ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভাইরাল সান্ডা ভিডিও দেখে আপনি কী ভাবছেন? ইসলাম কী বলছে?

২০২৫ মে ১৬ ১৪:০৬:১৯
ভাইরাল সান্ডা ভিডিও দেখে আপনি কী ভাবছেন? ইসলাম কী বলছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা—মরু অঞ্চলের প্রাণী ‘সান্ডা’ ধরা ও খাওয়া নিয়ে।

ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি। দেখা যায়, তিনি মরু অঞ্চলের টিকটিকি সদৃশ প্রাণী ‘সান্ডা’ ধরছেন এবং খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরপর থেকেই ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবজুড়ে শুরু হয় আলোচনা, বিতর্ক ও নানা ধরনের মিম-মজার ঢল।

কেউ বলছেন, “সান্ডা খেলে নাকি যৌনশক্তি বাড়ে!”

আবার কেউ বলছেন, “ইসলামে তো এটা হারাম!”

আসলে ইসলাম কী বলে?

‘সান্ডা’ কী?

বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx, আর আরবি নাম দব্ব (ضبّ)—এই প্রাণীটি মূলত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলের একধরনের শক্ত লেজবিশিষ্ট টিকটিকি।

এর লেজ খাঁজযুক্ত ও মোটা, যা আত্মরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে আয়ুর্বেদিক ও বিকল্প চিকিৎসায় ‘সান্ডার তেল’ ব্যবহৃত হয় যৌনশক্তি বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে।

নবিজি (সা.) কী বলেছেন?

সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, একবার সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নবিজি (সা.)-এর সঙ্গে মায়মুনা (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত ছিলেন। তখন ভুনা সান্ডা পরিবেশন করা হয়।

নবিজি (সা.) সান্ডা খাওয়ার জন্য হাত বাড়াতে গেলে উপস্থিত নারীরা জানালেন, “এটা দব্ব বা সান্ডা।”

তখন তিনি হাত সরিয়ে নিলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) জানতে চাইলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি হারাম?”

তিনি বললেন, “না, এটা হারাম নয়। আমাদের অঞ্চলে এটা খাওয়ার অভ্যাস নেই, তাই আমি পছন্দ করি না।”

এরপর খালিদ (রা.) নবিজির (সা.) সামনেই সান্ডা খেয়ে নেন।

উৎস: সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম

হালাল না হারাম: মতভেদ কেন?

ইসলামি ফকিহদের মধ্যে সান্ডা খাওয়া নিয়ে মতভেদ আছে—

হানাফি মাজহাব:

সান্ডা খাওয়া নাজায়েজ/হারাম। কারণ এটিকে তারা ‘খাবাইস’ বা অপবিত্র ও অরুচিকর প্রাণীর মধ্যে গণ্য করেন।

তারা মনে করেন, যেসব হাদিসে সান্ডা খাওয়ার অনুমোদন এসেছে, তা ইসলামের শুরুর সময়ের, যখন সুরা আ‘রাফের আয়াতটি নাজিল হয়নি:

وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ

“তিনি তাদের জন্য অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন।” (সুরা আ‘রাফ: ১৫৭)

মালিকি, শাফেঈ ও হাম্বলি মাজহাব:

তারা সান্ডা খাওয়াকে হালাল মনে করেন।

তাদের যুক্তি: নবিজি (সা.) নিজে খাননি ঠিকই, কিন্তু নিষেধও করেননি। সাহাবিরা তার সামনে খেয়েছেন—এটা স্পষ্ট প্রমাণ যে সান্ডা হারাম নয়।

তাহলে আপনি কী ভাববেন?

সান্ডা খাওয়া নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সরল নয়, বরং এটি ফিকহি মতভেদের বিষয়।

যারা হানাফি মাযহাব অনুসরণ করেন, তারা সান্ডা থেকে বিরত থাকবেন—এটাই তাদের মতে উত্তম।

আর যাঁরা অন্য মাযহাব অনুসরণ করেন, তারা চাইলে খেতে পারেন—হাদিসের প্রমাণ আছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—কিছু খাওয়ার আগে শুধু মজার ভিডিও নয়, ইসলামের ব্যাখ্যাও জেনে নেওয়া জরুরি।

FAQ (প্রশ্নোত্তর বিভাগ)

প্রশ্ন ১: সান্ডা কী ধরনের প্রাণী?

উত্তর: সান্ডা মূলত মরু অঞ্চলের একধরনের মোটা লেজওয়ালা টিকটিকি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx এবং আরবি নাম ‘দব্ব’ (ضبّ)।

প্রশ্ন ২: নবিজি (সা.) কি সান্ডা খেয়েছেন?

উত্তর: না, তিনি নিজে খাননি, তবে সান্ডা খাওয়া হারামও বলেননি। সাহাবিরা তার সামনে খেয়েছেন।

প্রশ্ন ৩: ইসলামি দৃষ্টিতে সান্ডা খাওয়া কি হালাল?

উত্তর: মালিকি, শাফেঈ ও হাম্বলি মাজহাবে এটি হালাল; তবে হানাফি মাজহাবে অপবিত্র বা নাজায়েজ হিসেবে গণ্য।

প্রশ্ন ৪: সান্ডার তেল কি ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেক দেশে সান্ডার তেল ব্যবহৃত হয়, তবে তা ইসলামি দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কি না, তা মতভেদসাপেক্ষ।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ