ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আজ ভূটানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ, জেনে নিন সময়

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৪ ১৪:১০:০২
আজ ভূটানের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ, জেনে নিন সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৬৫৯ দিন—সময়টা কম নয়। এই দীর্ঘ বিরতিতে কতো কিছু বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি একটিই অপেক্ষা—ফিরে আসার। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে আজ, সন্ধ্যা ৭টায়। ফুটবল ফিরছে তার ‘ঘরে’, ফিরছে দেশের ক্রীড়ার ইতিহাস-গাঁথা মঞ্চে—ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

২০২১ সালের জুলাইয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু হলে থেমে গিয়েছিল এখানকার ফুটবল চাকা। তবু দর্শকের মনে ছিল সেই পুরোনো দিনের ঢেউ—যেখানে একসময় গর্জে উঠত আবাহনী-মোহামেডান, ফুটবল রাজপুত্রেরা লড়ত গ্যালারিভর্তি সমর্থকদের সামনে, যেখানে আমিনুলরা তুলেছিলেন সাফের ট্রফি, আর জিদান-মোহাম্মদ আলীর মতো কিংবদন্তিরাও রেখেছেন পায়ের ছাপ।

আজ সেই ঐতিহ্যের ভেতরেই শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে ভুটানের। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস। এই ম্যাচ শুধু ৯০ মিনিটের খেলা নয়, এটি ফিরে পাওয়ার গল্প। এই মাঠে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে নেপালের বিপক্ষে। এরপর শুধু নীরবতা আর সংস্কার।

দফায় দফায় বাড়ে বাজেট, সময়ও পেরিয়ে যায় বছর তিনেক। অবশেষে ১৫৮ কোটি টাকায় ফ্লাডলাইট, গ্যালারি, ট্র্যাক, প্রেসবক্সসহ নানা আধুনিকায়নের পর প্রস্তুত নতুন রূপে দেশের ‘হোম অব ফুটবল’। এবার স্টেডিয়ামের গ্যালারির ছাদেই বসানো হয়েছে আলো—এমন প্রযুক্তির প্রথম স্বাদ নিচ্ছে বাংলাদেশ। গ্যালারি, সংবাদমাধ্যম, ফুটবলার—সবার চোখে একটাই প্রশ্ন: এতদিন পর এই মাঠে কেমন ফুটবল উপহার দিতে পারবে লাল-সবুজ?

এই ম্যাচ দিয়েই ‘হোম’ অভিষেক হচ্ছে জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার। বাংলাদেশে কোচিং করাচ্ছেন তিন বছরের বেশি সময় ধরে, কিন্তু আজই প্রথম জাতীয় স্টেডিয়ামে দাঁড়াবেন মাঠের পাশে। তার কণ্ঠেও উত্তেজনা, ‘মাঠটা নতুন হলেও এর ঐতিহ্য আমাদের অজানা নয়। আমরা অনুশীলন করেছি, এখন সময় মাঠে প্রমাণ করার।’

শুধু হ্যাভিয়ের নন, শেখ মোরসালিন, মিতুল মারমাসহ বেশ কিছু তরুণ ফুটবলারও আজই প্রথমবার নামবেন জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাসে। তাদের অনেকেই বড় হয়েছেন কিংস অ্যারেনার পরিবেশে। বসুন্ধরা কিংসের ঘরের মাঠই হয়ে উঠেছিল দেশের অলিখিত হোম ভেন্যু। কিন্তু এখনকার চ্যালেঞ্জ ভিন্ন—এটা ইতিহাসের মঞ্চ, এখানে শুধু খেললেই হবে না, রেখে যেতে হবে ছাপ।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন যৌথভাবে ব্যবহার করে এই ভেন্যু। অ্যাথলেটিক্সের জাতীয় প্রতিযোগিতা হয়েছে, অনুশীলন করেছে নারী দল, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাইনাল ম্যাচও হয়েছে এই মাঠে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল? ২০২১ সালের পর আর হয়নি একটিও। আজ সেই দীর্ঘ নিস্তব্ধতায় ফুটবল ফেরাচ্ছে তার নিজের শব্দ।

জাতীয় স্টেডিয়াম মানেই তো শুধু ফুটবল নয়—এটা বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের ভেন্যু, শততম ওয়ানডে জয়ের সাক্ষী, বিশ্বকাপের উদ্বোধন দেখা মাঠ। আবার এটাই সেই মঞ্চ, যেখানে একদিন এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী, বাজিয়েছেন হৃদয়ের ঘণ্টা। এবার সেই মঞ্চেই দায়িত্ব পড়েছে নতুন প্রজন্মের—হামজা, জামাল, সাদ, মোরসালিনদের ওপর। তারা কি পারবে পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে?

গ্যালারি নতুন, আলো ঝলমলে, মাঠ প্রস্তুত। আজকের এই ম্যাচ সেই গল্পের প্রথম লাইন। বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এ যেন আবার জন্ম নেওয়া। ইতিহাসের এই ভেন্যুতে ফিরছে ফুটবল, আর ফুটবলের ভেতর দিয়ে ফিরছে এক দেশ, এক সময়, এক স্বপ্ন।

আলো জ্বলে উঠেছে, এবার সময় গোলপোস্টে নিশানা ঠিক করার।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ