ঢাকা, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

শরিকে কোরবানি দেয়ার সঠিক নিয়ম কী? জানুন গোশত বণ্টনের পদ্ধতি

২০২৫ এপ্রিল ৩০ ১৩:৪২:৪৬
শরিকে কোরবানি দেয়ার সঠিক নিয়ম কী? জানুন গোশত বণ্টনের পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শরিকে কোরবানি: জানুন শর্ত ও নিয়ম

কোরবানি, ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পালন করা হয়। এটি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুত ছিলেন। এই মহান ইবাদত পালন করার মধ্যে রয়েছে ত্যাগ ও ধৈর্যের শিক্ষা। তবে, কোরবানি দেওয়ার নিয়মগুলো জানার পাশাপাশি শরিক হয়ে কোরবানি দেয়ার কিছু বিশেষ শর্ত রয়েছে, যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরিকে কোরবানি দেয়ার নিয়ম:

ইসলামী শরিয়তের মতে, কোরবানি পশুর ধরন অনুযায়ী শরিক হওয়ার নিয়ম নির্ধারিত। বিশেষত, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারবেন না—এ ধরনের পশু দিয়ে কেবল একজনই কোরবানি করতে পারবেন। তবে, যদি উট, গরু বা মহিষ কোরবানি হিসেবে নির্বাচন করা হয়, তবে সর্বোচ্চ সাতজন ব্যক্তি একসাথে শরিক হতে পারেন। সাতজনের বেশি হলে, কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না।

হজরত জাবের (রা.)-এর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, নবীজি (সা.)-এর সাথে হজ করতে গিয়ে সাতজন ব্যক্তি একসাথে একটি উট ও একটি গরুতে শরিক হয়ে কোরবানি করেছিলেন। (মুসলিম: ১৩১৮) এটি স্পষ্ট করে যে, শরিক কোরবানি করার জন্য উট, গরু বা মহিষের মধ্যে সাতজন পর্যন্ত অংশীদার হতে পারেন।

কোরবানির নিয়ত ও শরিকের শর্ত:

যদি কোনো ব্যক্তি উট বা গরু কিনে এবং সে ধনী হয়, তবে তাকে অন্যকে শরিক করতে অনুমতি রয়েছে। তবে, একক কোরবানি দেওয়াই উত্তম। যদি শরিক করা হয়, তবে শরিকের অংশের টাকা সদকা করা উচিত। কিন্তু, যদি ব্যক্তি গরিব হয় এবং তার উপর কোরবানি ওয়াজিব না হয়, তবে সে অন্য কাউকে শরিক করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে, শরিক করলে সেই অংশের টাকা সদকা করা আবশ্যক।

গোশত বণ্টন:

শরিকে কোরবানি দিলে গোশত বণ্টন করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুসারে, গোশত ওজন করে ভাগ করতে হবে, অনুমান করে ভাগ করা শুদ্ধ নয়। কোরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরিবদের এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। তবে, পুরো গোশত নিজের কাছে রাখলেও কোনো সমস্যা নেই।

কোরবানির শুভক্ষণ:

কোরবানি শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং এটি আমাদের ধৈর্য ও ত্যাগের শিক্ষাও দেয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোরবানির পশু নির্বাচন এবং শরিক কোরবানি করার বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পালন করা উচিত। সঠিক নিয়ম মেনে কোরবানি করলে, এটি শুধু একটি ইবাদতই নয়, বরং সমাজে সহানুভূতি, ত্যাগ এবং পরোপকারের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

কোরবানি হল একটি মহান ইবাদত, যা আল্লাহর কাছে আমাদের সান্নিধ্য এবং আনুগত্য প্রকাশ করে। শরিক কোরবানি করার নিয়মগুলি বুঝে, সঠিকভাবে পালন করলে কোরবানি হবে শুদ্ধ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। কোরবানি শুধু একটি প্রথা নয়, এটি একটি চিরন্তন শিক্ষা যা আমাদের ত্যাগের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখে।

এছাড়া, ইসলামের নিয়ম অনুসারে শরিক কোরবানি দিয়ে সকলেই নিজের অংশ সঠিকভাবে গ্রহণ ও বণ্টন করতে হবে, যাতে সমাজে শৃঙ্খলা এবং দানের পরিপূর্ণতা বজায় থাকে।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ