ঢাকা, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ: পিচ নিয়ে বিতর্ক

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২১ আগস্ট ১০ ২৩:০০:৪৮
বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ: পিচ নিয়ে বিতর্ক

কিন্তু আসলেই কি তেমনটা করা সম্ভব? ইচ্ছে করে এমন পিচ বানানো সম্ভব, যেখানে পিচে বল স্লথ গতিতে থেমে থেমে আসবে। ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ইচ্ছেমত ফ্রি-স্ট্রোক প্লে করা সম্ভব হবে না। চার-ছক্কা হাঁকানো কঠিন হবে। ১৩০ ও তার আশপাশে পৌঁছাতে পারলেই ব্যাস, জয় নিশ্চিত!

তা নিয়েও নানা মুনির নানা মত। একপক্ষের মত, বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছেতেই অমন স্লো ও লো ট্র্যাক করা হয়েছে। আবার অনেকে মনে করছেন, বৃষ্টির কারণে উইকেটের পরিচর্যার সময় মিলেছে কম। আর বৃষ্টির দিনে এমনিতেই মাটির নিচের স্তরে পানি জমে থাকে। ওপরের স্তরও শুকনো মৌসুমের তুলনায় ভেজা থাকে। তাই উইকেটের এ হতশ্রী অবস্থা।

আসলে কী ঘটেছে? দেশের ক্রিকেটের নামী প্রশিক্ষক নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন, বলে কয়ে কিছুতেই এমন উইকেট তৈরি করা সম্ভব নয়।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের কোচিং অভিজ্ঞতা তার। বিকেএসপির উইকেট তৈরির কাজ নিজ চোখে দেখার ও তদারকের সুযোগ হয়েছে বহুবার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একান্ত আলাপে সে অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেছেন ফাহিম। তার ব্যাখ্যা, ‘অস্ট্রেলিয়ানদের কথা বাদ। তারা তো জন্মগতভাবেই ফাস্ট ও বাউন্সি ট্র্যাকে খেলে অভ্যস্ত।

আমি নিশ্চিত আমরাও হয়তো এমন উইকেট চাইনি। যে উইকেটে আমরাই ঠিক মত ব্যাটিং করতে পারিনি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ইচ্ছেমত শটস খেলতে কষ্ট হয়েছে। রান করতে গিয়ে কি ঝক্কিটাই না পোহাতে হয়েছে! আসলে এমন উইকেট বানানো মোটেই সহজ ব্যাপার না।’

উইকেট প্রস্তুত প্রসঙ্গে ফাহিমের কথা, ‘বলে কয়ে কেউ এমন উইকেট তৈরি করতে পারবেই না। আমার বিশ্বাস হয় না। আমার মনে হয় আবহাওয়ার কারণেই উইকেটের ওই চেহারা হয়েছে।’

সেটা কিভাবে? বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া কিভাবে উইকেটকে স্লথ ও নিচু বাউন্সের করেছে? তা জানতে চাইলে ফাহিম বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরের এ সময়টায় প্রায়দিন বৃষ্টি হয়। যে কারণে ২৪ ঘন্টার বড় সময় পিচ ঢেকে রাখতে হয়। হয়েছেও। অথচ পিচকে খোলা রাখতে হয়। পিচ যাতে রোদ পায়, সে ব্যবস্থা করে দিতে হয়। পিচে রোদ লাগাটা খুব জরুরি।’

ফাহিম যোগ করেন, ‘পিচে পানি ছিটানো হবে। সেটা রোদে শুকাবে। শুকনো পিচের ওপর রোলার চালানো হবে। রোলিংয়ের পর উইকেট শক্ত হবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন আবহাওয়া খারাপ হয় মানে বৃষ্টি চলে আসে, তখন সেই প্রক্রিয়াটি দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়।

আমি হয়তো শুকানো রাখতে চাই আর ঠিক তখনই বৃষ্টি চলে আসলো। পিচ কভারে ঢাকা পড়ে যায়। দেখা গেল সারা দিন বৃষ্টি, রাতেও তাই। পিচ কভার আর খোলাই হলো না। তাতে করে ময়েশ্চার তৈরি হয়।’

বাংলাদেশে বর্ষকালে পানির স্তর নিচ থেকে ওপরে উঠে আসে। অনেক জায়গায়ই দেখা যায়, কয়েক ফুট মাটি কাটলে বা সরালেই নিচে পানি চলে আসে। ক্রমাগত বৃষ্টিতে যেহেতু মাটি ভেজা, রোদ কম। তাতে করে কি শেরে বাংলার পিচের নিচের স্তরেও পানি থাকতে পারে?

ফাহিমের উত্তর, ‘না, না। ড্রেনেজ সিস্টেম আছে। নিচের স্তরে পানি থাকলেও সমস্যা হবার কথা নয়। কারণ একটা স্তরে পাথর আছে। তাই পানি ওপরে উঠে আসার সুযোগ নেই। আসলে উইকেট শুকাতে না পারা আর ঢেকে রাখার কারণে ময়েশ্চার জমে থাকায়ই এমন হয়েছে।’

এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রবল আপত্তির মুখে হেড কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা মাঠে যেতে পারেননি। ফাইনার পয়েন্টসগুলো শেষ মুহূর্তে যা করতে হবে, সেটাও করা যায়নি।

উইকেটে কতটুকু ময়েশ্চার আছে, কি করা দরকার-প্রধান কিউরেটর ঠিকমত যেতে না পারায় সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় ফাহিমের। তার ধারণা এসব কারণেই হয়তো উইকেট অমন ধীরগতির ছিল। ইচ্ছে করে এমন বানানো হয়নি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ