যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও ক্রিকেটে খেলছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আবুল হাসান রাজু

২০১২ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯ম উইকেট জুটিতে রাজু যোগ করেন ১৮৪ রান। যা ৯ম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেই ৯ম উইকেটে ৩য় সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড হয়ে টিকেছিল ১০ বছর।
গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে যা পেছনে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৯১ রানের জুটিটি ৯ম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর তাতে আবারও আলোচনায় আসেন আবুল হাসান রাজু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২৯ বছর বয়সী এই পেসার বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে। স্পাইনাল কডের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অবশ্য খেলছেন ক্রিকেটও। সেখান থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন নানা বিষয়। নিচে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল…
লম্বা সময় কোথাও নেই আপনি। এমনকি ২০১৮ সালের পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখা যাচ্ছে না…
আবুল হাসান রাজু: আমি আমেরিকাতে আছি আমার ট্রিটমেন্টের জন্য। স্পাইনাল কডের ইনজুরিটা ভোগাচ্ছে। আল্লাহর রহমতে নিউ ইয়র্ক থেকে স্বাস্থ্য বীমাও পেয়ে গেছি। এখন যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসাটা সেরে ফেলতে পারবো তত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ব্যাক করবো। আবার ধীরে ধীরে শুরু করবো ইন শা আল্লাহ।
ওখানে কি কোনো ধরণের ক্রিকেট খেলছেন?
আবুল হাসান রাজু: এখানেও ক্রিকেট খেলছি। প্রিমিয়ার লিগ খেলছি, বিভিন্ন রাজ্যে বড় বড় লিগ হয়। যেসব লিগে পাকিস্তান, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রচুর খেলোয়াড় খেলে। সবকিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলছে।
চিকিৎসা শুরুর আগে এই খেলাটা প্রভাব ফেলবে না?
আবুল হাসান রাজু: না ওরকম কোনো প্রভাব পড়ছে না। কারণ আমি আমার প্রোটেকশন নিয়েই খেলছি। চিকিৎসক যেভাবে বলছে আমি সেভাবেই কাজগুলো করছি। আমি রিহ্যাবের কাজগুলো ঠিকঠাক করছি। আসলে আমিতো থাকি ভার্জিনিয়াতে, আমার স্বাস্থ্য বীমাটা নিউ ইয়র্কে। আমি চাচ্ছি যে এখানে একেবারে খেলাটা শেষ করে নিউ ইয়র্ক গিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ করবো।
এটা খুবই কঠিন। বুঝেনইতো আমেরিকাতে আপনি যদি স্বাস্থ বীমা না পান তো চিকিৎসা খরচটা খুবই ব্যয়বহুল হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখানে বীমাটা পেয়ে গেছি। কেবল কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
আপনার চোটের ধরণটা আসলে কেমন?
আবুল হাসান রাজু: ২০১৩ সালে আমি শ্রীলঙ্কাতে টেস্ট খেললাম, তখন আমার স্পাইনাল কডে লাগলো। ওটা অপারেশন করতে চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়াতে। প্রথম অপারেশনটা সফল না হলেও দ্বিতীয়টা সফল হয়েছে। এরপর টানা ৭ বছর ভালো ছিলাম। জাতীয় দলেও ব্যাক করলাম, আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাক পেয়েছি। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ (গত বছর) আসলো, তখনো প্রস্তুতিতে ছিলাম। তবে আবারও হুট করে লেগে গেল স্পাইনাল কডে।
তার মানে আবার চোটে না পড়লে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়েই আপনাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখা যেত?
আবুল হাসান রাজু: আমি চাই শতভাগ সুস্থ হয়ে খেলতে। ধরেন একটু ব্যথা নিয়ে, অবশ্য একজন বোলার, অলরাউন্ডার হিসেবে এসব থাকবেই। কিন্তু আমার ব্যথাটা একটু বেশি ছিল। আমি ইচ্ছে করলে খেলতে পারতাম। খেলতে পারতাম না যে তা না। আমি বলতে পারতাম যে আমি ফিট আছি, বসে বসে টাকা ঠিকই নেওয়া যেত।
তবে আমি আসলে ওরকম না, আমি আমার কাজ করে টাকা নিতে চাই। আমি আসলে যে দলের হয়েই খেলি যেন নিজের শতভাগটা দিতে পারি। এটাই চেয়ে আসছি সবসময়। আমি ফিফটি-ফিফটি ক্রিকেট খেলতে চাইনা।
মানে এই যে লম্বা একটা বিরতি এটার পুরোটাই চোটের কারণে?
আবুল হাসান রাজু: ইনজুরির কারণেই ছিল। আমার আবার দুইটা ইনজুরি, একটা হল অ্যাঙ্কেলের আরেকটা কোমরের স্পাইনাল কড। অ্যাঙ্কেলটা মোটামুটি ভালো দেখা যাচ্ছে এখন তবে স্পাইনাল কডটা বেশ ভোগাচ্ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেবার জাতীয় দলে ফিরলাম ঐ সময় পড়েছি অ্যাঙ্কেলের চোটে। আফগানিস্তান থেকে এসে আমি সরাসরি চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়াতে। আমি নিজের টাকা খরচ করে অপারেশন করিয়েছি।
এই সময়টায় স্কিল নিয়ে কাজ করতে পারছেন?
আবুল হাসান রাজু: হ্যাঁ আমি আমার স্কিল নিয়ে কাজগুলো করে যাচ্ছি। ভাই যারা ক্রিকেট একবার খেলে তাদের রক্তে সেটা মিশে যায়। এটা ছাড়া যায় না কখনো।
চোটের সাম্প্রতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় বিসিবি কোনোভাবে সম্পৃক্ত?
আবুল হাসান রাজু: না, এখন বিসিবি কোনোভাবে জড়িত না। বিসিবি আসলে আর কত দিবে আমাকে? প্রায় ৬ টা অপারেশন হল যেখানে তিনটার টাকা তারা আমাকে দিয়েছে। নিজের কাছে কেমন লাগে বার বার তাদের দ্বারস্থ হতে?
এমনিতে বিসিবির মেডিকেল বিভাগের সাথে যোগাযোগ আছে?
আবুল হাসান রাজু: হ্যাঁ আমি দেবাশীস (দেবাশীস চৌধুরী, বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) দাদাকে আমার সব আপডেটসগুলো দিচ্ছিলাম। আমি উনাকে জানিয়েছিও যে আমেরিকায় স্বাস্থ্য বীমাটা পেয়েছি। উনার কাছে জানতেও চেয়েছি কোনো ডাক্তারের কাছে যাবো, নিউ ইয়র্কে স্পোর্টসের জন্য কে ভালো কিংবা কোথায় কি আছে না আছে।
উনি আমাকে একজন ডাক্তারের ব্যাপারে জানিয়েছেও। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার খেলা থাকায় যাওয়া হয়নি। তবে এখন আমি আবার যেখানে যাবো সেখানেও দেবাশীষ দাদা যার কথা বলবে সেখানেই যাবো।
জিম্বাবুয়ে সফরে তাসকিন আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রেকর্ড গড়া ৯ম উইকেট জুটি আপনাকে আবারও আলোচনায় এনেছে। নিজে দেখেছেন ম্যাচটা?
আবুল হাসান রাজু: হ্যাঁ দেখেছি আমি। তাসকিন অসাধারণ ব্যাটিং করলো, রিয়াদ ভাইতো ছিলই। আসলে রিয়াদ ভাই আনলাকি, আমরা যারা লোয়ার অর্ডারে থাকি তাদেরকে নিয়ে উনার জুটি বাঁধতে হয় কিংবা উনাকে নিয়ে আমাদের জুটি গড়তে হয় (হাসি)। এটাই আসলে ক্রিকেট, বিশেষ করে তাসকিন দারুণ খেলেছে।
অভিষেকে ১০ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। রিয়াদের সাথে রেকর্ড জুটি গড়লেন। সেসব স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে পড়েছে?
আবুল হাসান রাজু: অনুভব করে আসলে আর কি হবে? অনুভব করতে করতে ১২ বছর তো কাটিয়ে ফেললাম (হাসি)। এখন চাই ফিট হয়ে নতুন উদ্যমে খেলতে, যতটুকু পারা যায়। আমার সাথের সবাইতো খেলছে। মুমিনুল (মুমিনুল হক), বিজয়রা (এনামুল হক) খেলছে, বিজয় হয়তো জাতীয় দলে নেই, সোহান (নুরুল হাসান) খেলছে।
আপনি চিন্তা করে দেখেন আমি জাতীয় দল থেকে দূরে সরেছি কেন? আমি কিন্তু পারফরম্যান্সের জন্য না, আমি জাতীয় দলের বাইরে চোটের কারণে। এসব জিনিসগুলো মাঝে মাঝে হয়তো অনেক কষ্ট দেয়। কষ্ট দিলেও কি হবে, বাস্তবতাতো মানতে হবে। সবকিছুর উর্ধ্বে হল আল্লাহর ইচ্ছে, উনি না চাইলে আমি যতই কাজ করিনা কেন লাভ হবে না।
এসব আপনাকে কতটা হতাশায় পোড়ায়? নিজের কোন ত্রুটি কি চোখে পড়ে?
আবুল হাসান রাজু: আমি যেটা জানি সমসাময়িকদের মধ্যে আমার চেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন কারও বেশি ছিল না। সময়মত ঘুমানো, খাওয়া, কাজ করা, ট্রেনারের কথা শোনা মানে সবকিছু। তারপরেও কেন এত ইনজুরি আসে আমি জানিনা। হয়তো আমার শারীরিক গঠনই এমন… তবে আমি আশাহত নই, আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো। যতদিন পর্যন্ত আমার শক্তি আছে আমি চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ।
আমেরিকায় টুর্নামেন্ট খেলতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এখন সেখানে অবস্থান করছে। ইলিয়াস সানি, সোহরাওয়ার্দী শুভদের সাথে দেখা হয় কিনা?
আবুল হাসান রাজু: ওরা থাকে নিউ জার্সিতে, আমি থাকি ভার্জিনিয়াতে। আমি প্রায় সময় বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে খেলি। এখানে ডাইভারসিটি নামক একটা টুর্নামেন্ট আছে, অনেক বড়। পাকিস্তান, ক্যারিবিয়ান, ভারতের অনেক খেলোয়াড় আসে। এইতো কিছুদিন আগে আমি যে দলে খেলেছি সেটা হল এশিয়া ইউনাইটেড, আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা এতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট যে আমার কাছে মনে হয়েছে বিপিএল খেলছি।
পরিচিত বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে কারা আছে?
আবুল হাসান রাজু: চ্যাডউইক ওয়ালটন, জন ক্যাম্পবেল সহ সিপিএলের অনেক খেলোয়াড় ছিল। পাকিস্তানের রিজওয়ান চিমা, মোহাম্মদ আসিফ, নাজাফ শাহ ভারতের মিলিন্ড কুমার খেলেছে, যে আইপিএলেও খেলে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আলোচিত ১০ সিনেমা যেখানে নায়ক-নায়িকা সত্যি মিলিত হয়েছেন
- ভারতের সাবেক স্পিনার দিলীপ দোশী মারা গেলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে
- ভয়াবহ অন্ধকারে ঢাকার একাংশ
- আ. লীগের কার্যক্রম স্থগিত, নিষিদ্ধ করা হয়নি: ড. ইউনূস
- বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা দিল ডিএসই
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: শান্ত-নিসাঙ্কার সেঞ্চুরিতে ড্র টেস্ট
- শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ: বৃষ্টির কারণে বন্ধ দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ
- শান্তর পদত্যাগ, নতুন টেস্ট অধিনায়কত্বে এগিয়ে যিনি
- বিনিয়োগকারীদের নজর কেড়েছে ৩ কোম্পানির শেয়ারে
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজরে পাঁচ কোম্পানি
- বাজারে সামগ্রিক মন্দার মাঝেও বস্ত্র খাতের ৫ কোম্পানির চমক
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: বাড়ল বিশেষ প্রণোদনা
- ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: খালেদা জিয়া যে তিন আসনে লড়তে পারেন
- ক্লাব বিশ্বকাপ: শেষ ষোলোতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষে মেসির ইন্টার মায়ামি
- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে ১ জুলাই থেকে, জেনে নিন কত টাকা