ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

নিষেধাজ্ঞায় আওয়ামী লীগ: নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও ভবিষ্যৎ প্রশ্ন

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১২ ১১:৪২:৫০
নিষেধাজ্ঞায় আওয়ামী লীগ: নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও ভবিষ্যৎ প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। দলটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংশয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সংকুচিত করেছে এবং ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে এক বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার ফলে সংকট ও অস্থিরতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কূটনীতিক প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জনগণের জন্য এক বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর মতে, "দলটি যদি জনগণের কাছে ক্ষমা না চায়, তবে তাদের পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।"

তিনি আরও জানান, "এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং এর ফলে সামাজিক সংকটও দেখা দিতে পারে। একদিকে রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে, অন্যদিকে সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে।"

বিদেশি শক্তির তৎপরতা এবং সরকারের চাপ

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, "এটি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং বিদেশি শক্তিরও এখানে হাত রয়েছে। সরকার এই সিদ্ধান্ত চাপের মুখে গ্রহণ করেছে। যদি আগে থেকেই আইন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতো, তাহলে এটি আরও গ্রহণযোগ্য হত।"

তিনি জানান, ছাত্র-জনতার দাবি অনেক বড় এবং তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন চায়। “এখন তারা শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, নতুন সংবিধান, গণপরিষদ গঠন, এমনকি সেকেন্ড রিপাবলিকের দাবি জানাতে পারে,” বলেন তিনি। এর ফলে আসন্ন নির্বাচনটি ঝুলে যাওয়ার শঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, আওয়ামী লীগের সামনে এখন কোনো পথ খোলা নেই। "রাজনীতির কোনো ক্ষেত্রে যদি গোপন হামলা বা আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলন শুরু হয়, তবে সেটি দলের জন্য আত্মঘাতী হবে। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যদি সম্পর্ক না তৈরি করা যায়, তবে দেশের রাজনীতি টিকবে না," তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের একটি ভোটব্যাংক ছিল, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। অন্যদের সঙ্গে মিশে যাবে বা রাজপথে থাকবে, তবে শেষ পর্যন্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই।"

নিষেধাজ্ঞার রাজনৈতিক প্রভাব

এই নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ রাজনৈতিক পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ যদি জনগণের কাছে ক্ষমা না চায়, তবে তাদের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হবে না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে বড় ধরনের সংকেত দিচ্ছে। এর ফলে নির্বাচন থেকে শুরু করে দলটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে যদি না রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে ওঠে।

রাজনৈতিক সমঝোতা ও ভবিষ্যৎ আশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা একযোগে বলেন, “এখন সময় এসেছে, দেশের সকল রাজনৈতিক দল যেন সমঝোতা করে একত্রে কাজ করে। রাজনৈতিক মেরুকরণ কমানো এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।” তারা আশাবাদী, যদি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়, তবে দেশ আবারও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।

অথবা, যদি রাজনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পায়, তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে, যা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে।

FAQ:

1. আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর কি নির্বাচন হবে?

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঝুলিয়ে দিতে পারে, তবে জনগণের দাবি ও সমঝোতার মাধ্যমেই নির্বাচনের পথ নির্ধারিত হবে।

2. কেন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো?

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

3. আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে কী বলা হচ্ছে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। তবে তারা নতুন প্রজন্মের সাথে সমঝোতা করে রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারবে।

4. বিদেশি শক্তির কী ভূমিকা রয়েছে?

বিদেশি শক্তির তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলছে। বিশেষত, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর বিদেশি শক্তির সক্রিয়তা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ