ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ নয়, কলকাতা থেকে সোনা কিনলে সাশ্রয় ৪০ হাজার টাকা!

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২০ ২৩:১০:৩০
বাংলাদেশ নয়, কলকাতা থেকে সোনা কিনলে সাশ্রয় ৪০ হাজার টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনার দামে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। বিশেষ করে কলকাতার বাজারে সোনার দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেকেই চোরাচালানের ঝুঁকি নিয়ে কিংবা বৈধভাবে আমদানি করে সোনা আনতে আগ্রহী হন। আজ, ২০ মে ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে সোনার দামে যে বড় ধরনের ব্যবধান দেখা যাচ্ছে, সেটি সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।

কলকাতার বাজারে আজকের সোনার দাম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় আজ ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯,৮৫০ রুপি। একই পরিমাণ ২৪ ক্যারেট খুচরা সোনার দাম ৯৪,৫৫০ রুপি এবং ২৪ ক্যারেট বাট (বার) সোনার দাম ৯৪,০৫০ রুপি। এই দামের সঙ্গে যুক্ত হবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর)।

বর্তমান রূপান্তর হার অনুযায়ী, ১ রুপি সমান বাংলাদেশি ১ টাকা ৪২ পয়সা। সে হিসেবে, ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার ভারতীয় মূল্য দাঁড়ায়:

৮৯,৮৫০ × ১.৪২ = ১,২৭,৫৬৭ টাকা (জিএসটি ব্যতীত)।

তবে খুচরা পর্যায়ে কিছু অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হলেও, এই দামটি বাংলাদেশের বাজার দামের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

বাংলাদেশের বাজারে আজকের সোনার মূল্য তালিকা

বাংলাদেশে আজ ১০ গ্রাম (এক ভরি) সোনার দাম নিম্নরূপ:

২২ ক্যারেট সোনা: ১,৬৭,০৯৮ টাকা (গতকাল ১ হাজার ৩৬৪ টাকা বৃদ্ধি)

২১ ক্যারেট সোনা: ১,৫৯,৫০৫ টাকা (গতকাল থেকে ১,৩০৬ টাকা বৃদ্ধি)

১৮ ক্যারেট সোনা: ১,৩৬,৭১৪ টাকা (গতকাল থেকে ১,১০৮ টাকা বৃদ্ধি)

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম নিয়মিত বাড়ছে। একদিনের ব্যবধানে ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেট সোনার দামে যথাক্রমে ১,৩৬৪ টাকা ১,৩০৬ টাকা এবং ১,১০৮ টাকা বৃদ্ধি পাওয়া দেশীয় বাজারের অস্থিরতা এবং সরবরাহ ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

দুই দেশের দামের তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ক্যারেটভারত (৳)বাংলাদেশ (৳)ব্যবধান (৳)শতাংশ পার্থক্য
২২ ক্যারেট ১,২৭,৫৬৭ ১,৬৭,০৯৮ ৩৯,৫৩১ ২৩.৬৬%

উপরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারত থেকে ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনলে বাংলাদেশের বাজারের তুলনায় সাশ্রয় হয় প্রায় ৩৯ হাজার ৫৩১ টাকা। শতাংশে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ প্রায় ২৩.৬৬ শতাংশ, যা ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কিংবা বড় পরিমাণ স্বর্ণ কেনাবেচার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কেন ভারত ও বাংলাদেশের দামের পার্থক্য এত বেশি?

১. কর ও শুল্কের কাঠামো: বাংলাদেশে সোনার ওপর শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য ট্যাক্স সংযুক্ত হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। অন্যদিকে ভারতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার কারণে দাম তুলনামূলক কম।

২. আমদানির সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশে সোনার আমদানি নির্দিষ্ট লাইসেন্সধারীদের মাধ্যমে হয়। ফলে প্রতিযোগিতা কম, দাম নিয়ন্ত্রণের সুযোগও সীমিত।

৩. বৈদেশিক মুদ্রার সংকট: ডলারের সংকট, আমদানি খরচ ও রিজার্ভ পরিস্থিতিও সোনার দামে প্রভাব ফেলে।

৪. সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: ভারতীয় বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় থাকায় দাম স্থিতিশীল থাকে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবসময় সম্ভব হয় না।

বৈধতা ও সতর্কতা

যদিও ভারত থেকে সোনা কিনলে অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয়, তবে এটি সবসময় আইনি প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে সোনা নিয়ে আসা হলে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলেই তা শুল্ক ও কাস্টমস আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশের কাস্টমস আইন অনুযায়ী, প্রবাসী কিংবা ভ্রমণকারী নির্ধারিত পরিমাণের বেশি সোনা আনলে তা ঘোষণাপত্রসহ শুল্ক পরিশোধ করে আনতে হয়।

বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের সোনার দামে যে বিস্ময়কর ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, তা সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ভাবনার বিষয়। একই ধরনের সোনা দুই দেশে প্রায় ২৪ শতাংশ দামে ভিন্নতা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি সোনার বাজারে সমতা আনার জন্য সরকারের নীতিমালায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈধ আমদানির প্রক্রিয়া সহজতর ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি না করা হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

FAQ + উত্তর:

১. ভারতে এখন সোনার দাম কত?

২০ মে ২০২৫-এ কলকাতায় ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৮৯,৮৫০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,২৭,৫৩৯ টাকা (১ রুপি = ১.৪২ টাকা ধরে)।

২. বাংলাদেশে সোনার দাম কত?

একই দিনে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১,৬৭,০৯৮ টাকা, যা ভারতের দামের তুলনায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা বেশি।

৩. ভারত থেকে সোনা কিনে আনলে কি লাভ হয়?

বর্তমান বাজারদরে ভারত থেকে সোনা কিনলে ২৪%-এর মতো সাশ্রয় হতে পারে, তবে কর ও কাস্টমস ব্যয় হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

৪. ভারত থেকে ব্যক্তিগতভাবে সোনা আনা কি বৈধ?

ভারত থেকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সোনা আনা বৈধ হলেও কর ও শুল্ক দিতে হয়। বড় পরিমাণ আনতে হলে বাংলাদেশ কাস্টমসের নিয়ম মেনে চলতে হবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ