ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সতর্ক হন! কিডনি খারাপ হলে শরীর যে ৮টি সিগন্যাল দেয়, চিনে নিন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ০৮:৫৩:০০
সতর্ক হন! কিডনি খারাপ হলে শরীর যে ৮টি সিগন্যাল দেয়, চিনে নিন

আমাদের দেহের অভ্যন্তরে যখন কোনো অসুস্থতা জন্ম নেয়, তা সহজে চোখে পড়ে না। বিশেষ করে কিডনি বা বৃক্কের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হলে তা প্রায়শই ধরা পড়ে অনেক বিলম্বে। এই কারণেই কিডনির রোগ প্রায়শই 'নীরব ঘাতক' হিসেবে পরিচিত। অঙ্গটি তার কার্যক্ষমতা হারানোর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো পূর্ব সতর্কবার্তা না দিয়েই কাজ চালিয়ে যায়। চুপিসারে এই ব্যাধি আমাদের দেহে বিস্তার লাভ করে এবং গুরুতর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।

বৃক্কের কাজ: জীবনধারণে এর গুরুত্ব

দেহযন্ত্রে ছাঁকনির (Filter) মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই অঙ্গটি, যা রক্ত থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে দেয়। একইসঙ্গে কিডনি শরীরের লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রক্ত তৈরিতেও সহায়তা করে। কিন্তু বৃক্ক তার স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম হলে, শরীর আগেভাগেই কিছু জরুরি সতর্কসংকেত দিতে শুরু করে। চলুন, সেই সাধারণ লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যা আপনার কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে:

কিডনি ভালো না থাকার ৮টি জরুরি সংকেত

১. লাগাতার ক্লান্তি ও দুর্বলতা

যদি বৃক্ক (কিডনি) রক্তকে সঠিকভাবে পরিশ্রুত করতে ব্যর্থ হয়, তবে শরীরে বিষাক্ত উপাদানের স্তূপ তৈরি হতে থাকে। এই কারণে আপনি একটানা ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন, মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে এবং মাথা ভার হয়ে থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রক্তে লোহিত কণিকার ঘাটতি (অ্যানিমিয়া) সৃষ্টিও এর নেপথ্যে কাজ করে।

২. নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের ব্যাঘাত

যখন টক্সিন উপাদানগুলো কিডনি দ্বারা পরিশ্রুত না হয়ে রক্তপ্রবাহে থেকে যায়, তখন তা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। অতিরিক্ত মেদ (স্থূলতা) এবং ঘুমের নিয়মিত ব্যাঘাত, উভয়ই দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের (Chronic Kidney Disease) পরিচিত লক্ষণ হতে পারে।

৩. ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও ফেটে যাওয়া

বৃক্ক আমাদের দেহের খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এই ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে ওঠে এবং ফাটতে শুরু করে। এটি উন্নত বা অ্যাডভান্স কিডনি রোগের প্রাথমিক পূর্বাভাস হতে পারে।

৪. রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা

বিশেষ করে রাতের বেলায় যদি বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠতে হয়, তবে এটি কিডনি রোগের একটি চিহ্ন হতে পারে। বৃক্কের ফিল্টারিং ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমনটা ঘটে। তবে মনে রাখা দরকার, মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউরিন ইনফেকশন) অথবা প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়ার কারণেও এই সমস্যা দেখা যেতে পারে।

৫. প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি

একটি সুস্থ কিডনি রক্তের রক্তকণিকাকে দেহের ভেতরেই ধরে রাখে। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তকণিকাগুলি মূত্রের সাথে বেরিয়ে আসে। এটি যেমন কিডনি রোগের লক্ষণ, তেমনই টিউমার, কিডনি পাথর বা সংক্রমণের কারণেও হতে পারে।

৬. মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ

যদি প্রস্রাবের মধ্যে ডিমের সাদা অংশের মতো ফেনা বা বুদবুদ লক্ষ্য করা যায়, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে হলো কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শরীরের অপরিহার্য প্রোটিন মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

৭. চোখের চারপাশ ফুলে ওঠা

চোখের নিচে বা চারপাশে হঠাৎ করে ফোলা ভাব দেখা দিলে তার মানে হতে পারে—অত্যধিক পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যাচ্ছে এবং কিডনি সেই লিক বন্ধ করতে পারছে না।

৮. পা ও গোড়ালিতে জল জমা

বৃক্ক সঠিকভাবে কাজ না করলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জল ধরে রাখে। এর ফলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। তবে এই লক্ষণটি হৃদরোগ, লিভার সংক্রান্ত জটিলতা অথবা পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদি রোগের ফলেও হতে পারে।

এখনই পদক্ষেপ নিন: পরীক্ষা ও সতর্কতা

যদি আপনি নিজের বা পরিচিত কারও মধ্যে উপরে উল্লেখিত এক বা একাধিক লক্ষণ দেখতে পান, তবে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। কিছু সাধারণ পরীক্ষা, যেমন—ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC), এবং আলট্রাসনোগ্রাম—এইগুলো করলেই রোগের মাত্রা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।

কিডনি রোগ প্রথমে চুপচাপ থাকে, কিন্তু একবার মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছালে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই সময় থাকতে এই সংকেতগুলো চিনে নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোই হলো সবচেয়ে বড় সাবধানতা। শরীরের এই ইশারাগুলোকে গুরুত্ব দিন, সময়মতো সচেতন হন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন।

FAQ (Frequently Asked Questions) ও উত্তর

১. কিডনি রোগকে 'নীরব ঘাতক' বলা হয় কেন?

উত্তর: কিডনি রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয় কারণ এটি বিকল হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো নোটিশ না দিয়েই চুপচাপ কাজ চালিয়ে যায় এবং দেরিতে ধরা পড়ে।

২. শরীরে কিডনির মূল কাজ কী?

উত্তর: কিডনি শরীরের ভেতরে ফিল্টার হিসেবে কাজ করে—রক্ত পরিশোধন করে, টক্সিন বা বর্জ্য বাইরে বের করে, লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।

৩. প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বাবল হলে তা কীসের ইঙ্গিত দেয়?

উত্তর: প্রস্রাবে ডিমের মতো ফেনা বা বাবল হলে ধরে নিতে পারেন—প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে কিডনির ছাঁকনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে।

৪. কিডনি রোগের সন্দেহ হলে কী কী পরীক্ষা করানো উচিত?

উত্তর: কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। সাধারণত ব্লাড টেস্ট (Creatinine, Urea), ইউরিন টেস্ট (Protein, RBC) এবং আলট্রাসনোগ্রাম করালেই অনেক কিছু বোঝা যায়।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ