ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২

ঘুমের অনিয়মে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২১ ১৩:৫৯:১৭
ঘুমের অনিয়মে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতে দেরি করে ঘুমানো কিংবা সকালে দেরি করে ওঠা—এ যেন অনেকের নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট অনিয়মই নীরবে বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি? চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু কত ঘণ্টা ঘুমাচ্ছেন তাই নয়, বরং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগাও শরীরের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণার নতুন অনুসন্ধান

সম্প্রতি Journal of Epidemiology & Community Health-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুমের সময় একেবারেই এলোমেলো, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন কানাডার গবেষক জ্যাঁ-ফিলিপ শাপুট। তিনি জানান, প্রতিদিন ঘুম ও জাগরণের সময় বদলালে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বা বডি ক্লক ভেঙে যায়। এর ফলে হরমোন নিঃসরণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও বিপাকক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা সরাসরি ক্ষতি করে হৃদয়ের।

কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে?

গবেষণায় ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যাদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৭৯ বছর। তাদের ঘুমের ধরন অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়—

নিয়মিত ঘুম: যাদের ঘুমের সময় প্রতিদিন প্রায় একই (SRI ≥ ৮৭.৩)

মাঝারি অনিয়ম: সময়ের কিছুটা হেরফের আছে (SRI ৭১.৬–৮৭.৩)

অত্যন্ত অনিয়মিত: সময় সম্পূর্ণ এলোমেলো (SRI < ৭১.৬)

ফলাফল চমকে দেওয়ার মতো—

সবচেয়ে অনিয়মিত ঘুমের মানুষদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে ২৬%।

মাঝারি অনিয়ম থাকলে ঝুঁকি বেড়েছে ৮%।

আর যারা নিয়ম মেনে ঘুমান, তাদের ঝুঁকি ১৮% কম।

ঘুমের অনিয়ম কীভাবে ক্ষতি করে?

ঘুমের সঠিক সময় না থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়। এর প্রভাবে—

হরমোন নিঃসরণ হয় এলোমেলোভাবে

রক্তচাপের স্বাভাবিক ওঠানামা ব্যাহত হয়

বিপাকক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়

এসব মিলেই হৃদরোগ, স্ট্রোক কিংবা হার্ট ফেলের মতো জটিল রোগের আশঙ্কা বাড়ে।

সুস্থ থাকতে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি ছোট পরিবর্তনই ঘুমের নিয়ম মজবুত করতে সাহায্য করবে—

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা

ঘুমের আগে ভারী খাবার ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা

শোবার আগে মোবাইল ও স্ক্রিন টাইম কমানো

শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানো

একটি নির্দিষ্ট বেডটাইম রুটিন তৈরি করা

স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের ঘুম বিশেষজ্ঞ স্কট কুচার বলেন, “ঘুমের সমস্যার সমাধান শুরু হয় সকালে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারলেই বাকি সমস্যাগুলো সহজে সামলানো যায়।”

দিনে ঠিক মতো কাজ করার শক্তি, সুস্থ হৃদয়, এমনকি দীর্ঘায়ু—সব কিছুর চাবিকাঠি হলো নিয়মিত ঘুম। তাই আজ থেকেই ঠিক করুন, শুধু কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন তা নয়, বরং কখন ঘুমাচ্ছেন—সেটিই আপনার সুস্থতার আসল রহস্য।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ