ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

সকালের খালি পেটে ভেজানো কিশমিশ: হাজারো রোগের অব্যর্থ প্রতিরোধক

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ১১:৪২:৪৯
সকালের খালি পেটে ভেজানো কিশমিশ: হাজারো রোগের অব্যর্থ প্রতিরোধক

আকারে ক্ষুদ্র, কিন্তু গুণে মহৎ: সকালের খালি পেটে ভেজানো কিশমিশ—হাজারো রোগের অব্যর্থ প্রতিরোধক

আঙুরকে শুকিয়ে তৈরি করা ছোট্ট কিশমিশকে সাধারণত আমরা মিষ্টি খাবারের অনুষঙ্গ হিসেবেই জানি। তবে এই শুকনো ফলটির মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন শক্তিশালী স্বাস্থ্যগুণ, যা আপনার বহুদিনের রোগ দূর করে দিতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোরালোভাবে এই দাবি করেছেন যে, কিশমিশের ঔষধি মূল্য এতটাই বেশি যে এর সঠিক ব্যবহার শুরু করলে বহু মানুষ হয়তো আর ওষুধের দিকে ঝুঁকবেন না।

কিশমিশের পুষ্টির ভাণ্ডার

প্রকৃতপক্ষে, কিশমিশ হলো প্রাকৃতিক শর্করা, খনিজ এবং ভিটামিনের এক শক্তিশালী মিশ্রণ। এর প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে দ্রুত শক্তি সরবরাহকারী গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ। এছাড়া এটি আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং বোরনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। একই সাথে, এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার বিদ্যমান।

দৈনন্দিন স্বাস্থ্যে কিশমিশের জাদুকরী প্রভাব

সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভেজানো জল ও ফল খাওয়া শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত এই অভ্যাসে শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনগুলি লক্ষণীয় হয়ে ওঠে:

প্রাকৃতিক শক্তি বর্ধক: কিশমিশ একটি প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে। সকালে এটি গ্রহণ করলে সারা দিন শরীরে উদ্যম ও কর্মক্ষমতা বজায় থাকে।

রক্ত পরিশোধন ও সঞ্চালন: এটি রক্ত থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতেও সহায়ক।

হজম প্রণালীর উন্নতি: এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম দূর করে। সামগ্রিকভাবে হজম ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

ত্বকের তারুণ্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি ত্বকের বার্ধক্য ঠেকিয়ে দেয় এবং ত্বককে আরও উজ্জ্বল ও দাগহীন করে তোলে।

মানসিক সতেজতা: কিশমিশের প্রাকৃতিক শর্করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, মনোযোগ বা একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মানসিক সতেজতা ফিরিয়ে আনে।

যেসব রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর

কিশমিশ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা রাখে:

রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া): কিশমিশে থাকা আয়রন রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে এবং হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক স্থিতিতে রেখে এটি হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না, ফলে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

হাড়ের সুরক্ষা: কিশমিশে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও বোরন হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে ও অস্টিওপোরোসিস (হাড় ক্ষয়জনিত রোগ) ঠেকানোর জন্য জরুরি।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে ক্যান্সার প্রতিরোধেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

কিডনি ও লিভারের স্বাস্থ্য: ভেজানো কিশমিশ লিভারকে পরিষ্কার করে এবং কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

কিশমিশ সেবনের সঠিক বিধি ও পরিমাণ

কিশমিশের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে এটি রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ভেজানো কিশমিশের জল পান করাও সমান সুফল দেয়। যদিও শুকনো কিশমিশ খাওয়া যায়, তবে ভিজিয়ে খেলে তা হজম সহজ হয় এবং বেশি উপকার মেলে।

সাধারণত, একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২৫টি কিশমিশ খাওয়া নিরাপদ বলে বিবেচিত। এর বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়।

বিশেষ সতর্কতা

যে কোনো খাদ্যের মতোই কিশমিশও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। ভিডিওতে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:

ডায়াবেটিসের রোগীরা অতিরিক্ত কিশমিশ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অতিরিক্ত পরিমাণে কিশমিশ খেলে ওজন বেড়ে যাওয়া, পেট ফাঁপা বা ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সংরক্ষণের জন্য অনেক সময় কিশমিশে সালফার-জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করা হতে পারে। তাই খাওয়ার আগে এটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া জরুরি।

কিশমিশকে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে এটি সুস্থ জীবনযাপনের একটি গোপন রহস্য হতে পারে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ