ঢাকা, শনিবার, ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ ভাদ্র ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

সন্তান ধারণের সেরা সময়: ৪টি কার্যকর পদ্ধতি

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ৩০ ১৫:০৭:৪৩
সন্তান ধারণের সেরা সময়: ৪টি কার্যকর পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আপনার শরীরের উর্বর সময় বা 'ফারটাইল উইন্ডো' সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে সহবাসের মাধ্যমে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। নিচে চারটি কার্যকর পদ্ধতি আলোচনা করা হলো, যা আপনাকে আপনার ফারটাইল উইন্ডো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

১. শ্বেতস্রাব পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি

নারীদের মাসিক চক্রে শ্বেতস্রাবের চারটি ভিন্ন অবস্থা দেখা যায়, যা উর্বরতার ইঙ্গিত দেয়:

প্রথম অবস্থা: মাসিকের ঠিক পর যখন কোনো শ্বেতস্রাব থাকে না এবং যোনিপথ শুকনো অনুভূত হয়, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় ০.৩% থাকে।

দ্বিতীয় অবস্থা: যোনিপথ হালকা ভেজা মনে হলেও চোখে শ্বেতস্রাব দেখা যায় না বা হাতে ধরা যায় না। এই সময় গর্ভধারণের সম্ভাবনা ১.৩% এ উন্নীত হয়।

তৃতীয় অবস্থা: ঘন ও আঠালো শ্বেতস্রাব নির্গত হয়, যা আঙুলে লেগে থাকে। এই অবস্থায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে ২.৫% হয়।

চতুর্থ অবস্থা: এই সময়ে শ্বেতস্রাব খুব পাতলা, পিচ্ছিল ও স্বচ্ছ হয়, অনেকটা কাঁচা ডিমের সাদা অংশের মতো। এটি দুই আঙুলে টেনে কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত বড় করা যায় এবং ভাঙে না। এই অবস্থাই গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উর্বর, যেখানে সম্ভাবনা ২৮.৬% বা প্রায় ৩০% পর্যন্ত পৌঁছায়।

তৃতীয় অবস্থা শুরু হওয়ার দিন থেকে চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পরের তিন দিন পর্যন্ত সহবাসের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

২. শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ পদ্ধতি (বেসাল বডি টেম্পারেচার বা বি.বি.টি)

ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময় (ওভুলেশন) নারীর শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায় (প্রায় ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। টানা ছয় দিন কম তাপমাত্রা থাকার পর যদি টানা তিন দিন বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ডিম্বাণু নির্গত হয়েছে। এই উচ্চ তাপমাত্রা শুরু হওয়ার তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফারটাইল উইন্ডো থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী:

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিছানায় থাকা অবস্থাতেই মুখের তাপমাত্রা মাপুন।

প্রতিদিন একই সময়ে তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা করুন।

সাধারণ থার্মোমিটারের পরিবর্তে ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করুন, যা সুক্ষ্ম পরিবর্তন ধরতে সক্ষম।

এই পদ্ধতিতে ফারটাইল উইন্ডো কখন শুরু হয় তা বোঝা না গেলেও, কখন শেষ হচ্ছে তা জানা যায়। তাই শ্বেতস্রাব পদ্ধতির সঙ্গে এটি মিলিয়ে ব্যবহার করলে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যায়।

সন্তান ধারণের জন্য উর্বর সময়ের গুরুত্ব

নারীর শরীরে দুটি ডিম্বাশয় থাকে, যেখানে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে, যাকে ওভুলেশন বলে। এই ডিম্বাণুটি তখন সন্তান ধারণে সক্ষম থাকে। যদি ডিম্বনালীতে আগে থেকেই পুরুষের শুক্রাণু উপস্থিত থাকে, তাহলে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে গর্ভধারণ সম্ভব হয়।

পুরুষের শুক্রাণু নারীর দেহে সাধারণত ৩ দিন এবং কিছু ক্ষেত্রে ৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু ডিম্বাণু সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা কার্যকর থাকে। তাই ডিম্বাণু বের হওয়ার আগের কয়েকদিন সহবাস করলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর জন্য অপেক্ষা করতে পারে, যা গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। এই সময়টিই হলো ফারটাইল উইন্ডো।

৩. স্ট্যান্ডার্ড ডেইজ মেথড

এই পদ্ধতিটি নিয়মিত মাসিক হয় এমন নারীদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের মাসিক চক্র ২৬ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে থাকে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী, মাসিক শুরু হওয়ার অষ্টম দিন থেকে উনবিংশ দিন পর্যন্ত সময়কে ফারটাইল উইন্ডো ধরা হয়। তবে এটি তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরযোগ্য, তাই অন্যান্য পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা ভালো।

৪. ক্যালেন্ডার পদ্ধতি

এই পদ্ধতিটি কিছুটা জটিল হলেও কার্যকর। অন্তত ছয় মাস ধরে আপনার মাসিকের তারিখ ক্যালেন্ডারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। মাসিকের প্রথম দিনটিকে সাইকেলের প্রথম দিন হিসেবে ধরে, প্রতিটি চক্রের দৈর্ঘ্য হিসাব করুন।

ফারটাইল উইন্ডো বের করার নিয়ম:

শুরুর দিন: আপনার রেকর্ড করা মাসিক চক্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাইকেলটি থেকে ১৮ দিন বিয়োগ করুন। যে সংখ্যাটি পাবেন, মাসিকের প্রথম দিন থেকে সেটিই আপনার ফারটাইল উইন্ডোর শুরুর দিন।

শেষের দিন: আপনার রেকর্ড করা মাসিক চক্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লম্বা সাইকেলটি থেকে ১১ দিন বিয়োগ করুন। যে সংখ্যাটি পাবেন, সেটিই আপনার ফারটাইল উইন্ডোর শেষ দিন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল ২৬ দিনের হয়, তাহলে ফারটাইল উইন্ডো শুরু হবে (২৬-১৮=) অষ্টম দিনে। আর যদি সবচেয়ে লম্বা সাইকেল ৩৩ দিনের হয়, তাহলে ফারটাইল উইন্ডো শেষ হবে (৩৩-১১=) বাইশতম দিনে। অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে আপনার ফারটাইল উইন্ডো হলো মাসিকের অষ্টম দিন থেকে বাইশতম দিন পর্যন্ত।

সাধারণ ভুল এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

মাসিক শেষ হওয়ার দিন থেকে নয়, মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে হিসাব শুরু করতে হবে।

পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার দিনটি নতুন চক্রের অংশ, এটি পূর্ববর্তী চক্রের দৈর্ঘ্যের মধ্যে ধরা যাবে না।

সবার ফারটাইল উইন্ডো একই সময়ে আসে না, এমনকি একই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মাসে মাসে ভিন্ন হতে পারে। তাই নিজের শরীরের লক্ষণগুলো, যেমন তাপমাত্রা ও শ্বেতস্রাবের দিকে খেয়াল রাখলে উর্বর সময়টি আরও ভালোভাবে চিনতে পারবেন।

কোনো একটি পদ্ধতি এককভাবে নির্ভুল ফল দিতে পারে না। তবে, কয়েকটি পদ্ধতিকে সমন্বয় করে অনুসরণ করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

মনে রাখবেন: নিয়মিত সহবাস, অর্থাৎ এক দিন বা দুই দিন পর পর সহবাস করলে এক বছরের মধ্যে ৮০% এরও বেশি দম্পতি সফল হন। তাই তিন-চার মাস চেষ্টা করে সফল না হলে ঘাবড়ে না গিয়ে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান।

এক বছর নিয়মিত চেষ্টা করার পরও সফল না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি নারীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে ছয় মাস চেষ্টা করার পরই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

জামিরুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ