ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

ডিমের রং সাদা নাকি লাল? কোনটি বেশি পুষ্টিকর? জেনে নিন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ২০:৩২:২৩
ডিমের রং সাদা নাকি লাল? কোনটি বেশি পুষ্টিকর? জেনে নিন

বাজারে গেলে আপনি দু'রকমের মুরগির ডিম দেখতে পান—একটি সাদা খোসার, আরেকটি লাল বা বাদামি খোসার। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, এই দুই রঙের ডিমের মধ্যে কোনটি বেশি ভালো, কোনটির পুষ্টিগুণ বেশি? কেউ মনে করেন, লাল ডিমের দাম বেশি হওয়ায় তার পুষ্টিও বেশি; আবার কেউ উল্টোটা ভাবেন। ডিমের রং ও পুষ্টিগুণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং এর পেছনের কারণগুলো তুলে ধরা হলো:

ডিমের রং কেন আলাদা হয়?

ডিমের খোসার রং মূলত মুরগির জাত এবং জিনের ওপর নির্ভর করে।

জেনেটিক কারণ: সাধারণত, সাদা পালকের মুরগি সাদা ডিম পাড়ে এবং গাঢ় রঙের পালকের মুরগি লাল বা বাদামি রঙের ডিম পেড়ে থাকে।

ব্যতিক্রম: লেগহর্ন (Leghorn) জাতের মুরগি নানা রঙের হলেও তারা সবসময় সাদা ডিম পাড়ে। তবে সাদা মুরগিও লাল ডিম পাড়তে পারে।

ডিম তৈরি প্রক্রিয়া: ডিমের খোসার বাদামি রঙ হয় মূলত মুরগির জরায়ুর মধ্যে থাকা শেল গ্ল্যান্ড (Shell Gland) থেকে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুযায়ী, একটি মুরগির ভেতরে ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে।

প্রথমে কুসুম তৈরি হয়, তারপর অ্যালবুমিন (সাদা অংশ) এবং শেষে খোসার ভেতরের ঝিল্লি তৈরি হয়।

সব ডিমের খোসা শুরুতে সাদাই থাকে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে রঞ্জক পদার্থ যোগ হয়, যা ডিমের খোসাকে লাল বা বাদামি করে। যেসব ডিমে এই রঞ্জক যোগ হয় না, সেগুলো সাদা থাকে।

অন্যান্য প্রভাব: মুরগির বয়স বাড়লে বা তারা বেশি চাপে থাকলে ডিমের রং হালকা হতে শুরু করে।

পুষ্টিগুণে কি কোনো পার্থক্য আছে?

পুষ্টিবিদ সৈয়দ তাসনিম হাসিন চৌধুরী এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুক দু'জনই জানিয়েছেন, ডিমের খোসার রঙের সঙ্গে এর পুষ্টিগুণের কোনো তারতম্য হয় না।

ফ্যাক্ট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে প্রায় ৭২ ক্যালোরি এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে। সাদা ও লাল—এই দুই রঙের ডিমে পুষ্টিগুণের পরিমাণ প্রায় সমান পাওয়া গিয়েছে।

ওমেগা-৩: নিউইয়র্কের একদল গবেষকের মতে, লাল ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সামান্য বেশি থাকতে পারে। তবে এই পার্থক্য এতটাই কম যে তাতে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।

ডিম যে রঙেরই হোক না কেন, এর খাদ্যগুণ প্রায় সমান।

লাল ডিমের দাম বেশি কেন?

লাল ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণ এর পুষ্টিগুণ নয়, বরং মুরগি পালনের খরচ।

উৎপাদন খরচ: সাধারণত, যে সব মুরগি ডিম ও মাংস—দুটি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় (ডুয়েল ব্রিড), সেগুলো লাল রঙের ডিম পাড়ে। এসব মুরগি আকারে বড় হওয়ায় তাদের বেশি খাবার দিতে হয়। ফলে ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে, তাই দামও বেশি রাখা হয়।

সাদা ডিমের খরচ: অন্যদিকে, সাদা পালকের মুরগির প্রজনন কিছুটা সস্তা এবং তারা বাদামি রঙের মুরগির চেয়ে কম খাবার খায়। এ কারণে সাদা ডিমের দাম লাল ডিমের চেয়ে কম রাখা হয়।

ডিমের কুসুমের রংই আসল পার্থক্য গড়ে তোলে

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের খোসার রং নয়, বরং ডিমের কুসুমের রং এর পুষ্টির ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলে।

গাঢ় কুসুমের উপকারিতা: যে ডিমের কুসুমের রং যত গাঢ়, সেই ডিমে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন এবং খনিজ উপাদানের মাত্রা তত বেশি থাকে। এই ডিমের স্বাদও বেশি হয়।

কুসুমের রং কেন গাঢ় হয়? কুসুমের রং মুরগির খাদ্যের ওপর নির্ভর করে। ক্যারোটিনয়েড (Carotenoid) নামে এক ধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে কুসুমের রং গাঢ় হয়। এই ক্যারোটিনয়েড যুক্ত খাবার (যেমন ভুট্টা, লাল ক্যাপসিকাম) বা ইনজেকশন দিয়ে খামারিরা কুসুমের রং গাঢ় করে থাকেন।

খাদ্য ও পরিবেশের গুরুত্ব:

পুষ্টিবিদদের মতে, যেসব মুরগি প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খুঁজে খায় এবং খোলা পরিবেশে থাকে (ফ্রি-রেঞ্জ), সেসব মুরগির ডিমে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ উপাদান এবং ফ্যাট বেশি থাকে।

তবে খামারের মুরগিকে ভালো মানের ফিড দেওয়া হলে তাদের ডিমেও পুষ্টির পরিমাণ দেশি বা গৃহস্থালীর মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি হতে পারে।

চূড়ান্ত কথা: ডিমের খোসার রং সাদা বা লাল যাই হোক না কেন, তাদের মৌলিক পুষ্টিগুণ প্রায় সমান। আপনি নিশ্চিন্তে যেকোনো ডিম খেতে পারেন। তবে ডিমের মান ও পুষ্টির পার্থক্য বুঝতে চাইলে ডিমের খোসার রং নয়, বরং মুরগির খাদ্য ও পালন পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দিন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ