ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয় পতাকা পরিবর্তন: যা জানালেন প্রেস উইং

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৫ ১২:১৩:৫০
জাতীয় পতাকা পরিবর্তন: যা জানালেন প্রেস উইং

নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক প্রযুক্তির যুগে গুজব ছড়ানো যত সহজ, তত দ্রুত তা জনমনে দোলা দেয়। সম্প্রতি এমনই এক গুজব ছড়িয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে। বলা হচ্ছে, সরকার নাকি পতাকায় পরিবর্তন আনতে চায়—জুড়তে চায় ইসলামি প্রতীক চাঁদ-তারা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই গল্প পুরোটাই মনগড়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

প্রেস উইং তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘CA Press Wing Fact’ হেডলাইনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা, আলোচনা বা চিন্তাভাবনা সরকারের নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ছবি ও তথ্য সবই গুজব।”

গুজবের সূত্রপাত হয়েছে একটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি পতাকার ছবি থেকে। সেই ছবিতে জাতীয় পতাকার মাঝখানে যোগ করা হয়েছে চাঁদ ও তারা। দাবিটি করা হয়েছে এমনভাবে, যেন বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তান ও তুরস্কের অনুকরণে ইসলামি প্রতীক গ্রহণ করতে যাচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ছবিটি। দেখা হয়েছে প্রায় ১০ লাখের বেশি বার।

প্রেস উইং বলছে, “এই ভাইরাল ছবির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার, যার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার অপচেষ্টা চলছে।”

ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য ডিসেন্ট’ জানিয়েছে, এই গুজব ছড়ানোর পেছনে রয়েছে এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ পরিচিত পাকিস্তানপন্থি দুটি অ্যাকাউন্ট—@SouthAsiaIndex ও @AsianDigest। তারা ৪ জুন প্রথম ওই ভুয়া পতাকার ছবি শেয়ার করে। এরপর একটি মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি হয়, যার শিরোনাম ছিল,“বাংলাদেশ তার পতাকায় পাকিস্তান ও তুরস্কের অনুকরণে ইসলামি চাঁদ যোগ করার কথা ভাবছে।”প্রতিবেদনটি ছিল পুরোপুরি এআই দিয়ে তৈরি—নেই কোনো লেখকের নাম, নেই সূত্র বা প্রমাণ।

আরও ভয়ংকর হলো, সেই গুজবে জড়ানো হয়েছে দেশের রাজনীতির প্রভাবশালী নামও। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ব্যবহার করে বানানো হয়েছে ভুয়া কনটেন্ট। অথচ ১৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম বা সরকারি সূত্রে এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি।

প্রেস উইং সাফ জানিয়ে দিয়েছে, “জাতীয় পতাকা নিয়ে দেশে কোনো আন্দোলন নেই, এবং সরকারও এ বিষয়ে এক বিন্দু পরিকল্পনাও করেনি। এটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা, যাতে জাতীয়তাবোধ ও ধর্মীয় আবেগকে উসকে দিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা যায়।”

তারা আরও আহ্বান জানিয়েছে সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে:“তথ্য যাচাই করুন, তারপর শেয়ার করুন। গুজব থামান, সত্য প্রতিষ্ঠা করুন।”

পতাকা শুধু এক টুকরো কাপড় নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। সেই পরিচয়ের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলতে চাওয়া মানে জাতির আবেগ নিয়ে খেলানো। প্রযুক্তির যুগে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা—এই দুটোই পারে এমন গুজবের মুকাবিলা করতে।

স্মরণে রাখা জরুরি, গুজব কখনো সত্য হয় না, আর সত্য কখনো গুজবে চাপা পড়ে না।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ