ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

দৈনিক কখন কয়টি খেজুর খাবেন জেনে নিন সঠিক নিয়ম

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৪:৫৭:২৬
দৈনিক কখন কয়টি খেজুর খাবেন জেনে নিন সঠিক নিয়ম

খেজুর, বহু শতাব্দী ধরে মানব সভ্যতার খাদ্যতালিকায় এক মূল্যবান সংযোজন। এই প্রাকৃতিক মিষ্টি ফলটি শুধু স্বাদে অতুলনীয় নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও অসাধারণ। ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং প্রাকৃতিক শর্করার এক সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে খেজুর শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, এর সমস্ত উপকারিতা পেতে হলে এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এর সঠিক ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

খেজুর গ্রহণের সঠিক পরিমাণ:

পুষ্টিবিদরা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই পরিমাণটি সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর। যদিও খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর, এর অতিরিক্ত সেবন ওজন বৃদ্ধি, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকলে খেজুরের পরিমাণ অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একজন ক্রীড়াবিদ তার বর্ধিত শক্তির প্রয়োজনে সামান্য বেশি খেজুর গ্রহণ করতে পারেন, যেখানে একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এর পরিমাণ সীমিত রাখা আবশ্যক।

কখন খাবেন খেজুর?

দিনের বিভিন্ন সময়ে খেজুর খেলে এর উপকারিতা ভিন্নভাবে কাজে লাগানো যায়:

সকালের নাশতায়: দিনের শুরুতে শক্তি ও কর্মোদ্দীপনা যোগাতে খেজুর অত্যন্ত কার্যকর। বাদাম বা দুগ্ধজাত দ্রব্যের সাথে খেলে এটি প্রোটিন ও ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস হয়ে ওঠে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।

খাবারের পর: খাবারের শেষে একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি ডেজার্ট হিসেবে খেজুর হজমে সহায়তা করে এবং খাবার পরবর্তী শক্তির মাত্রা বজায় রাখে।

ব্যায়ামের পর: দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার এবং পেশি কোষের ক্ষয়পূরণ ঘটাতে ব্যায়ামের পর খেজুর একটি আদর্শ পছন্দ।

খেজুর খাওয়ার বিবিধ উপায়:

খেজুর সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি এটিকে বিভিন্ন রূপে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়:

কাঁচা খেজুর: সবচেয়ে সহজ এবং পুষ্টি ধরে রাখার সর্বোত্তম উপায়।

স্মুদি: দুধ, দই, বাদাম এবং অন্যান্য ফলের সাথে মিশিয়ে তৈরি স্মুদি একটি পুষ্টিকর পানীয়।

সালাদে: কুচি করে কেটে সালাদের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা যায়।

চাটনি ও বার: স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে খেজুরের চাটনি বা লাড্ডু তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

সঠিকভাবে খেজুর সংরক্ষণ:

খেজুরের তাজা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। এটিকে ঠাণ্ডা, শুষ্ক ও বায়ুরোধী পাত্রে রাখা উচিত। ফ্রিজে রাখলে খেজুর দীর্ঘ সময় সতেজ থাকে। শুকনো খেজুর কক্ষ তাপমাত্রায় ভালো থাকলেও, অতিরিক্ত গরমে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে খেজুর:

ডায়াবেটিস: প্রাকৃতিক শর্করা বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খেজুর গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

গর্ভবতী নারী: গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া উপকারী হতে পারে, বিশেষত প্রসবকালীন সময়ে জরায়ুর পেশী শক্তিশালী করতে। তবে পরিমাণ নির্ধারণে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশু: শিশুদের জন্য খেজুর একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর স্ন্যাকস, তবে অল্প পরিমাণে দেওয়া উচিত।

কিডনি রোগী: খেজুরে পটাশিয়ামের উচ্চ মাত্রা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খেজুর খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খেজুর ও অন্যান্য খাবার:

পুষ্টিগুণ বাড়াতে খেজুরকে অন্যান্য খাবারের সাথেও গ্রহণ করা যায়:

বাদাম ও বীজ: এটি প্রোটিন, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের একটি আদর্শ উৎস।

দুধ ও দই: ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সহায়ক।

ওটমিল ও সিরিয়াল: সকালের নাশতায় এটি একটি পুষ্টিকর সংযোজন।

বিভিন্ন ধরণের খেজুরের বিশেষত্ব:

খেজুরের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, এবং প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণের জন্য উপযুক্ত করে তোলে:

মজাফতি খেজুর: উচ্চ শর্করা ও ফাইবার সমৃদ্ধ, সকালের নাশতায় শক্তির জন্য আদর্শ।

মেদজুল খেজুর: পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় ব্যায়ামের আগে ও পরে পেশী পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

দেগলেত নূর খেজুর: ফাইবার ও প্রোটিন বেশি থাকায় দুপুরের খাবারের সাথে হজমে সাহায্য করে।

বারহী খেজুর: মিষ্টি ও নরম হওয়ায় স্ন্যাকস হিসেবে দারুণ।

হাজ্জী খেজুর: রাতে ঘুমানোর আগে শরীর শীতল রাখতে এবং ভালো ঘুম আনতে সহায়ক।

খোদরী খেজুর: উৎসব ও বিশেষ অনুষ্ঠানে ডেজার্ট হিসেবে দারুণ।

সুক্কারি খেজুর: উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর।

খেজুর নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা:

১. অতিরিক্ত খেজুর ডায়াবেটিসের কারণ নয়, পরিমিত সেবনে কোনো ঝুঁকি থাকে না।

২. খেজুর খাওয়ার পর পানি পানে কোনো সমস্যা নেই, বরং এটি হজমে সহায়ক।

৩. শুধু রমজান মাসে নয়, খেজুর সারা বছরই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

৪. পরিমিত খেজুর ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন বাড়ায় না।

৫. খেজুর শুধুমাত্র মিষ্টি হিসেবে নয়, বিভিন্ন রান্না, সালাদ ও স্মুদিতেও ব্যবহার করা যায়।

৬. খেজুর সবসময় ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন হয় না, ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানেও ভালো থাকে।

৭. খেজুর অ্যাসিডিটি বাড়ায় না, বরং এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅ্যাসিড উপাদান থাকে।

৮. শিশুদের জন্য খেজুর একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস, তবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

৯. খেজুরে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১০. খেজুরের বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিগুণ ভিন্ন হতে পারে, তাই বিভিন্ন ধরণের খেজুর গ্রহণ করা উচিত।

খেজুর একটি অত্যন্ত উপকারী ফল, যা সঠিক নিয়ম মেনে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য বহুবিধ সুফল বয়ে আনতে পারে। এর পরিমিত সেবন, সঠিক সংরক্ষণ এবং ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থার দিকে খেয়াল রেখে এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি মূল্যবান সংযোজন হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত গ্রহণ বা কোনো বিশেষ স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতিতে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ