ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিয়ের আগে সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য ৫টি অপরিহার্য পরীক্ষা করানো জরুরি

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৮:৩৫:১৩
বিয়ের আগে সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য ৫টি অপরিহার্য পরীক্ষা করানো জরুরি

বিবাহ বন্ধন মানে শুধু দুটি হৃদয়ের মিলন নয়, সারা জীবনের পথচলার অঙ্গীকার। জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু করার আগে নিজেদের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদূর ভবিষ্যতে যেন কোনো অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আফসোস করতে না হয়, সেজন্য জীবনসঙ্গীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকা আবশ্যক। শরীরে কোনো রোগ বা সমস্যা লুকিয়ে থাকলে, তা বিবাহের পূর্বেই জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

আসুন জেনে নিই, সুস্থ ও সুরক্ষিত দাম্পত্যের জন্য বিয়ের আগে কোন কোন স্বাস্থ্য স্ক্রিনিংগুলো করানো জরুরি:

১. অনাগত সন্তানের সুরক্ষায়: রক্তের আরএইচ (Rh) ফ্যাক্টর পরীক্ষা

রক্তকে প্রধানত এ, বি, এবি, ও গ্রুপ এবং তার সঙ্গে পজিটিভ বা নেগেটিভ হিসেবে ভাগ করা হয়। যেকোনো গ্রুপের মানুষ একে অপরকে বিয়ে করতে পারেন, কিন্তু পজিটিভ-নেগেটিভের সংমিশ্রণ বংশধরদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি: সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন স্ত্রীর রক্ত নেগেটিভ এবং স্বামীর রক্ত পজিটিভ হয়। এই দম্পতির সন্তান যদি পজিটিভ রক্ত বহন করে, তবে প্রথমবার সাধারণত সমস্যা হয় না। কিন্তু প্রসবকালে সন্তানের রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন উপায়ে মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই অ্যান্টিবডিগুলো যদি দ্বিতীয় পজিটিভ সন্তানের ভ্রূণে পৌঁছায়, তবে তা প্লাসেন্টার মাধ্যমে প্রবেশ করে শিশুর রক্তকণিকাগুলো ধ্বংস করে দেয়।

মারাত্মক পরিণতি: ফলস্বরূপ, শিশু গর্ভেই প্রাণ হারাতে পারে বা জন্মের পর গুরুতর জন্ডিস ও স্নায়বিক জটিলতায় ভুগতে পারে। তাই বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জানা জরুরি।

প্রতিরোধের উপায়: এমন পরিস্থিতি এলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর যদি তার রক্ত পজিটিভ প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাকে 'অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন' গ্রহণ করতে হবে।

২. মানসিক সুস্থতা যাচাই

শারীরিক অসুস্থতার তুলনায় মানসিক রোগকে প্রায়শই ছোট করে দেখা হয়, যা সম্পূর্ণ অনুচিত। এটি মোটেও উপেক্ষা করার বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার এই ভুল ধারণায় রোগীকে বিয়ে দেন যে, এর মাধ্যমে তার অবস্থার উন্নতি হবে। বাস্তবে, এতে সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে। তাই সঙ্গী কোনো মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন কি না তা আগে থেকে জানা থাকা জরুরি। যদি আপনি নিজে অতীতে এমন কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন, তবে সেই তথ্য হবু সঙ্গীর কাছে গোপন করা উচিত নয়।

৩. সংক্রামক যৌনবাহিত রোগ স্ক্রিনিং

যদিও এই ধরনের রোগে আক্রান্তের হার আমাদের দেশে খুব বেশি নয়, তবুও নিরাপদ থাকাটাই শ্রেয়। অনিরাপদ বা অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারের ফলস্বরূপ এইডস, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সি, এবং গনোরিয়ার মতো বিভিন্ন সংক্রামক অসুখ দেখা দিতে পারে। যেহেতু সঙ্গীর একজনের এই রোগ থাকলে তা নিশ্চিতভাবে অন্যজনের শরীরেও ছড়ায়, তাই বিবাহের পূর্বেই এই পরীক্ষাগুলো করিয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

৪. বন্ধ্যাত্ব ও প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষা

সন্তান ধারণের ক্ষমতা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে বিবাহের পূর্বেই কিছু প্রজনন সংক্রান্ত পরীক্ষা করানো যেতে পারে।

পুরুষের জন্য: বীর্যের গুণগত মান (সিমেন পরীক্ষা) যাচাই করা উত্তম।

উভয়ের জন্য হরমোন বিশ্লেষণ: দুজনের রক্তের হরমোন যেমন - এফএসএইচ, টিএইচএস, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, এবং প্রোল্যাকটিন পরীক্ষা করানো আবশ্যক।

নারীর জন্য: পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাম বিশেষভাবে প্রয়োজন। এই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে বিয়ের পরে পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া সহজ হয়।

বিয়ের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করার আগে এই অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা উচিত। এতে কেবল শারীরিক বিপদই এড়ানো যায় না, বরং ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনের জন্য সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হয়ে ওঠে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ