ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

বাসর রাতে কি করণীয় জানা সবার জন্য জরুরি

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ১০:০৯:৫৬
বাসর রাতে কি করণীয় জানা সবার জন্য জরুরি

বিবাহ প্রতিটি মানুষের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা শুধু সামাজিক বন্ধন নয়, বরং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধে পূর্ণ এক পবিত্র সম্পর্ক। প্যান ভিশন টিভিতে প্রচারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. নাসিমা হাসান নবদম্পতিদের জন্য এবং যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছেন, তাদের জন্য সুখী ও বরকতময় দাম্পত্য জীবন গড়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

প্রথম রাতের তাৎপর্য: একটি বরকতময় সূচনা

ড. হাসান বিবাহের প্রথম রাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন যে, এই রাতটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ইসলামিক রীতি অনুযায়ী এর নিজস্ব সৌন্দর্য ও তাৎপর্য রয়েছে। অতিথিরা বিদায় নেওয়ার পর নবদম্পতিকে নির্জনে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও ভালোবাসা বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হতো।

প্রথম রাতের জন্য ড. হাসানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো:

হাস্যোজ্জ্বল আগমন: স্বামীর উচিত স্ত্রীকে হাসিমুখে বরণ করা, যা মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহর প্রতিচ্ছবি। রাসূলুল্লাহ (সা.) সবসময় হাস্যোজ্জ্বলভাবে মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করতেন।

বিশেষ দোয়া পাঠ: স্বামী স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করবেন। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখিত এই দোয়ার অর্থ হলো: "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তার কল্যাণ কামনা করি এবং যে কল্যাণের জন্য তুমি তাকে সৃষ্টি করেছো। আর আমি তোমার কাছে তার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই এবং যে অকল্যাণের জন্য তুমি তাকে সৃষ্টি করেছো।" এই দোয়া নবদম্পতির জন্য আল্লাহর কাছে বরকত ও সুরক্ষা প্রার্থনা করে।

একসাথে সালাত আদায়: স্বামী-স্ত্রী একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন, যা সম্পর্ককে আল্লাহর রহমতে সিক্ত করে। ড. হাসান এটিকে অত্যন্ত সুন্দর বলে বর্ণনা করেন, কারণ নামাজ আল্লাহর সাহায্য কামনা করার এবং ধৈর্য বৃদ্ধির এক শক্তিশালী মাধ্যম।

কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত: নামাজে সূরা রুম ও সূরা ইয়াসিনের মতো আয়াত তেলাওয়াত করা যেতে পারে, যেখানে আল্লাহতায়ালা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা বলেছেন। এর অর্থ উপলব্ধি করলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্পর্ক গভীর হয়।

ফল বা পানীয় ভাগ করে খাওয়া: স্বামী-স্ত্রী এক পাত্র থেকে ফল, শরবত বা দুধ পান করতে পারেন, যা তাদের মধ্যে একাত্মতা ও ভালোবাসার প্রতীক। এক্ষেত্রে 'বিসমিল্লাহ' বলে পান করা সুন্নত।

সুখী ও টেকসই দাম্পত্য জীবন গড়ার নির্দেশনা

ড. নাসিমা হাসান শুধু প্রথম রাত নয়, বরং সারাজীবনের জন্য একটি সুখী ও বরকতময় সম্পর্ক বজায় রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

জান্নাত লাভের লক্ষ্য: দাম্পত্য জীবনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত একে অপরকে জান্নাত লাভে সাহায্য করা। যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এই মহৎ উদ্দেশ্যে কাজ করেন, তখন আল্লাহ তাদের জীবনে বরকত দান করেন।

'বিসমিল্লাহ'র অনুশীলন: জীবনের প্রতিটি কাজে 'বিসমিল্লাহ' বলে শুরু করা উচিত। এটি প্রতিটি কাজকে আল্লাহর নামে শুরু করে এবং তাতে বরকত নিয়ে আসে।

বদনজর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঝুঁকি: ড. হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত মুহূর্ত বা ছবি অতিরিক্ত প্রকাশ না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি 'বদনজর' (ঈর্ষার দৃষ্টি) থেকে সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এর ব্যবহারিক ঝুঁকির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, যেমন চোর-ডাকাতরা অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে।শুধুমাত্র কল্যাণকামী ঘনিষ্ঠজনের কাছে ব্যক্তিগত বিষয়াদি সীমিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আবেগিক সংযোগ ও যত্ন: প্রতিটি দম্পতির একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। স্ত্রীর যখন স্বামীর বাড়িতে আগমন ঘটে, তখন তার প্রতি উষ্ণতা ও গ্রহণীয় মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে, স্বামী যখন শ্বশুরবাড়ি যান, তার প্রতিও যেন একই যত্ন ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

হাস্যোজ্জ্বল মুখ: সর্বদা হাসিমুখে থাকা সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ইসলামে হাসিমুখে থাকা সাদাকার সমতুল্য এবং এটি সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচকতা নিয়ে আসে।

ছোট ছোট উপহারের গুরুত্ব: দামি না হলেও ছোট ছোট উপহারের আদান-প্রদান সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। মাসে একবার বা তিন সপ্তাহে একটি ফুলও এই ভালোবাসা প্রকাশের একটি সুন্দর মাধ্যম হতে পারে। উপহারের মূল্য নয়, বরং একে অপরের প্রতি স্মরণ এবং গুরুত্ব দেওয়াই আসল উদ্দেশ্য।

যোগাযোগের সদ্ব্যবহার: সমস্যা দাম্পত্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে যোগাযোগের মাধ্যমে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। কোনো সমস্যা এড়িয়ে না গিয়ে খোলামেলা আলোচনা করলে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

শয়তানের চক্রান্ত: ড. হাসান স্মরণ করিয়ে দেন যে, শয়তান সবসময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে সচেষ্ট থাকে। এই চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেতে ইসলামিক জীবনবিধান মেনে চলা এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য।

ড. নাসিমা হাসান সকল নবদম্পতি এবং বিবাহিত যুগলদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা এই সহজ অথচ গভীর ইসলামিক নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করেন। ছোট ছোট ভালো কাজ, খোলামেলা যোগাযোগ এবং আধ্যাত্মিক বন্ধনের মাধ্যমে তারা এক সুখী, বরকতময় এবং আল্লাহভীরু দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ