ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

স্বাস্থ্যকর ঘুমের ৮টি টিপস, যেগুলো বিজ্ঞানও সমর্থন করে

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২৭ ০৯:৪৬:৩১
স্বাস্থ্যকর ঘুমের ৮টি টিপস, যেগুলো বিজ্ঞানও সমর্থন করে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, এটি আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ আমাদের অনেকেরই ঘুম নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়—কখনো ঘুম আসে না, কখনো বারবার ঘুম ভেঙে যায়।

ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষদের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু সহজ ও কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন ঘুম-বিশেষজ্ঞরা। এসব নিয়ম মেনে চললে স্বাভাবিকভাবে গভীর ও স্বাস্থ্যকর ঘুম ফিরে পাওয়া সম্ভব। নিচে এমন ৮টি টিপস তুলে ধরা হলো, যেগুলো আধুনিক গবেষণাও সমর্থন করেছে।

১. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা

ঘুমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে জেগে ওঠা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (সার্কাডিয়ান রিদম) স্থির রাখতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের গভীরতা ও মান উন্নত করে।

বিজ্ঞান কী বলছে:

একাধিক ঘুম গবেষণায় দেখা গেছে, রুটিন মেনে চললে ইনসোমনিয়ার ঝুঁকি কমে এবং মস্তিষ্ক আরও কার্যকরভাবে বিশ্রাম নেয়।

২. ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমানো

মোবাইল, ল্যাপটপ বা টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে, যা ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমানোর অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট আগে এসব ডিভাইস এড়িয়ে চলা উচিত।

বিজ্ঞান কী বলছে:

জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, স্ক্রিন টাইম কমানো ঘুমের গুণমান উন্নত করে।

৩. ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা

ঘুমানোর ঘরটি যেন অন্ধকার, শান্ত এবং আরামদায়ক হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। অতিরিক্ত আলো, শব্দ কিংবা অস্বস্তিকর তাপমাত্রা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

বিজ্ঞান কী বলছে:

ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, ১৮–২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং অন্ধকার ঘর গভীর ঘুমের জন্য উপযুক্ত।

৪. ক্যাফেইন ও নিকোটিন পরিহার করা

চা, কফি, চকোলেট কিংবা সিগারেটের মতো দ্রব্যে থাকা ক্যাফেইন ও নিকোটিন ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এগুলো স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।

বিজ্ঞান কী বলছে:

ক্লিনিকাল নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন গ্রহণ ইনসোমনিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ করে।

৫. শরীরচর্চা করুন, তবে সঠিক সময়ে

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম কিংবা সাঁতার ঘুমের মান উন্নত করে। তবে ঘুমানোর এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো।

বিজ্ঞান কী বলছে:

একটি আমেরিকান স্টাডিতে দেখা গেছে, ব্যায়াম করা ব্যক্তিরা ঘুমাতে ৫০% কম সময় নেয় এবং তাদের ঘুমের গুণমান আরও ভালো হয়।

৬. ঘুমানোর আগে হালকা কিছু পড়ুন বা ধ্যান করুন

বেশি দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ ঘুমকে ব্যাহত করে। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা বই পড়া বা মেডিটেশন করলে মন শান্ত হয় এবং ঘুম সহজ হয়।

বিজ্ঞান কী বলছে:

মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন অন স্লিপ কোয়ালিটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধ্যান ঘুমের সময় ও গভীরতা বাড়ায়।

৭. ভারী খাবার ও চিনি এড়িয়ে চলুন

রাতের খাবার যেন হালকা হয় এবং ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করে ফেলুন। বেশি মসলাযুক্ত বা চিনি-সমৃদ্ধ খাবার ঘুমে বিঘ্ন ঘটায়।

বিজ্ঞান কী বলছে:

একাধিক পুষ্টিবিষয়ক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, রক্তে ইনসুলিনের তারতম্য ঘুমচক্রে প্রভাব ফেলে।

৮. ঘুম না এলে জোর করে বিছানায় শুয়ে না থাকা

ঘুম না এলে জোর করে শুয়ে থাকলে মস্তিষ্ক ঘুমের সময়েও সক্রিয় হয়ে পড়ে। এর বদলে উঠে হালকা কাজ করুন—যেমন বই পড়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন।

বিজ্ঞান কী বলছে:

স্লিপ রিস্ট্রিকশন থেরাপি অনুসারে, বিছানার সঙ্গে “ঘুম না হওয়ার মানসিকতা” গড়ে না তোলাই ইনসোমনিয়া নিরসনে সহায়ক।

স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করতে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, যা কঠিন নয়—শুধু অভ্যাসের বিষয়। এই ৮টি বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম মেনে চললে ঘুমের মান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে, যা শরীর ও মনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে আশীর্বাদস্বরূপ। আর যদি এগুলো মানার পরও ঘুমের সমস্যা থেকে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: প্রতিদিন কত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত?

উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কদের গড়ে প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

প্রশ্ন: স্ক্রিন ব্যবহার করলে ঘুমে সমস্যা হয় কেন?

উত্তর: স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণে বাধা দেয়, যা ঘুম আসা কমিয়ে দেয়।

প্রশ্ন: ঘুম ভালো করতে কোন খাবার উপকারী?

উত্তর: কলা, বাদাম, ওটস ও হালকা গরম দুধ ঘুমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

প্রশ্ন: ঘুমের সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে কবে যাওয়া উচিত?

উত্তর: যদি সপ্তাহে ৩ বার বা তার বেশি ঘুমের সমস্যা হয় এবং তা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ