ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্রেকিং নিউজ:

সেনানিবাসে আশ্রয় পাওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২২ ২২:৫৮:১৬
সেনানিবাসে আশ্রয় পাওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যখন রাস্তায় আগুন, রাজপথে গুলির শব্দ, আর চারদিকে আতঙ্কের ছায়া—তখনই জীবনের নিরাপত্তা খুঁজে মানুষ ছুটেছিল বাংলাদেশের সেনানিবাসের দিকে।

গত বছরের সেই উত্তাল জুলাই-আগস্ট—ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের। কিন্তু এর পরপরই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে অস্থিরতা, ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা আর আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয়। ঠিক তখনই, প্রাণ বাঁচাতে কেউ কড়া নাড়েন ক্যান্টনমেন্টের গেটে, কেউ যান পরিচিত সেনা কর্মকর্তার শরণে। মানবিকতার প্রশ্নে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী সাড়া দেয়—দরজা খোলে, আশ্রয় দেয়।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে। সেনাবাহিনী বলেছে, এ তালিকা শুধু নামের খতিয়ান নয়, একটি অস্থির সময়ের সাক্ষ্য।

কারা ছিলেন সেই তালিকায়?

সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সাময়িক আশ্রয় পাওয়া ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন—

২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি

৫ জন বিচারক

১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা

৫১৫ জন পুলিশ সদস্য

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী

১২ জন অন্যান্য শ্রেণির নাগরিক

এবং ৫১ জন নারী ও শিশু—তাদের পরিবারবর্গ

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের পূণাঙ্গ তালিকা দেখুন নিচে

তালিকাটি কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এর প্রতিটি নাম একেকটি জীবনের গল্প, ভয়ের মুহূর্তে বেঁচে থাকার আকুতি।

সময়ের দাবি, মানবিক সিদ্ধান্ত

সেনাবাহিনীর ভাষায়, সেসময় পরিচয় যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না, ছিল শুধু একটাই কর্তব্য—প্রাণ রক্ষা। তাদের এই মানবিক অবস্থানই নিশ্চিত করে যে, অস্ত্রধারী বাহিনী শুধু যুদ্ধ করে না, প্রয়োজনে জীবনও বাঁচায়।

অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থী ১ থেকে ২ দিনের মধ্যেই ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে যান। কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় মাত্র ৫ জনকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ১৯৩ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ৪৩২ জন পুলিশ ও ১ জন এনএসআই সদস্য বাদ দিয়ে বাকি ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার—জনগণের আস্থা নষ্ট করা, অবিশ্বাসের দেয়াল তোলা। সেনাবাহিনী বলেছে, “আমরা ক্ষুব্ধ, কিন্তু শান্ত। সতর্ক, কিন্তু মানবিক। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় আমরা সদা প্রস্তুত।”

সেনাবাহিনীর আহ্বান

বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে সেনাবাহিনী আবারও জাতিকে আশ্বস্ত করে, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর। বিভ্রান্তি নয়, সত্যের পক্ষে থাকুন।”

এই তালিকা কেবল নামের নয়, দায়িত্বের

আজ যে তালিকা আমরা দেখছি, সেটি কোনো গোপন নথি নয়—বরং একটি সৎ ও সাহসী ঘোষণার দলিল। যে সময়টায় সবাই নিরাপত্তা চেয়েছিল, সেনাবাহিনী সেই চাহিদার উত্তর দিয়েছিল মানবিকতার হাত বাড়িয়ে।

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের পূণাঙ্গতালিকা দেখুন নিচে

FAQ (প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন ১: এই ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থী কারা ছিলেন?

উত্তর: এদের মধ্যে ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, ১২ জন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এবং ৫১ জন পরিবারবর্গ (নারী ও শিশু) ছিলেন।

প্রশ্ন ২: সেনাবাহিনী কেন আশ্রয় দিয়েছিল?

উত্তর: আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির সময় প্রাণ রক্ষার জন্য মানবিক বিবেচনায় তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া হয়।

প্রশ্ন ৩: তালিকাটি এখন কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ তালিকায় সবার নাম ও পরিচয় উল্লেখ রয়েছে।

প্রশ্ন ৪: কেউ কি এই তালিকায় থাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে?

উত্তর: হ্যাঁ, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে, যার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ