ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস: ষড়যন্ত্রের পেছনের শক্তি কারা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ২৭ ২০:০৩:১১
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস: ষড়যন্ত্রের পেছনের শক্তি কারা

চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চট্টগ্রামের আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে নানা প্রশ্ন ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

চিন্ময়, যিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ, তার গ্রেফতার এবং সৃষ্ট পরিস্থিতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনার ঝড় উঠেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিন্ময়ের পেছনে একটি সুসংগঠিত এবং প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক উসকানি, এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো একাধিক অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনাটি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক ঘটনায় তার অনুসারীদের মিছিল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং এপিপি সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারতের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়ে বলেন, "বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অবরোধ করা হবে।" তার এই বক্তব্যে ভারতের ভেতরে সমালোচনার ঝড় উঠলেও এটি বাংলাদেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি, যেখানে ‘উগ্রপন্থীদের’ দ্বারা সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে, সেটিও প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতের এমন অবস্থান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

চিন্ময়ের সঙ্গে ইসকনের যোগসূত্রও বিতর্কিত। যদিও তিনি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত, তার মুক্তির দাবিতে ইসকনের কিছু অংশ সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। এটি ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের পর থেকেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। চিন্ময় ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে।

চট্টগ্রামের ঘটনায় চিন্ময়ের অনুসারীদের মিছিলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ছয় নেতার উপস্থিতি এবং তাদের গ্রেপ্তার এটি স্পষ্ট করে যে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।

চিন্ময়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ছাড়াও জমি দখল, শিশু নিপীড়ন, এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। স্বাধীনতা স্তম্ভে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনাটি তার দীর্ঘদিনের বিতর্কিত কার্যকলাপের একটি অংশ।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যু একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। তার পেছনের শক্তিগুলো চিহ্নিত করা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দেওয়া যে, এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যেখানে বহিরাগত কোনো হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে