ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কি আদৌ অসম্ভব

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ০৯ ১৪:৩৬:১০
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কি আদৌ অসম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক:বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগের প্রধান শীর্ষ নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বিশেষ করে ভারতেই অনেক নেতার আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্ররা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন চলছে। গতকাল ‘যমুনা’ বাসভবনের সামনে ছাত্র ও এনসিপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন এবং এই দাবিতে জোরালো সমর্থন জানান।

তবে প্রশ্ন ওঠে—আওয়ামী লীগকে আদৌ নিষিদ্ধ করা সম্ভব কি না? বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি বেশ জটিল। দেশের প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ জনগণ এখনও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এই বিপুল জনগণের সমর্থিত একটি দলকে নিষিদ্ধ করা কি আদৌ বাস্তবসম্মত হবে? এই প্রশ্নে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

তবে কিছু কারণ রয়েছে, যার ফলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বংস:আওয়ামী লীগের আমলে দেশের বড় মোগা প্রকল্পগুলোর নামে যে লুটপাট এবং পাচার হয়েছে, তা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। এই প্রকল্পগুলোতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ এবং একাধিক কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে চরম দুর্দশার দিকে নিয়ে গেছে।

২. ভারতীয় প্রভাব ও দেশের সার্বভৌমত্ব:

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ মানুষের হত্যার ঘটনায় সরকার মৌন ভূমিকা পালন করেছিল। এই পরিস্থিতি সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের আগ্রাসন আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

৩. গুম, খুন, হত্যা:

সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই অনেকের গুম, খুন বা হত্যা করা হতো। গণঅভ্যুত্থানের সময় এই বিষয়গুলো আরো প্রকাশ্যে চলে আসে এবং ছাত্ররা এর প্রতিবাদ জানায়। সরকার বিরোধী কণ্ঠরোধ করার জন্য নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পায়, যার প্রমাণ গণঅভ্যুত্থানের সময় দেখা যায়।

৪. ফ্যাসিবাদী মনোভাব:

হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাদের ফ্যাসিবাদী মনোভাবকে প্রশ্রয় দিয়েছে, যা জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানো, আন্দোলন দমন করার জন্য হত্যাযজ্ঞ চালানো এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমশই স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল।

এই কারণে, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে। এর ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকার ফ্যাসিবাদী মনোভাব নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে।

তবে, অনেক রাজনীতিবিদ মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দেশের ৩৫-৪০ শতাংশ জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হবে। এত বড় জনগণের সমর্থিত একটি দলকে নিষিদ্ধ করলে, তা দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। তাই, তাদের মতে, পুরো দল নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, যেসব নেতা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় আনাই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত হবে।

এতসব রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্দোলনের পর, এখন দেখার বিষয় হল সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। জনগণের ব্যাপক সমর্থন এবং দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য হতে পারে, তা সময়ই বলে দিবে।

FAQ ও উত্তর:

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হচ্ছে?

উত্তর: না এখনো সরকারিভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা কোথায় আছেন?

উত্তর: গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

প্রশ্ন: ছাত্রলীগ কি নিষিদ্ধ হয়েছে?

উত্তর: হ্যাঁ ছাত্র আন্দোলনের চাপে তা ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় পালিয়েছেন?

উত্তর: বেশিরভাগই ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ