বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা জরুরি: থ্যালাসেমিয়া রোগী যেন না হয় আপনার সন্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অথচ এই রোগটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য—শুধু প্রয়োজন সময়মতো সঠিক তথ্য জেনে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া। থ্যালাসেমিয়া এমন একটি বংশগত রক্তরোগ, যা একজন বাহকের শরীরে স্পষ্ট কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে, কিন্তু দুইজন বাহক বাবা-মায়ের সন্তান মারাত্মক রক্তস্বল্পতা নিয়ে জন্মাতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের (TIF) সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তত ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১.৪ শতাংশ। প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়ছে এবং তার সঙ্গে বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যাও।
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুগদা মেডিকেল কলেজের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস রোগটি প্রতিরোধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন।
থ্যালাসেমিয়া কীভাবে কাজ করে?
মানবদেহে রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হিমোগ্লোবিন নামক একটি প্রোটিন, যা গঠিত হয় দুই ধরনের চেইন—আলফা ও বিটা গ্লোবিন—থেকে। এই চেইনগুলোর কোনো একটি বা একাধিক যদি জেনেটিক ত্রুটির শিকার হয়, তখনই দেখা দেয় থ্যালাসেমিয়া। যাঁদের শরীরে এই ত্রুটি একাধিক থাকে, তাঁরা রোগী; আর একটিমাত্র ত্রুটি থাকলে তাঁরা শুধু বাহক।
থ্যালাসেমিয়া রোগীরা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, যা মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা বাহক অবস্থায় সাধারণত উপসর্গ দেখা না দিলেও, থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীদের প্রতি ২–৪ সপ্তাহ অন্তর রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
সন্তান আক্রান্ত হয় কীভাবে?
থ্যালাসেমিয়া ছড়ায় বংশগতভাবে। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বাহক হন, তবে তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মানোর আশঙ্কা থাকে। এই ক্ষেত্রে ২৫% শিশুর মারাত্মক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, ৫০% বাহক হতে পারে এবং ২৫% সুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু বাবা-মায়ের একজন যদি বাহক হন এবং অপরজন না হন, তবে সন্তান কেবল বাহক হতে পারে—রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
লক্ষণ ও জটিলতা
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়—
মারাত্মক রক্তস্বল্পতা
শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
দুর্বলতা ও জন্ডিস
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
প্লীহা বড় হয়ে পেট ফুলে যাওয়া
খাওয়া-দাওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া ও ওজন না বাড়া
সাধারণত শিশুর এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই এই উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।
প্রতিরোধের পথ কী?
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব শুধুমাত্র বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষা ও সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। বিয়ের আগে হবু দম্পতির উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে—তাঁদের কেউ একজন যেন অন্তত বাহক না হন। এর জন্য যেসব পরীক্ষার প্রয়োজন:
CBC (Complete Blood Count)
হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস বা Hb বিশ্লেষণ
ডিএনএ বা জেনেটিক টেস্ট
এছাড়া যাঁদের পরিবারে আগে থ্যালাসেমিয়ার রোগী ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই বাহক শনাক্তকরণ টেস্ট করা উচিত। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে ১২–১৮ সপ্তাহের মধ্যে, গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে জানা সম্ভব সে আক্রান্ত কিনা। যদি শিশুর মধ্যে রোগ ধরা পড়ে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
চিকিৎসা ও বিকল্প
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব হলেও, এটি ব্যয়সাপেক্ষ এবং নির্ভর করে উপযুক্ত ডোনার পাওয়ার ওপর। ডোনার না পেলে শিশুকে নিয়মিত রক্ত দেওয়া ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনধারণের মান উন্নত রাখা সম্ভব।
থ্যালাসেমিয়া একটি নীরব বংশগত দুর্যোগ, যা সচেতনতা আর পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সময় এসেছে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যায়ে সচেতনতার জাল বিস্তার করার। একজনে সচেতন হলে পুরো প্রজন্ম রক্ষা পায়।
মোঃ রাজিব আলী/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভারতের সাবেক স্পিনার দিলীপ দোশী মারা গেলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে
- PSG বনাম ইন্টার মায়ামি: কখন, কোথায় ও কীভাবে দেখবেন লাইভ ম্যাচ
- পিএসজি বনাম ইন্টার মায়ামি: ম্যাচ প্রিভিউ, একাদশ ও ম্যাচ শুরুর সময়
- চুপ্পুকে সরিয়ে জাতীয় নির্বাচনে আগে নতুন রাষ্ট্রপতি চান পিনাকি
- ৮ গোল: শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম বাহারাইনের মধ্যকার ম্যাচের ৯০ মিনিটের খেলা
- মাহিয়া মাহির মৃত্যু গুজব: সত্য ও মিথ্যার বিশ্লেষণ
- বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা দিল ডিএসই
- শান্তর পদত্যাগ, নতুন টেস্ট অধিনায়কত্বে এগিয়ে যিনি
- পিএসজি বনাম ইন্টার মায়ামি: ৪-০ গোলে শেষ হলো ম্যাচ
- শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ: বৃষ্টির কারণে বন্ধ দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ
- কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন ফখরুল, চোখের জলে ভেসে গেল শেষ বিদায়
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজরে পাঁচ কোম্পানি
- ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ : দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত ১৬ দলের, সময় সূচি প্রকাশ
- বাজারে সামগ্রিক মন্দার মাঝেও বস্ত্র খাতের ৫ কোম্পানির চমক
- বিনিয়োগকারীদের জন্য তিন কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা