ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

কিডনি বিকল হওয়ার আগে শরীর দেয় ৮ ইঙ্গিত, এখনই সতর্ক হোন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১১:২০:২৮
কিডনি বিকল হওয়ার আগে শরীর দেয় ৮ ইঙ্গিত, এখনই সতর্ক হোন

আমাদের দেহের ভেতরের যেকোনো অসুস্থতা সহজে চোখে পড়ে না, বিশেষত কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সমস্যা। প্রায়শই এই অঙ্গের দুর্বলতা বা রোগ ধরা পড়ে অনেক বিলম্বে। কিডনির রোগকে তাই 'নীরব ঘাতক' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কারণ এটি তার সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা হারানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বা বড় ধরনের সতর্কবার্তা না দিয়েই কাজ চালিয়ে যায়। গোপনে এই ব্যাধি আমাদের দেহে বিস্তার লাভ করে এবং স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।

কিডনির অপরিহার্য কাজ ও গুরুত্ব

দেহের অভ্যন্তরে কিডনি একটি ফিল্টার (ছাঁকনি) হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তকে পরিশোধন করে, ক্ষতিকারক টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেয়, লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রক্ত তৈরিতেও সহায়তা করে। কিন্তু কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখন আমাদের শরীর কিছু জরুরি সংকেত দেওয়া শুরু করে। চলুন, সেই ৮টি গুরুত্বপূর্ণ 'ইঙ্গিত' সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যা আপনার কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারে:

কিডনি বিকলের আগে শরীর যে ৮টি ইঙ্গিত দেয়

১. সর্বদা দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা

কিডনি যদি রক্তকে ঠিকমতো পরিশুদ্ধ করতে না পারে, তবে শরীরে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা হতে থাকে। এর ফলে আপনি সব সময় ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করতে পারেন, মনোযোগের অভাব হয় এবং মাথা ভার লাগে। অনেক সময় রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াও এর একটি বড় কারণ।

২. ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটা

টক্সিন উপাদানগুলো কিডনি দ্বারা ফিল্টার না হয়ে রক্তে থেকে গেলে তা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। স্থূলতা এবং নিদ্রাহীনতা, উভয়ই দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

৩. ত্বক অত্যধিক শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া

কিডনি আমাদের দেহে খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হাড়কে মজবুত রাখে। এই ভারসাম্যে কোনো গোলযোগ দেখা দিলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে ওঠে এবং ফাটতে শুরু করে। এটি উন্নত কিডনি রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।

৪. রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া

বিশেষত রাতের বেলায় যদি বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠতে হয়, তবে তা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিডনির ছাঁকনি (ফিল্টার) ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমনটা ঘটে। তবে ইউরিন ইনফেকশন বা প্রোস্টেট বড় হওয়ার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।

৫. প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি

একটি সুস্থ কিডনি রক্তে থাকা রক্তকণিকাকে শরীরে ধরে রাখে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই রক্তকণিকাগুলি মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এটি যেমন কিডনি রোগের লক্ষণ, তেমনই টিউমার, কিডনি পাথর বা সংক্রমণের কারণেও হতে পারে।

৬. মূত্রে বুদবুদ বা অতিরিক্ত ফেনা হওয়া

যদি প্রস্রাবে ডিমের মতো ফেনা বা বুদবুদ দেখা যায়, তবে সেটি প্রোটিন লিকের ইঙ্গিত দেয়। এর মানে কিডনির ছাঁকনি (Filter) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে।

৭. চোখের নিচে বা চারপাশে ফোলা ভাব

চোখের নিচে বা চারপাশে হঠাৎ ফোলা ভাব দেখা দিলে তার অর্থ হতে পারে—অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং কিডনি এই ক্ষতি সামলাতে পারছে না।

৮. পা ও গোড়ালিতে জল জমা বা ফুলে যাওয়া

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে সোডিয়াম জমা হয় এবং জল আটকে রাখে। এর ফলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যায়। তবে এই লক্ষণ হৃদরোগ, লিভার সমস্যা কিংবা পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণেও হতে পারে।

সতর্কতা: দ্রুত রোগ নির্ণয় অপরিহার্য

যদি এই লক্ষণগুলোর এক বা একাধিকটি আপনার বা পরিচিত কারও মধ্যে দেখা যায়, তবে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সাধারণ কয়েকটি পরীক্ষা যেমন—ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC) এবং আলট্রাসনোগ্রাম—এইগুলো করলেই রোগের মাত্রা বোঝা যায়।

আরও পড়ুন

সকালে খালি পেটে খাবেন যেসব খাবার, জানুন দারুণ উপকারিতা

ত্বক দেখালেই বোঝা যায় লিভারের অসুখ, এড়িয়ে যাবেন না ৪ লক্ষণ

অজান্তেই লিভার নষ্ট করছে এই সিরাপ, জানুন ভয়ংকর সত্য

কিডনি রোগ শুরুতে নিজেকে লুকিয়ে রাখলেও, একবার মারাত্মক আকার ধারণ করলে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো এই ইশারাগুলো চিনে নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোই হলো সবচেয়ে বড় সাবধানতা। শরীরের এই সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিন, নিয়মিত পরীক্ষা করান, আর সুস্থ থাকুন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ