ঢাকা, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

যে সিরাপ লিভার ধ্বংস করে, প্রতিদিন তা খাচ্ছেন না জেনেই

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৩ ১৪:৩৯:৫৪
যে সিরাপ লিভার ধ্বংস করে, প্রতিদিন তা খাচ্ছেন না জেনেই

জামিরুল ইসলাম: আমাদের প্রতিদিনের খাবারে এমন এক উপাদান লুকিয়ে আছে, যা নিঃশব্দে লিভারকে ধ্বংস করছে। অথচ আমরা প্রতিদিন সেটি খাচ্ছি, না জেনেই! এই উপাদানটি হলো হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ (High Fructose Corn Syrup – HFCS)—যা এখন আধুনিক খাদ্যশিল্পের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি উপাদান, কিন্তু শরীরের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি।

লুকিয়ে থাকে প্রতিদিনের খাবারেই

ভুট্টার স্টার্চ থেকে তৈরি এই সিরাপকে প্রক্রিয়াজাত করে এমনভাবে বানানো হয় যে এটি সাধারণ চিনির চেয়েও বেশি মিষ্টি ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই কারণেই খাদ্য প্রস্তুতকারকরা নরম পানীয়, ক্যান্ডি, বিস্কুট, কেচাপ, সস, এনার্জি ড্রিংক, এমনকি ইয়োগার্টেও এটি ব্যবহার করে।

অর্থাৎ, আপনি সকালে যে ফলের রস বা বিস্কুট খান, দুপুরে যে সস বা কেচাপ ব্যবহার করেন—সবখানেই লুকিয়ে থাকে এই সিরাপের উপস্থিতি।

শরীরে ঢুকে কীভাবে ক্ষতি করে

চিকিৎসকদের মতে, গ্লুকোজ শরীরের সব কোষে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার হয়, কিন্তু ফ্রুক্টোজ কেবল লিভারেই প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভারে প্রবেশের পর এটি দ্রুত চর্বিতে রূপান্তরিত হয়, যা জমে গিয়ে তৈরি করে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।

এছাড়া অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, ফলে প্রদাহ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, এমনকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানায়, সে বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ লিভারের রোগে আক্রান্ত হন। বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লাখ মৃত্যুর ঘটনায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রোগের পেছনে অন্যতম কারণ হলো ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপের বাড়তি ব্যবহার।

বিশেষজ্ঞের মতামত

বাংলাদেশের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস বলেন,

“গ্লুকোজ শরীর সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে, কিন্তু ফ্রুক্টোজ লিভারে জমে ফ্যাট তৈরি করে। এটি যত বেশি খাবেন, লিভার তত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ মানুষ প্রতিদিন অজান্তেই এটি খেয়ে যাচ্ছে।”

তিনি পরামর্শ দেন,

প্রক্রিয়াজাত খাবার ও সোডা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত এবং প্রাকৃতিক চিনি (যেমন মধু বা ফলের প্রাকৃতিক মিষ্টতা) ব্যবহার করাই নিরাপদ।

কেন লিভার সংকেত দেয় না

বিশেষজ্ঞরা জানান, যখন আমরা সাধারণ চিনি খাই, শরীরে লেপটিন নামক হরমোন তৈরি হয় যা মস্তিষ্ককে বলে—“আর খেতে হবে না”। কিন্তু ফ্রুক্টোজ খেলে লেপটিন তৈরি হয় না, ফলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে না যে শরীর পূর্ণ হয়েছে।

ফলাফল—অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং ধীরে ধীরে লিভারের ক্ষতি।

কীভাবে এড়ানো সম্ভব

বাজারের প্যাকেটজাত খাবারের লেবেল পড়ুন — “High Fructose Corn Syrup” লেখা থাকলে কিনবেন না।

নরম পানীয়, কেচাপ, সোডা ও ক্যান্ডি কমান।

ফল, সবজি ও প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যান।

শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম বজায় রাখুন।

চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত এই সিরাপ আসলে মিষ্টি ফাঁদ—যা আমাদের অজান্তেই লিভারকে ধ্বংস করছে। সময় থাকতে সচেতন না হলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। খাবারের স্বাদ নয়, এখন প্রয়োজন শরীরের নিরাপত্তা বেছে নেওয়া।

FAQ (Frequently Asked Questions)

প্রশ্ন ১: হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ কী?

উত্তর: ভুট্টা থেকে তৈরি এক ধরনের তরল মিষ্টি সিরাপ যা চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু লিভারের জন্য ক্ষতিকর।

প্রশ্ন ২: কোন কোন খাবারে এটি বেশি থাকে?

উত্তর: সফট ড্রিংক, সোডা, কেচাপ, সস, ক্যান্ডি, বিস্কুট ও প্যাকেটজাত ফলের জুসে এটি থাকে।

প্রশ্ন ৩: এটি কীভাবে লিভারের ক্ষতি করে?

উত্তর: শরীরে প্রবেশের পর ফ্রুক্টোজ লিভারে ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়, যা ফ্যাটি লিভার ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ৪: কীভাবে এড়ানো যায়?

উত্তর: খাবারের লেবেল পরীক্ষা করুন, প্রাকৃতিক খাবার খান এবং সোডা বা প্রক্রিয়াজাত পানীয় এড়িয়ে চলুন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ