ঢাকা, শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

হার্নিয়া অবহেলা নয়, সময়মতো চিকিৎসায় মিলবে স্থায়ী সমাধান

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১০:৫৭:২৪
হার্নিয়া অবহেলা নয়, সময়মতো চিকিৎসায় মিলবে স্থায়ী সমাধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: হার্নিয়া নামটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। কিন্তু এ রোগ সম্পর্কে অনেকেরই পূর্ণ ধারণা নেই। চিকিৎসকদের মতে, হার্নিয়া আসলে পেটের দেওয়ালে সৃষ্ট এক ধরনের দুর্বলতা বা ফাঁক, যার ভেতর দিয়ে অন্ত্র কিংবা চর্বির অংশ বেরিয়ে আসে। এর ফলে পেট, কুঁচকি বা অণ্ডথলির অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে এবং অনেক সময় তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে।

হার্নিয়ার ধরন

হার্নিয়া একাধিক প্রকারের হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ হলো ইনগুইনাল হার্নিয়া (কুঁচকিতে), আম্বিলিকাল হার্নিয়া (নাভিতে) এবং হাইয়াটাল হার্নিয়া (ডায়াফ্রামে)। এটি শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্ক—সব বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা দিতে পারে। কারও ক্ষেত্রে এটি নিঃশব্দে থাকে, আবার কারও ক্ষেত্রে ফোলা ও ব্যথার কারণে তা দ্রুত ধরা পড়ে।

কেন হয় হার্নিয়া?

হার্নিয়ার অন্যতম কারণ হলো জন্মগত ত্রুটি বা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পেশি দুর্বল হয়ে পড়া। তবে আরও কিছু ঝুঁকিও রয়েছে—

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন

দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রস্রাবের সময় চাপ সৃষ্টি হওয়া (বিশেষ করে প্রস্টেটের সমস্যায়)

ক্রমাগত কাশি

পেটে আঘাত বা পুরোনো অস্ত্রোপচারের প্রভাব

ভারী জিনিস তোলা

ধূমপান

পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কুঁচকি অঞ্চলে হার্নিয়া হয়, আর নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় নাভির আশপাশে। তবে সমস্যা অবহেলা করলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিশেষত, অন্ত্র যদি ফেঁসে যায় বা জড়িয়ে যায়, তখন “স্ট্রাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া” তৈরি হয়, যা জীবনহানির ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি করে।

চিকিৎসার একমাত্র পথ: অস্ত্রোপচার

হার্নিয়ার ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কার্যকর নয়। একমাত্র সমাধান হলো অস্ত্রোপচার। বর্তমানে Mesh (জালি) বসিয়ে হার্নিয়া রিপেয়ার করা হয়, যা কার্যকর এবং নিরাপদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন হার্নিয়া সার্জারি অনেকটাই উন্নত, বিশেষ করে ল্যাপারোস্কপি বা মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি (MIS)।

হার্নিয়া অপারেশনের উন্নত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে—

TAPP

TEP

eTEP

TAR

IPOM

এছাড়াও আধুনিক সময়ে রোবটিক সার্জারিও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরও নিখুঁত ও কার্যকর।

ল্যাপারোস্কপির সুবিধা

ল্যাপারোস্কপিক সার্জারিতে মাত্র কয়েকটি ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরা ব্যবহার করে অপারেশন করা হয়। এর সুবিধাগুলো হলো—

ব্যথা প্রায় নেই বললেই চলে

জটিলতার ঝুঁকি কম

রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সময় লাগে না

হার্নিয়া অবহেলার রোগ নয়। প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করলে এটি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। দেরি করলে জটিলতা বাড়তে পারে, তাই সতর্ক থাকাই শ্রেয়।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ