ঢাকা, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশি মাত্রই অবহেলার শিকার,মনের কষ্টে যা বললেন সাকিব

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২১ আগস্ট ১১ ১৩:৫২:২৩
বাংলাদেশি মাত্রই অবহেলার শিকার,মনের কষ্টে যা বললেন সাকিব

কিন্তু দিন শেষে সেই পুরস্কারটি কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের হাতে গেলেও, অনেক বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস ম্যাগাজিনের মতে, সাকিবই ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।

তবে ব্যাপারটি কিন্তু এতোটাও সহজ ছিল না। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে নিজেকে এমনভাবে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন যেন মনে মনেই আরেকটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছিলেন সাকিব। আর তার ফলাফলটাও ছিল দারুণ। এক সাকিবকে সামলাতেই ঘাম ছুটে গিয়েছিল বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের। কিন্তু এই সাফল্যগাঁথার পেছনেও রয়েছে আরও একটি গল্প, যেটা সাকিব তো বটেই প্রত্যেক বাংলাদেশি ক্রিকেটারের জীবনে ঘটে গেলেও মিডিয়ার আলোক ঝলমলে দুনিয়ায় সেটির স্মরণ করা হয় না।

মার্চ, ২০১৯। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারতে আইপিএলের মঞ্চে হাজির সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে দামি ঘরোয়া টুর্নামেন্টটিতে অবশ্য সাকিবের পথচলা অনেক আগে থেকেই। ওপার বাংলার দল কোলকাতাকে দুইবার শিরোপাও জিতিয়ে এসেছেন তিনি। অথচ সেবারের আসরে ফর্মে থাকা সাকিবকে মোটে ৩টি ম্যাচ খেলালো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। অন্যদিকে তুলনামূলক দুর্বল দেশ আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি খেললেন ৮টি ম্যাচ। এমনকি পরিস্থিতি এমন চরম পর্যায়ে গিয়েছিল, সাকিব দলের সাথে নিয়মিত প্রস্তুতি নেবার সুযোগটাও পেতেন না। পরে বাধ্য হয়ে ছোটবেলার কোচ সালাউদ্দিনকে ভারতে আনিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে হয় তাকে। সেসময় এসব খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত না হলেও, বিশ্বকাপ পরবর্তি সময়ে সাকিবের দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তা এখন সবার জানা।

‘বিশ্বকাপের আগে আসলে যখন প্রথম ম্যাচটা খেললাম আইপিএলে, তারপর দুই ম্যাচে খেলিনি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমি রিয়েলাইজ করলাম, এই মৌসুমে আমার খেলার সুযোগটা খুবই কম। কারণ ওয়ার্নার, জনি বেয়ারেস্টো আর রশিদ খান – তিনটা কনফার্ম প্লেয়ার ছিল, আর তারা খুবই ভালো করছিল। এখন বাকি যে ৭ জন খেলোয়াড় ছিলাম, তাদের মধ্যেও দুইজন খুবই ভালো খেলছিল। খুব সম্ভব মোহাম্মদ নবি বা অন্য একজন ছিল, সেও ভালো খেলছিল। তো আমি দেখলাম যে, আমার আসলে এবছর টিমে থাকার চান্স খুব কম। তো তখন আমার মনে হলো, “আসলে আমাদের ক্ষেত্রে কেন এমন হয়?” স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি, এটা কিন্তু আমার জন্য একটা মাইনাস পয়েন্ট, প্লাস পয়েন্ট না কখনোই। কারণ, ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট আমাদেরকে নিয়ে ঐভাবে চিন্তা করে না কখনোই। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমি কি করতে পারি এই জিনিসটা চেঞ্জ করার জন্য। ফার্স্ট জিনিসটা মাথায় আসলো যে, বড় পর্যায়ে গিয়ে বড় জিনিস না করা যায়, তার আগ পর্যন্ত কেউ গুণবে না – সোজা হিসাব। তখন ভাবলাম যে, গুণবে না যখন, তখন গোণানোর জন্য কিছু একটা করতে হবে। এ থেকে শুরু হলো ট্রেনিং।’

কিন্তু বিশ্বকাপের আগে-পরে কি সাকিব বাংলাদেশকে গোণায় ধরার মতো বড় কিছু করে দেখাননি? ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখার পর মাত্র ৩ বছরের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসকে টপকে অলরাউন্ডিং র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ অবস্থানে চলে যান তিনি। এরপর তিন ফর্ম্যাটে একই সময়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারে পরিণত হয়েছিলেন সাকিব, যে রেকর্ডটির মালিক একমাত্র তিনি ছাড়া এখনো পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটার হতে পারেননি। এরকম বহু রেকর্ড আছে যেখানে সাকিবকে দিয়েই রেকর্ডটির শুরু এবং সাকিবকে নিয়েই শেষ। এই যেমন, অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের কথাই ধরুন। সিরিজের শেষ ম্যাচে সাকিব, লাসিথ মালিঙ্গার পর ফর্ম্যাটের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট প্রাপ্তির ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ১০০০ রান ও বল হাতে ১০০ উইকেট নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি।

আবার প্রত্যেক অলরাউন্ডারের একটি শক্তিশালী দিক এবং একটি দুর্বল দিক থাকে। ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বেন স্টোকস যেমন ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত হলেও, বোলিংয়ের দিক থেকে কিছুটা দুর্বল। অন্যদিকে ভারতের রবীন্দ্র জদেজার দুর্বলতা ব্যাটিংকে ঘিরে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, সাকিব কোন ধরনের অলরাউন্ডার? তাহলে উত্তর দিতে হলে আপনাকে অন্তত কিছুক্ষণ ভাবতেই হবে। এছাড়া যে বোলিং দিয়ে সাকিব প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন, সেখানেও আহামরি কিছু নেই। সাকিবের বল মুরালিধরনদের মতো ঘূর্ণির সৃষ্টি করে না, আবার সেখানে সেরকম গতিও থাকে না। কিন্তু মেধাবী বোলার সাকিব প্রায় সময়ই ব্যাটসম্যানের মনের কথা ধরে ফেলতে পারেন বলেই এই ‘স্লো লেফট আর্ম’ বোলার হয়েও তিনি এতো সফল।

তবে এতকিছুর পরেও বাংলাদেশের বাইরে যদি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কথা বলা হয়, তবে সাধারণ দর্শকরা তো বটেই, অনেক নামকরা ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও বলবেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, ভারতের হাদ্রিক পান্ডিয়া কিংবা রবীন্দ্র জদেজার কথা। যদিও রেকর্ড বলছে, এদের কেউই সাকিবের ধারেকাছেও নেই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ