ঢাকা, শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

একসঙ্গে তিন জ্বর—ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আতঙ্ক, করণীয় কী?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ১২:৪৬:০৬
একসঙ্গে তিন জ্বর—ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আতঙ্ক, করণীয় কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্ষার শুরুতেই সারাদেশে একসঙ্গে তিন ধরনের জ্বর—ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও ইনফ্লুয়েঞ্জা—ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে জ্বরের রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেকে বুঝতেই পারছেন না, জ্বরটা আসলে কোন ধরনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রোগের উপসর্গ অনেকটাই মিলে গেলেও প্রতিটিই ভিন্নভাবে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তাই সময়মতো সঠিক পরীক্ষা ও সতর্কতা খুবই জরুরি।

তিন জ্বরের উপসর্গ কীভাবে আলাদা করবেন?

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ:

হঠাৎ তীব্র জ্বর (১০৩–১০৫ ডিগ্রি)

চোখের পেছনে ব্যথা

গায়ে র‍্যাশ

বমি, ক্ষুধামান্দ্য

প্লেটলেট দ্রুত কমে যাওয়া

টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ:

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা জ্বর

মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

অবসাদ ও ক্ষুধামান্দ্য

জিভে সাদা আবরণ

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল ফিভার:

হাঁচি-কাশি, গলা ব্যথা

শরীরব্যথা ও দুর্বলতা

মাঝারি মাত্রার জ্বর

শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়

কেন একসঙ্গে এত রোগ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়া পরিবর্তন, পানি জমে থাকা, খাদ্য ও পানির দূষণ, এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণেই এসব রোগ একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে।

“একটা সময় এক বা দুটি রোগ দেখা দিত, এখন একসঙ্গে তিন জ্বর ছড়াচ্ছে। রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে জটিলতা বাড়ছে।”

— বলছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুল হাসান।

কখন হাসপাতালে যাবেন?

জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

প্লেটলেট ১ লাখের নিচে নেমে গেলে

ঘন ঘন বমি, গায়ে র‍্যাশ বা চোখ লাল হলে

অবসাদজনিত অজ্ঞান বা খিঁচুনি দেখা দিলে

চিকিৎসকের করণীয় পরামর্শ

১. জ্বর হলেই ঘরে বিশ্রামে থাকুন ও প্রচুর পানি পান করুন

২. প্যারাসিটামল ছাড়া নিজে থেকে ওষুধ খাবেন না

৩. তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে NS1, টাইফয়েড টেস্ট ও CBC করান

৪. বাইরে খোলা খাবার ও অপরিশোধিত পানি থেকে দূরে থাকুন

৫. ঘরের ভেতরে ও আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখুন

৬. ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ুন

কোন জ্বর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?

তিনটি জ্বরই মারাত্মক হতে পারে, তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক ডেঙ্গু—বিশেষ করে যদি প্লেটলেট নেমে যায় বা হেমোরেজিক ফেজে চলে যায়। টাইফয়েড দীর্ঘস্থায়ী ও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হলে জটিলতা বাড়ে। আর ইনফ্লুয়েঞ্জা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য গুরুতর হতে পারে।

বর্তমানে ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও ইনফ্লুয়েঞ্জা—তিন রোগের উপসর্গ প্রায় একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অসাবধানতা বা অবহেলার সুযোগ নেই। জ্বর হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন, সময়মতো চিকিৎসা নিন এবং সচেতন থাকুন।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন: একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব?

উত্তর: হ্যাঁ, অনেকে একসঙ্গে দুটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যায় না।

প্রশ্ন: তিন ধরনের জ্বরের লক্ষণ কীভাবে আলাদা করব?

উত্তর: জ্বরের ধরন, অন্যান্য উপসর্গ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পার্থক্য বোঝা যায়।

প্রশ্ন: জ্বর হলে হাসপাতালে যাওয়ার আগে কী করব?

উত্তর: বিশ্রাম নিন, প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ খাবেন না, এবং দ্রুত পরীক্ষা করান।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ