ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ বিয়ে! গবেষণা কী বলছে?

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১৭ ১৯:১৫:১৮
উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ বিয়ে! গবেষণা কী বলছে?

মানবজীবনে বিবাহের মুহূর্তটি এক গভীরতম অনুভূতির সঞ্চার করে – উল্লাস, নতুন দায়িত্বের ভার, সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং মানসিক উদ্বেগ, যা অনেক সময় কাজের চিন্তার বাইরেও ঘুম কেড়ে নিতে পারে। এই নানাবিধ সম্মিলিত কারণে কিছু ব্যক্তির রক্তচাপের মাত্রায় সামান্য উচ্চতা পরিলক্ষিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তবে, দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের উৎপত্তিস্থল নয়। বরং, সম্পর্কের ভেতরের টানাপোড়েন, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণই মূলত রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণামূলক বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো।

বৈবাহিক সম্পর্ক ও রক্তচাপের মাত্রা: গবেষণা কী বলছে?

আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা নিবন্ধে বিবাহিত জীবন এবং রক্তচাপের মাত্রার মধ্যে একটি পারস্পরিক সংযোগের ইঙ্গিত মেলে।

৩০,০০০ যুগলের স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ

এই সমীক্ষার জন্য চীন, ইংল্যাান্ড, ভারত এবং আমেরিকা— এই চারটি দেশের মোট প্রায় ৩০ হাজার যুগলের স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়।

ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: এই গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবয়সী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি একজনের হাইপারটেনশন থাকে, তবে অপরজনেরও রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষত, যেসব নারী উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়েক বছর পর এই সমস্যা দেখা দেওয়ার হার ছিল লক্ষণীয়।

পরিসংখ্যানে নজর:

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ছিল ইংল্যান্ডের দম্পতিদের মধ্যে, যেখানে প্রায় ৪৭ শতাংশ যুগল হাই প্রেশারের শিকার। এরপরেই অবস্থান করছে আমেরিকা, চীন রয়েছে তৃতীয় স্থানে, এবং এই তালিকায় ভারতের স্থান ছিল চতুর্থ।

নারী ও পুরুষের ভিন্নতা:

কিছু স্বতন্ত্র গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে যে, অবিবাহিত মহিলাদের তুলনায় বিবাহিত মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে – যদিও এই পরিস্থিতি অন্যান্য জীবনযাত্রার শর্তাবলী দ্বারা প্রভাবিত হয়। একই তথ্য বিশ্লেষণে পুরুষদের ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থার সাথে রক্তচাপ বৃদ্ধির এমন কোনও সরল সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বিবাহের কারণে পুরুষদের প্রেশার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে— এমন সিদ্ধান্ত টানা যায় না।

অন্য দৃষ্টিকোণ:

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা (যেমন হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং) মনে করেন, একটি সন্তোষজনক ও সুখী দাম্পত্য জীবন মানসিক চাপ কমাতে, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

উপসংহার: বিবাহ সরাসরি রক্তচাপের মাত্রা বাড়ায় না, কিন্তু কিছু পরিস্থিতি বা চারিত্রিক কারণ (যেমন: সম্পর্কের ভেতরে দীর্ঘমেয়াদী চাপ) একত্রে সম্পর্কের মধ্যে থাকলে তা রক্তচাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

হাইপারটেনশন কী এবং এর আসল জৈবিক কারণ

যদি কোনো ব্যক্তির রক্তচাপের রিডিং ১৩৯/৮৯ mmHg বা তার ঊর্ধ্বে থাকে, তখন তাকে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিয়ের চেয়েও উচ্চ রক্তচাপের আসল জৈবিক ও পারিপার্শ্বিক কারণগুলি নিম্নরূপ:

জেনেটিক্স ও বয়স: পারিবারিক ইতিহাস এবং বয়স বৃদ্ধি রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান অনুঘটক।

অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ, অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার এবং স্থূলতা— এগুলি সরাসরি রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।

দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ ও ঘুমহীনতা: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব রক্তচাপ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে (চিকিৎসা বিজ্ঞানও এই চাপের প্রভাব স্বীকার করে)।

অতএব, বৈবাহিক জীবনে যদি দীর্ঘদিন ধরে কোনো ঝামেলা বা উত্তেজনা চললে তা উচ্চ রক্তচাপের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, কিন্তু এটিকে বিবাহের প্রত্যক্ষ কারণ বলা অনুচিত।

দাম্পত্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়

দাম্পত্য জীবনে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা ও কিছু অভ্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে:

উন্মুক্ত কথোপকথন: দিনের শেষে ভুল বোঝাবুঝি বা উদ্বেগের বিষয়গুলো একে অপরের সাথে ভাগ করে নিলে মানসিক চাপ দ্রুত হ্রাস পায়।

দৈনন্দিন শরীরচর্চা: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী।

সুষম খাদ্য গ্রহণ: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অন্যতম সহজ উপায় হলো খাদ্যতালিকায় লবণের ব্যবহার কমানো, প্রচুর ফল ও শাক-সবজি অন্তর্ভুক্ত করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম: ঘুমের ঘাটতি হলে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন বাড়ে, যা রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে।

বিবাহ মানেই যে রক্তচাপের মাত্রা বাড়বে, এমনটা অপরিহার্য নয়। সামান্য সচেতনতা, আন্তরিক সম্পর্ক ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে একটি সুখী দাম্পত্য ও সুস্বাস্থ্য একসঙ্গে অর্জন করা সম্ভব।

আল-মামুন/

ট্যাগ: বিয়ে লাইফস্টাইল উচ্চ রক্তচাপ রক্তচাপ মানসিক চাপ কমানোর উপায় গবেষণা বিবাহ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় মানসিক চাপ হাইপারটেনশন হাই প্রেশার সমীক্ষা High Blood Pressure Hypertension Marriage Marital Stress BP Blood Pressure Risk Research Study Stress Management বিয়ে করলে কি প্রেশার বাড়ে? উচ্চ রক্তচাপের কারণ কি বিয়ে? স্বামী-স্ত্রীর রক্তচাপের সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনে চাপ প্রেশার বাড়ার ঝুঁকি বিবাহিত জীবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বিয়ে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপের কারণ Does marriage cause high blood pressure? Marital status and hypertension Relationship stress BP High BP risk married women Study on marriage and hypertension Can relationship stress raise blood pressure? Controlling BP in couples Married life health risk প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার টিপস স্বাস্থ্যকর বিবাহিত জীবন জীবনযাত্রা পরিবর্তন Hypertension prevention tips Tips to control high BP Healthy married life Stress reduction in couples Lifestyle changes for hypertension দম্পতি স্বাস্থ্য বৈবাহিক সম্পর্ক আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশন হার্ভার্ড হেলথ Couples health Spousal health risk American Heart Association Harvard Health Lifestyle Marital relationship Unmarried vs married BP

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ