ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

খতিয়ানে নাম নেই? সহজ আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরে পান আপনার জমি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১৪:৩০:০১
খতিয়ানে নাম নেই? সহজ আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরে পান আপনার জমি

খতিয়ানে নাম নেই? এই আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরে পান আপনার প্রাপ্য জমি

বাংলাদেশে জমি-সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব যেন নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া জমির খতিয়ান বা রেকর্ডে নাম না থাকার কারণে প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা প্রায়ই বঞ্চিত হন। অথচ দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে খতিয়ানে নাম না থাকলেও ওয়ারিশরা তাদের ন্যায্য সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

মৃত্যুর পরেই উত্তরাধিকার কার্যকর হয়

বাংলাদেশের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, কেউ জীবিত অবস্থায় উত্তরাধিকার সৃষ্টির অধিকার রাখেন না। একজনের মৃত্যুর পরই তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আইনগতভাবে ভাগ হয়।

তবে মৃত ব্যক্তির নামে যদি মূল খতিয়ান—যেমন সিএস খতিয়ান—এ কোনো সম্পত্তি নিবন্ধিত না থাকে, তবে তিনি আইনত সেই জমির মালিক নন। ফলে তার উত্তরাধিকারীরাও সেই জমির উপর মালিকানা দাবি করতে পারবেন না।

খতিয়ানের গুরুত্ব: কার নামে রেকর্ড, তারই মালিকানা

উদাহরণস্বরূপ, যদি রহিম নামের কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় একটি জমি চাষ করতেন, কিন্তু সিএস খতিয়ানে তার নাম না থেকে বড় ছেলের নাম থাকত, তাহলে মৃত্যুর পর সেই বড় ছেলেই মূল মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তার উত্তরাধিকারীরাই পরবর্তীতে জমির মালিকানা পাবেন।

তবে এসএ, আরএস, বিএস বা সিটি জরিপে যদি কোনো উত্তরাধিকারীর নাম বাদ পড়ে যায়, তাহলে তিনি তার অংশ থেকে বঞ্চিত হবেন না। কারণ আইনে মূল মালিকানা নির্ধারিত হয় মূল খতিয়ানভুক্ত নাম অনুযায়ী।

এক খতিয়ানে নাম মানেই একক মালিকানা নয়

ধরা যাক, সেলিম সাহেবের নামে সিএস বা এসএ খতিয়ানে জমি রয়েছে। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর পর তার স্ত্রী, সন্তান ও অন্যান্য বৈধ ওয়ারিশরা সমানভাবে সম্পত্তির অংশীদার হবেন।

কিন্তু যদি বিএস বা আরএস খতিয়ানে শুধুমাত্র একজন সন্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, তা বলে সে একক মালিক হয়ে যায় না। এটি অনেকের সাধারণ ভুল ধারণা।

নাম বাদ পড়লে প্রথম পদক্ষেপ

যদি কোনো ওয়ারিশের নাম রেকর্ডে না থাকে, তবে প্রথমেই ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে এটি নেওয়া যায়—যে এলাকায় সম্পত্তিটি অবস্থিত, সেই অনুযায়ী।

আদালতের মাধ্যমে মালিকানা প্রতিষ্ঠা

ওয়ারিশ সনদ হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট খতিয়ান, দলিল ও অন্যান্য প্রমাণপত্রসহ বাটোয়ারা মামলা বা বণ্টন মামলা দায়ের করা যায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নামজারি সম্পন্ন হলে যৌথ মালিকানা আইনত প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে নামজারির পরও যদি কেউ দখল বুঝিয়ে না দেয়, তাহলে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা সম্ভব। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তায় দখল পুনরুদ্ধার করা যায়।

আইনের দৃষ্টিতে স্পষ্ট অবস্থান

আইন বলছে—যদি মৃত ব্যক্তির নামে মূল খতিয়ান, যেমন সিএস খতিয়ান, না থাকে, তবে তিনি মূল মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন না এবং তার উত্তরাধিকারীরাও সেই জমির দাবি করতে পারবেন না। তবে পরবর্তী জরিপে নাম না থাকলেও মূল মালিকের ওয়ারিশরা তাদের প্রাপ্য অংশ ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখেন।

বাংলাদেশে অনেক মানুষ এখনো জমির রেকর্ডে নাম না থাকা বা ভুল রেকর্ডের কারণে বঞ্চিত। অথচ আইন অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নিলে কারো নামে খতিয়ান না থাকলেও বৈধ প্রমাণ ও আদালতের রায়ের মাধ্যমে সহজেই প্রাপ্য সম্পত্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: খতিয়ানে নাম না থাকলে কি জমি ফেরত পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, মূল মালিকের বৈধ ওয়ারিশ হলে আইনি প্রমাণ ও বাটোয়ারা মামলার মাধ্যমে জমি ফেরত পাওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন ২: ওয়ারিশ সনদ কাদের কাছ থেকে নিতে হয়?

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ নেওয়া যায়।

প্রশ্ন ৩: নামজারির পরও জমি না পেলে কী করতে হবে?

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে প্রশাসনিক সহায়তায় দখল পুনরুদ্ধার করা যায়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ