ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

সকালের এই ৮ অভ্যাসেই বাজিমাত! দ্রুত ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকুন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৮ ১০:১১:১১
সকালের এই ৮ অভ্যাসেই বাজিমাত! দ্রুত ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ওজন কমানো এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য সকালের কিছু অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে ৮টি কার্যকর সকালের অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। এই অভ্যাসগুলো কেবল ওজন কমাতেই নয়, বরং ওজন ধরে রাখতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতেও সহায়ক।

১. সকালে আধা লিটার পানি পান:

নাশতা খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি পান করলে পেট ভরা অনুভূত হয়, ফলে কম খাবার খেলেও তৃপ্তি মেলে। পানিতে ক্যালরি না থাকায় এটি ওজন বাড়ায় না। দিনের অন্যান্য বেলায়ও খাবারের আগে আধা লিটার পানি পান করে খাওয়া শুরু করলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণে খেলেও পেট ভরে যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। "খাবারের আগে পানি খেলে হজমের সমস্যা হয়" – এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

২. দিনের নাশতা ঠিক করে ফেলা:

ক্ষুধা লাগলে অনেক সময় আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলি, যেমন শিঙাড়া, পুরি, জিলাপি বা কোমল পানীয়। এই লোভ সামলানোর জন্য সকালে দিনের নাশতা এবং অন্যান্য খাবারের তালিকা আগে থেকে ঠিক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। একটি বক্সে ফল কেটে বা এক প্যাকেট বাদাম সঙ্গে রাখলে অথবা ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার প্রস্তুত রাখলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমানো সহজ হয়।

৩. হেঁটে হেঁটে কাজে বা স্কুলে যাওয়া:

দৈনন্দিন কাজের মধ্যে হাঁটাকে অন্তর্ভুক্ত করা ওজন কমানোর জন্য একটি দারুণ উপায়। কাজে বা স্কুলে যাওয়ার পথে, অথবা বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার সময় হেঁটে যাওয়া যেতে পারে। দূরত্ব বেশি হলে রিকশা বা বাস থেকে এক-দু'স্টপ আগে নেমে বাকি পথটুকু হেঁটে যাওয়া, বা গাড়ি কিছুটা দূরে পার্ক করে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানো যেতে পারে। হাঁটার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে এবং দ্রুত গতিতে হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। এটি শুধু ওজন কমাতেই নয়, বরং ওজন ধরে রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতেও জরুরি।

৪. চিনি ছাড়া চা-কফি পান:

সকালে চা-কফি পান করার অভ্যাস থাকলে চিনি ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস করুন। চিনি থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি আসে, যা ওজন বাড়ায়। সুস্থ থাকার জন্য আলাদা করে চিনি খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ চিনি থেকে শরীর বিশেষ কোনো পুষ্টি পায় না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে চিনি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। চায়ের সঙ্গে বিস্কিট খাওয়াও বাদ দেওয়া উচিত, কারণ অধিকাংশ বিস্কিটে প্রচুর চিনি ও ক্যালরি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, দুটি বিস্কিটে প্রায় ২০০ ক্যালরি থাকে, যা প্রায় তিনটি সিদ্ধ ডিমের সমান।

৫. সকালে ওজন মাপা:

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ওজন মাপে, তারা ওজন কমাতে বেশি সফল হয়। সকালে বাথরুম সেরে খালি পেটে ওজন মাপতে হবে এবং প্রতিদিন একই ধরনের পোশাক পরে ওজন মাপার চেষ্টা করতে হবে। ওজন একটি খাতায়, ক্যালেন্ডারে বা ফোনের অ্যাপে (যেখানে গ্রাফ আকারে দেখা যায়) তুলে রাখা যেতে পারে, যা ওজন বাড়ছে না কমছে তা সহজেই খেয়াল রাখতে সাহায্য করবে। যদি দেখেন চেষ্টার পরও ওজন কমছে না, তাহলে কারণ খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব। ওজন মাপার ফলে ওজন কমে না, তবে দিনের শুরুতে যে চিন্তাগুলো আসে, তা আপনাকে অতিরিক্ত হাঁটা বা ফাস্ট ফুড পরিহারের মতো সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে। যদি প্রতিদিন ওজন মাপলে উদ্বেগ হয়, তবে কয়েকদিন পরপর বা সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে মাপা যেতে পারে।

৬. সকাল সকাল ব্যায়াম করা:

ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য, কিন্তু দিনের ব্যস্ততায় অনেক সময় তা হয়ে ওঠে না। তাই সকাল সকাল ব্যায়াম সেরে ফেলা উচিত। যেকোনো ধরনের ব্যায়াম, যেমন দড়ি লাফ, দ্রুত হাঁটা, দৌড়, ওঠবস, বা ভার উত্তোলন করা যেতে পারে। যে ব্যায়ামটি আপনার জন্য সুবিধাজনক এবং আনন্দদায়ক, সেটি বেছে নিয়ে সকালে করে ফেলুন। এতে দিনের শুরুটা সুন্দর হবে এবং বিকেলে সময় পেলে আরও ব্যায়াম করা সম্ভব হলে তা বোনাস হিসেবে কাজ করবে।

৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো:

সুস্থ থাকতে খাদ্য ও পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। ঘুম কেবল বিশ্রামের জন্য নয়, ঘুমের সময় মস্তিষ্কেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলে। গবেষণায় দেখা গেছে, কম ঘুমের সাথে অতিরিক্ত ওজনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। কম ঘুম হলে ক্ষুধা বেশি লাগতে পারে, বেশি পরিমাণে খাওয়া হতে পারে, এবং ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়তে পারে। রাত জেগে থাকলে কিছু খেতেও ইচ্ছে করতে পারে। ঘুম কম হলে দিনে ক্লান্ত লাগতে পারে, ফলে ব্যায়াম করা বা ভালো খাবার তৈরির এনার্জি থাকে না, তখন চটজলদি ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। দিনের পর দিন ঘুম কম হলে মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে, যা পরোক্ষভাবে ওজন বাড়াতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সকালে উঠে কতক্ষণ ঘুমালেন তা হিসাব করে, যদি দেখেন ঘুম কম হচ্ছে, তাহলে ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

৮. দিনের জন্য একটি অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করা:

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় অতিরিক্ত ওজনের ১০০ জন ব্যক্তিকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একদলকে প্রতিদিন সকালে ওজন মাপতে বলা হয়, অন্যদলকে ওজন মাপার পর সেই দিনের জন্য একটি অ্যাকশন পয়েন্ট বা একটি নির্দিষ্ট কাজ ঠিক করতে বলা হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করবে। আট সপ্তাহ পর দেখা যায়, উভয় দলের ওজন কমলেও, যারা ওজন মাপার পাশাপাশি একটি অ্যাকশন পয়েন্ট বেছে নিয়েছিল, তাদের ওজন গড়ে ৪ কেজির বেশি কমেছে, যেখানে প্রথম দলের ওজন কমেছে ১ কেজির মতো। অর্থাৎ অ্যাকশন পয়েন্ট নির্ধারণ করলে প্রায় ৩ কেজি বেশি ওজন কমেছে।

সুতরাং, ওজন কমানোর জন্য যা করণীয় তা করার পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে ওজন মাপার পর সেই দিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যাকশন পয়েন্ট ঠিক করে নিলে, যেমন – "আজকে টেবিলে বসা ছাড়া কোনো খাবার খাবো না", "বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে একসাথে হাঁটতে যাবো", "রাত ৮টার পর কিছু খাবো না" অথবা "আজকে ১০ হাজার কদম হাঁটবো" – এই ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো ওজন কমাতে অনেক সহায়ক হবে।

এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত পালন করে আপনি দ্রুত এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ