ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভালো না খারাপ হবে যা বললেন পিনাকী

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ২১:৩১:৩৭
পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভালো না খারাপ হবে যা বললেন পিনাকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নানা রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিকে ঘিরে সামাজিক বিশ্লেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য সম্প্রতি তার এক বক্তব্যে উত্থাপন করেছেন বেশ কিছু তীব্র প্রশ্ন ও ব্যাখ্যা—যা নীতিগত ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই আলোচনার দাবী রাখে।

‘বিএনপি কেন চায় না, আর অন্যরা কেন চায়?’

পিনাকীর মতে, “সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বিএনপি ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলই চায়, অথচ এই ব্যাপারে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।” তিনি বলেন, “বিষয়টা বোঝার জন্য গভীর পড়াশোনা দরকার। এটা এমন কিছু না যেটা কেবল কারিশমা কাপুরের ছবির মতো হুট করে মুখ ফসকে বলে দেওয়া যায়।”

তিনি দাবি করেন, “গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার গুজব ওঠার সময়ই এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। আমি তখন জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে বলেছিলাম, তারা স্লিপওয়াকিং (ঘুমের মধ্যে হাঁটা) করছে—ঘুম না ভাঙলে জেগে উঠবে না।”

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন আসলে কী?

পিনাকী বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করেন: “ধরুন, দেশে তিনশটি সংসদীয় আসনে মোট ভোট ১০ কোটির মতো। কোনো দল যদি ৩০ শতাংশ ভোট পায়, তবে তারা ৩০ শতাংশ সিট পাবে, এমনকি তারা সরাসরি কোনো আসন না জিতলেও।” এ পদ্ধতিতে ভোটার সরাসরি প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে একটি দলের মার্কায় ভোট দেন, ফলে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পর্ক কমে যায়।

ইউরোপীয় পদ্ধতির অন্ধ অনুকরণ নয়

পিনাকী বলেন, “অনেকে যুক্তি দেয় ইউরোপে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি আছে। তাই বাংলাদেশেও থাকা উচিত। কিন্তু পশ্চিমা দেশের সবকিছু কি আমরা অনুসরণ করি? সেক্যুলারিজম, এলজিবিটিকিউ অধিকার, মদ্যপান, ক্যাসিনো—এসব কি আমরা মেনে নিই? তাহলে শুধু ভোট পদ্ধতির ক্ষেত্রে কেন অনুকরণ?”

জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ও গোলাম আযমের বই

পিনাকী উল্লেখ করেন, জামায়াত ২০০১ সালেই এই পদ্ধতির পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। দলটির সাবেক আমির গোলাম আযম তার এক বইতে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষ সমর্থন করেন। জামায়াতের যুক্তি—এতে ছোট দলগুলোর জন্য জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ে এবং “টাকার খেলা বন্ধ হয়।”

তবে পিনাকী এ যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “এই পদ্ধতিতেও টাকা খরচ হবে। বরং দলীয় মনোনয়নের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, ফলে সেন্ট্রাল লিডারশিপের কাছে আনুগত্য না থাকলে আপনি প্রার্থীই হতে পারবেন না। নির্বাচনের মাঠে খরচ না হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে খুশি করতে হবে। অর্থাৎ, নতুন ধরণের লেনদেন তৈরি হবে।”

স্থানীয় নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের সংকট

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রার্থী মনোনয়ন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হওয়ায় স্থানীয় নেতৃত্বের গুরুত্ব হ্রাস পাবে বলে মনে করেন পিনাকী। এতে স্থানীয় পর্যায়ের জবাবদিহিতা এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কের জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনপ্রিয়তা নয়, বরং দলের ভেতরকার রাজনীতিই সংসদ সদস্য হওয়ার প্রধান যোগ্যতা হয়ে উঠবে।

‘পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট’ বা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত

পিনাকী পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট মোস্তাক আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “রাজনীতি মানেই নির্বাচনী মাঠ না। এটা একধরনের বোঝাপড়ার জায়গা, যেটা বলে কে ক্ষমতায় থাকবে, কে টাকা খাবে, কে নিরাপদ থাকবে।” এই বোঝাপড়াই বাস্তব রাজনীতির নিয়ামক। আর এই অদৃশ্য চুক্তিতে জড়িত থাকে রাজনৈতিক দল, আমলা, ব্যবসায়ী, পুলিশ, বিচারপতি, এমনকি মিডিয়া ও সমাজের এলিট শ্রেণী।

পিনাকীর এই বক্তব্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একটি গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই পদ্ধতি বাংলাদেশের মতো নেতৃত্ব-কেন্দ্রিক, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীন রাজনৈতিক কাঠামোয় আদৌ কার্যকর হবে কি না? রাজনৈতিক দলগুলো এই পদ্ধতির পক্ষে বা বিপক্ষে যাই বলুক, বিষয়টি নিয়ে দেশের নাগরিক সমাজ, বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের আরও গভীর আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

FAQ ও উত্তর:

প্রশ্ন: সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন কী?

উত্তর: সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এমন একটি পদ্ধতি যেখানে দলগুলো প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পায়, প্রার্থী নয় বরং দলের মার্কায় ভোট দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: পিনাকী সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিপক্ষে কেন?

উত্তর: তিনি মনে করেন এতে দলীয় কেন্দ্রীকরণ বাড়বে, স্থানীয় নেতৃত্ব দুর্বল হবে এবং জনগণের সরাসরি ভোটের ক্ষমতা কমে যাবে।

প্রশ্ন: কোন দলগুলো এই পদ্ধতি চায় এবং কেন?

উত্তর: বিএনপি ছাড়া প্রায় সব দল চায়, বিশেষ করে জামায়াত মনে করে এতে ছোট দলগুলো প্রতিনিধিত্ব পাবে এবং টাকার প্রভাব কমবে।

প্রশ্ন: এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: দলীয় মনোনয়নের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নেবে কে সংসদে যাবে, যা অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র হ্রাস করবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

তিন কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা

তিন কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি সম্প্রতি ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গ্রামীণফোন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ১১০ শতাংশ... বিস্তারিত