেঁপে ওঠা কিংবা দেওয়ালে ঝুলন্ত কিছু নড়াচড়ায় টের পেয়েছেন ভূকম্পন। তবে এই ছোট্ট কাঁপনই বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুণ।

ভূমিকম্পের সময় কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও বিপদের বার্তা দিয়ে গেল এ কাঁপন। কারণ, ভূমিকম্প বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে পারে একটি ফোর শক—অর্থাৎ বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। আর এটাই এখন সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কারণ।

কেন বাড়ছে আতঙ্ক?

বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। বিশেষ করে ঢাকা শহর চারদিকে ঘিরে আছে একাধিক ভূমিকম্প উৎসস্থল, যেমন ডাউকি ফল্ট, সীতাকুন্ড-টেকনাফ ফল্ট ও মেনামতি ফল্ট। এই ফল্ট লাইনে চাপে জমে থাকা শক্তি যে কোনো সময় ভয়াবহ মাত্রায় নির্গত হয়ে যেতে পারে।

বুয়েটের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক মাসে দেশের ভেতরে ও আশপাশে ভূমিকম্পের হার বেড়েছে। অনেকগুলো কম মাত্রার ভূমিকম্প মূলত বড় একটি কাঁপনের পূর্বাভাস হতে পারে। গড় হিসেবে ১৫০ বছর পর পর ৭ মাত্রার বড় ভূমিকম্প ঘটে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৩০ সালে। সেই হিসেবে এখন সময় হয়ে এসেছে আরও একটি বড় ভূমিকম্পের।

ঢাকার জন্য কী ঝুঁকি?

ঢাকা এক অব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা শহর। এখানে প্রায় ৭২ হাজার ভবন রয়েছে, যার অনেকগুলোর নির্মাণ হয়েছে কোনোরকম সঠিক নীতিমালা বা স্ট্রাকচারাল কোড না মেনে। শহরের নিচে জমে থাকা শক্তি যদি ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে মুক্তি পায়, তবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে লাখো মানুষের বসতি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ভবনগুলোর অবস্থান এত ঘনবসতিপূর্ণ যে একটি ভবন ধসে পড়লে তার আশপাশের অন্তত ১০টি ভবন প্রভাবিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আগুন লাগলে অথবা কোনো রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে উদ্ধার কার্যক্রম হয়ে পড়বে প্রায় অসম্ভব।

ভয়াবহ একটি রাতের বার্তা

গত রাতের ভূকম্পন যদিও কোনো তেমন ক্ষতি করেনি, তবে এর বার্তা গভীর। ঘুমন্ত নগরীকে মনে করিয়ে দিল—এই শহর প্রস্তুত নয়। না উদ্ধার অভিযানের জন্য, না নাগরিক সচেতনতার জন্য, না ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামোর জন্য।

তুরস্ক, জাপান, সিরিয়ার মতো দেশে বড় ভূমিকম্পে হাজার হাজার প্রাণ হারানোর উদাহরণ আমাদের সামনে। অথচ তাদের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকা এখনও সেখানে পিছিয়ে, বরং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

কী করা উচিত?

১. স্ট্রাকচারাল অডিট: ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা।

২. জনসচেতনতা: নাগরিকদের ভূমিকম্পকালীন করণীয় শেখানো।

৩. উদ্ধার ব্যবস্থা: খোলা জায়গা সংরক্ষণ ও জরুরি উদ্ধার তৎপরতার মহড়া চালু করা।

৪. নগর পরিকল্পনা: নতুন ভবন নির্মাণে কোড মানা বাধ্যতামূলক করা এবং পুরনো ভবনের পুনর্নির্মাণে প্রণোদনা।

মাটির নিচে শক্তি জমছে—এই সত্য অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এই শক্তি ঠিক কখন নির্গত হবে, তা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যে শহরে কয়েক লাখ মানুষ একটা কম্পনে হারিয়ে যেতে পারে, সেই শহরের ঘুম ভাঙাতে এই ভূকম্পনই যথেষ্ট হওয়া উচিত।

সতর্ক থাকা মানেই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা। ঢাকার জন্য আগামী বড় ভূমিকম্প শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র—প্রস্তুত না থাকলে তার পরিণতি হতে পারে অকল্পনীয়।

FAQs (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: ঢাকায় শেষ ভূমিকম্প কবে হয়েছিল?

উত্তর: ২০২৫ সালের ২৮ মে, রাত আড়াইটায় ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় ঢাকায়।

প্রশ্ন ২: ঢাকায় বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা কেন বাড়ছে?

উত্তর: ভূ-গবেষকদের মতে, ঢাকার চারপাশে থাকা ফল্ট লাইনে চাপ বাড়ছে এবং এটি বড় কাঁপনের পূর্বাভাস হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: ঢাকার ভবনগুলো কি ভূমিকম্প সহনীয়?

উত্তর: অনেক ভবন এখনও বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রায় ৭২ হাজার ভবন উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রশ্ন ৪: আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি?

উত্তর: নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া, জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত রাখা, নিরাপদ ভবনে বসবাস ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ