ঢাকা, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

২০২৫ সালের মধ্যে বাতিল হচ্ছে হাজারো জমির দলিল

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১২:৫৫:১৪
২০২৫ সালের মধ্যে বাতিল হচ্ছে হাজারো জমির দলিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে ২০২৫ সালের মধ্যে। ২০২৩ সালে পাস হওয়া “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন” এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী, দেশের বহু জমির দলিল বাতিলের আওতায় পড়তে চলেছে। ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় জমির মালিকানা যাচাই ও অবৈধ দলিল চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে।

সরকারের লক্ষ্য হলো ভুয়া দলিল, অবৈধ দখল, সরকারি জমি আত্মসাৎ, এবং বিতর্কিত মালিকানা প্রশ্নে দীর্ঘদিনের অনিয়ম দূর করে একটি স্বচ্ছ ও আধুনিক ভূমি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। নিচে তুলে ধরা হলো, কোন কোন ধরনের জমির দলিল বাতিল হতে পারে।

জাল দলিলের ভিত্তিতে দখল করা জমি

যেসব জমি ভুয়া দলিল তৈরি করে দখলে রাখা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাস জমি হিসেবে পুনরায় নথিভুক্ত হবে। এসব জমির দলিল আইনের চোখে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রয়োজন হলে উচ্ছেদ কার্যক্রমও চালানো হবে।

খাস জমির অবৈধ ব্যবহার

যারা সরকার থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া জমি বিক্রি করেছেন বা নির্ধারিত শর্ত ভেঙেছেন, তাদের জমিও বাতিল হবে। অনেকেই নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জমি বিক্রি করেছেন, যা বাংলাদেশের প্রচলিত ভূমি আইন অনুযায়ী বৈধ নয়।

অর্পিত সম্পত্তির জাল দলিল

ভারতে চলে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ফেলে যাওয়া জমি—যা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত—অনেকে অবৈধভাবে নিজেদের নামে দলিল করেছেন। এসব দলিল বাতিল করে জমিগুলো সরকারি মালিকানায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দেবত্বর ও ওয়াকফ সম্পত্তি দখল

মসজিদ, মন্দির, মঠ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দানকৃত জমি যারা নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই দলিলগুলো বাতিল করে জমিগুলো মূল প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

অতিরিক্ত জমি বিক্রির অভিযোগ

কেউ যদি তার প্রকৃত মালিকানার চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করে থাকেন, বিশেষ করে ওয়ারিশি জমির ক্ষেত্রে, তাহলে সেই দলিল বাতিল করা হবে। জমির পরিমাণ ও দাগ নম্বর অনুযায়ী বিক্রয় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দাগের অমিল

একটি দাগে জমি কিনে অন্য দাগে ভোগদখল করলে, এবং এতে আইনি বিরোধ সৃষ্টি হলে সেই জমির দলিল বাতিল হতে পারে। দাগ অনুযায়ী মালিকানা নির্ধারণ এখন অত্যন্ত কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।

অবৈধ হেবা দলিল

গ্রামের সাধারণ মানুষদের বা আত্মীয় নয় এমন ব্যক্তিদের নামে যদি হেবা দলিল তৈরি করা হয়ে থাকে, এবং তা আইনি সীমার বাইরে গিয়ে করা হয়, তবে সে দলিলও বাতিলের আওতায় পড়বে।

অবিভক্ত ওয়ারিশি জমির ক্রয়-বিক্রয়

যেসব জমি এখনো বণ্টন হয়নি বা কোনো আদালতের রায় নেই, অথচ তা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, সেসব বিক্রয় দলিল বাতিল হবে। জমির সঠিক উত্তরাধিকার নির্ধারণ না করে বিক্রি এখন গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে।

এক জমির একাধিক দলিল

একটি জমি যদি একাধিক ব্যক্তিকে বিক্রি করা হয়, এবং প্রথম দলিলটি বৈধভাবে রেজিস্ট্রি করা হয়ে থাকে, তাহলে পরে করা দলিলগুলো বাতিল বলে গণ্য হবে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বৈত দাবি থাকলে তা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির অপব্যবহার

যারা শুধুমাত্র দেখাশোনার উদ্দেশ্যে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি পেয়েছিলেন কিন্তু সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে জমি বিক্রি করেছেন, তাদের দলিল বাতিল হবে। এমনকি অনেক পুরোনো দলিলও এ আইনের আওতায় এসে বাতিল হতে পারে।

জমি কেনার আগে যা যা অবশ্যই নিশ্চিত হবেন

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জমি ক্রেতাদের প্রতি বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। জমি কেনার আগে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে:

খতিয়ান, দাগ, চৌহদ্দি ও মৌজা মানচিত্র যাচাই

মালিকানা নামজারি সম্পন্ন হয়েছে কি না

বণ্টননামা দলিল বা আদালতের রায় রয়েছে কি না

জমিটি সরকারি, অর্পিত, দেবোত্তর বা ওয়াকফ সম্পত্তি নয় কি না

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না

ভূমি ব্যবস্থায় আসছে বড় পরিবর্তন

২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের জমির তথ্য ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘জাতীয় ভূমি তথ্য ব্যাংক (NLIS)’ এর মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিক, ব্যবহারকারী ও দখলদারের তথ্য এক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে। এতে জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও প্রতারণা অনেকটাই বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জমি হলো একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু ভুল কাগজপত্র, অবৈধ দখল কিংবা অসতর্ক ক্রয়ের কারণে সেই স্বপ্ন এক নিমিষেই ভেঙে যেতে পারে। ২০২৫ সালের পরিবর্তনের আগে এখনই সময়, নিজের জমির কাগজপত্র যাচাই করে নেওয়ার এবং আইনি দিক থেকে প্রস্তুত থাকার।

সরকারের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ভূমি ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকেও আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল করে তুলবে। তাই যারা জমি কিনতে যাচ্ছেন বা সম্প্রতি কিনেছেন, তাদের এখনই নিজ নিজ দলিল ও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

FAQs এবং উত্তর:

প্রশ্ন: ২০২৫ সালে কোন কোন জমির দলিল বাতিল হতে পারে?

উত্তর: জাল দলিল, খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, দেবত্বর ও ওয়াকফ জমি, অবিভক্ত ওয়ারিশি জমি, দাগে অমিল থাকা জমি, এবং অবৈধ হেবা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ভিত্তিক জমির দলিল বাতিল হতে পারে।

প্রশ্ন: জমি কেনার আগে কী কী যাচাই করা উচিত?

উত্তর: খতিয়ান, দাগ ও চৌহদ্দি মিল, নামজারি, বণ্টননামা বা আদালতের রায়, জমির শ্রেণি (সরকারি/ব্যক্তি/দেবোত্তর) এবং রেজিস্ট্রেশনের আইনগত বৈধতা যাচাই করা উচিত।

প্রশ্ন: পুরোনো দলিল থাকলে কি তা নিরাপদ?

উত্তর: না, পুরোনো দলিল থাকলেও তা যদি জাল হয় বা আইনবহির্ভূতভাবে করা হয়, তাহলে সেটিও বাতিল হতে পারে।

প্রশ্ন: হেবা দলিল কি বৈধ?

উত্তর: হেবা দলিল তখনই বৈধ যখন তা সম্পূর্ণ আইন মেনে, নির্ভরযোগ্য সাক্ষী ও রেজিস্ট্রেশনসহ করা হয়। অযোগ্য বা সন্দেহজনক হেবা দলিল বাতিলের আওতায় পড়ে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ