ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ: সরকারি প্রজ্ঞাপনে যা উল্লেখ করা হয়েছে

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৭:৫৫:০৯
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ: সরকারি প্রজ্ঞাপনে যা উল্লেখ করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হলো আজ, যখন সরকার একটি অপ্রত্যাশিত এবং শঙ্কামূলক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে আজ, সোমবার এ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়, যা দ্রুত কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত, আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিরোধী দলের সদস্য ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নির্যাতন, গুম, খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠে এসেছে দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে।

এছাড়া, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন—এসব অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘‘আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার কারণে বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার চেষ্টা চলছে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো জটিল করতে পারে।’’

এ কারণে, সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর আওতায় সরকার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ বা সম্মেলন আয়োজন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের পেছনে আরও একটি শক্তিশালী কারণ দাঁড়িয়ে আছে—সরকারের দাবি, আওয়ামী লীগ এবং এর সংগঠনগুলো জনমনে ভীতি সঞ্চার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতার উদ্দেশ্যে নানা বেআইনি কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের পর, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। সরকার যে একদিকে আইনগত এবং সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সভায় গত শনিবার এ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয় এবং আজই তা কার্যকর হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এদিকে, আগামী দিনগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞার ফলাফল কি হবে, তা দেখার অপেক্ষা থাকবে, তবে এটি স্পষ্ট যে দেশের রাজনীতি আর আগের মতো সহজ থাকবে না।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ