ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

কিডনি সুরক্ষায় সচেতনতা: নীরব ঘাতকের উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ১০:০৯:০৯
কিডনি সুরক্ষায় সচেতনতা: নীরব ঘাতকের উপসর্গ ও প্রতিরোধের উপায়

কিডনি, মানবদেহের এক অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। তবে প্রায়শই এর রোগগুলো নীরবে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক কিডনি রোগীই কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ অনুভব করেন না, অথবা যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলোকে সাধারণ অসুস্থতা ভেবে উপেক্ষা করা হয়।

এই অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে কিডনির ক্ষতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং রোগ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে, তখন এর গুরুতর প্রকাশ ঘটে। তাই এই নীরব ঘাতকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সময় মতো পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান কিডনি রোগের বিভিন্ন উপসর্গ এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, কেবল প্রস্রাব স্বাভাবিক হলেই কিডনি সুস্থ আছে এমনটা ধরে নেওয়া ভুল। প্রস্রাব-সম্পর্কিত উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু শারীরিক পরিবর্তন কিডনি রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।

কিডনি রোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা সংকেত:

১. প্রস্রাবের পরিমাণে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন: স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য ২৪ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। এই মাত্রার বাইরে কোনো তারতম্য দেখা দিলে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। যদিও তরল খাবার গ্রহণ বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (যেমন: চা, কফি, চকলেট) বেশি পান করার কারণে প্রস্রাবের পরিমাণে সাময়িক পরিবর্তন আসতে পারে, তবে জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও এমন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

২. প্রস্রাবে রক্ত বা অতিরিক্ত ফেনা: প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা দেখা দিলে তা কিডনি রোগের গুরুতর লক্ষণ হতে পারে। প্রস্রাবে ফেনা অনেকটা ডিম ফেটানোর মতো দেখায়, যা সাধারণত শরীর থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এই দুটি লক্ষণকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক সময় মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণেও প্রস্রাবে রক্ত যেতে পারে, তবে এর সঠিক কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. শরীরে অস্বাভাবিক পানি জমা: চোখ, পা বা হাতে পানি আসা কিডনি রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে বিশ্রামের পরও এই ফোলাভাব কমে না এবং হাত বা পা উঁচু করে রাখলেও দ্রুত তা আবার ফিরে আসে। রোগের তীব্রতা বাড়লে ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।

৪. বমিভাব, বমি এবং ক্ষুধামন্দা: কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী বমিভাব, বমি এবং খাবারে অরুচি কিডনি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা: কারণবিহীন অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা কিডনি রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাজে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন এবং ক্লান্তি সত্ত্বেও ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করেন।

৬. পেশি ব্যথা এবং ত্বকের সমস্যা: পেশিতে অস্বাভাবিক ব্যথা, ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যাওয়া অথবা চুলকানির মতো সাধারণ লক্ষণগুলোও কিডনি রোগের পূর্বাভাস হতে পারে।

কিডনি সুরক্ষায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা অপরিহার্য:

ডা. মতলেবুর রহমান সতর্ক করে বলেন, কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ না থাকলেও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা নেই। তাই ৪০ বছর বয়স পেরোলে একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিবছর অন্তত একবার কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করানো উচিত। রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।

তবে, যাদের কিডনি রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা পারিবারিক ইতিহাস), তাদের অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিডনির বিস্তারিত পরীক্ষা করানো উচিত। এসব ক্ষেত্রে শুধু ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক অন্যান্য বিশেষায়িত পরীক্ষাও করাতে পারেন। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা কিডনির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ