ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

কখন, কোন সময়, কত মিনিট হাঁটলে বেশি উপকার পাবেন জানুন বিশেষজ্ঞের মতামত

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ১৮:৪৬:৩৮
কখন, কোন সময়, কত মিনিট হাঁটলে বেশি উপকার পাবেন জানুন বিশেষজ্ঞের মতামত

খাবার গ্রহণের পর হেঁটে আসা—এই সাধারণ অভ্যাসটিই স্বাস্থ্যের ওপর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এটি অত্যন্ত সহজলভ্য, তবুও এর গুরুত্বকে প্রায়শই খাটো করে দেখা হয়। এর জন্য কোনো বিলাসবহুল সরঞ্জাম, ব্যয়বহুল জিম সদস্যতা, বা কঠোর রুটিনের প্রয়োজন নেই; কেবল এক জোড়া আরামদায়ক জুতো এবং সামান্য আত্মপ্রেরণা যথেষ্ট।

হাঁটার সঠিক সময় নিয়ে অনেকের মনেই দ্বিধা থাকে—খাবারের আগে, সঙ্গে সঙ্গে, নাকি দিনের অন্য কোনো সময়ে? এক পক্ষ মনে করে খালি পেটে হাঁটা মেদ ঝরাতে বেশি কার্যকরী, অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা জোর দেন খাবারের পরে হাঁটার ওপর, যা পরিপাক প্রক্রিয়া এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ সুবিধা

ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে, খাবারের পর এই অভ্যাসটি রক্তে গ্লুকোজের হঠাৎ বৃদ্ধিকে প্রশমিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে HbA1c-এর মাত্রা কমাতেও ভূমিকা রাখে। তবে বিশেষজ্ঞরা খাবার শেষ হওয়ার ঠিক পর পরই (০-৫ মিনিটের মধ্যে) হাঁটতে যেতে নিষেধ করেন। যদিও তাৎক্ষণিক হাঁটার কিছু উপকারিতা আছে, কিন্তু ভারী ভোজনের পর দ্রুত হাঁটা শুরু করলে কারো কারো ক্ষেত্রে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আদর্শ সময় নির্ধারণ

খাবার শেষ করার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে হাঁটা শুরু করা সবচেয়ে কার্যকর। এই বিরতিটুকু সেই সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যখন খাদ্য হজম প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে ও রক্তপ্রবাহে মেশে। এই নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটা শুরু করলে গ্লুকোজের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

উপযোগী গতি ও ব্যাপ্তি: রক্তে গ্লুকোজের হঠাৎ উত্থান কমানোর জন্য সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে হালকা থেকে মাঝারি গতিতে (প্রায় ৩-৪ কিমি/ঘণ্টা) হাঁটা যথেষ্ট।

কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের পর: কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পর ৩০ মিনিটের বেশি সময় হাঁটলে অতিরিক্ত উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।

যে ভুলগুলো আপনার হাঁটার ফল নষ্ট করে দেয়

হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হলেও, কয়েকটি সাধারণ ভুল আপনার প্রচেষ্টার ফলকে ম্লান করে দিতে পারে।

১. ধীরগতি ও উদ্দেশ্যহীনতা: যদি খুব ধীরে বা আলস্যভরে হাঁটা হয়, তবে তা হৃদস্পন্দনকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়াতে পারে না। ফলে ফিটনেস বৃদ্ধি বা উল্লেখযোগ্য ক্যালোরি খরচ হয় না। সাধারণ হাঁটা ঠিক আছে, কিন্তু এতে সামান্য গতি যোগ করা এবং হাতের স্বাভাবিক সঞ্চালনে পার্থক্য তৈরি হয়।

২. ভুল শারীরিক ভঙ্গি: হাঁটার সময় সঠিক ভঙ্গি উপেক্ষা করলে ঘাড়, পিঠ বা কাঁধে টান লেগে আঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।

৩. অনিয়মিত অভ্যাস: মাঝে মাঝে হাঁটার অভ্যাস উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যসুবিধা দিতে পারে না। তাই এটি একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা জরুরি, এমনকি যদি তা দিনে মাত্র ১৫ মিনিটের জন্যই হয়।

৪. ত্রুটিপূর্ণ জুতা: পায়ের জন্য অনুপযুক্ত জুতা পরিধান করা একটি নীরব ভুল। এটি পায়ের ব্যথা বা আঘাতের কারণ হতে পারে, যা হাঁটার আগ্রহকে নষ্ট করে দেয়।

৫. একঘেয়ে পথ: সব সময় একই রাস্তায় হাঁটলে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে এবং আপনার উদ্যম কমে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে হাঁটার পথ পরিবর্তন করলে শরীর নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত হয়।

৬. পানিশূন্যতা ও শরীরের সতর্কতা উপেক্ষা: হাঁটার সময় পর্যাপ্ত জল পান করতে ভুলে যাওয়া বা শরীরের দেওয়া সতর্ক সংকেতগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয়। বিশেষ করে গরমের সময়, এটি হাঁটার সময়টাকে অস্বস্তিকর বা এমনকি ঝুঁকিপূর্ণও করে তুলতে পারে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ