ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে সুস্থ থাকুন—জানুন ১০টি বড় উপকার

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৫:৩০:১৬
প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে সুস্থ থাকুন—জানুন ১০টি বড় উপকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: অফিস, মোবাইল, সোফা—দিনের বড় একটি সময় আমরা কাটিয়ে দিচ্ছি বসে থেকে। শরীর যেন ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে নিস্ক্রিয়তায়। অথচ প্রতিদিন মাত্র কিছুটা হাঁটাই পারে এই স্থবিরতা ভেঙে এনে দিতে এক নতুন জীবনীশক্তি।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস শরীর ও মন—দুইয়ের জন্যই এক আশ্চর্য ওষুধের মতো কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ হাজার কদম হাঁটা শরীরে এনে দেয় চমৎকার পরিবর্তন।

চলুন জেনে নিই, প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে আপনি কী কী বড় উপকার পেতে পারেন—

১. হৃদপিণ্ড থাকে সুস্থ ও সক্রিয়

নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা হার্টের কর্মক্ষমতা উন্নত করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করে।

২. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে

হাঁটার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ে, ফলে ফুসফুস আরও বেশি অক্সিজেন নিতে শেখে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয় এবং ফুসফুস সুস্থ থাকে।

৩. মন ও মস্তিষ্কে আসে সতেজতা

হাঁটার সময় মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, নিঃসৃত হয় 'এনডরফিন' নামক সুখের হরমোন। এটি মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

৪. হাড় হয় মজবুত ও শক্তিশালী

হাঁটা একটি ওজনবাহী ব্যায়াম, যা হাড়ের ওপর প্রাকৃতিক চাপ সৃষ্টি করে। এতে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে যায়।

৫. পেশি গঠনে সাহায্য করে

হাঁটার ফলে পায়ের পেশি, নিতম্ব ও পিঠের পেশি সক্রিয় হয়। নিয়মিত হাঁটা পেশিকে করে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল।

৬. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে

চলাফেরার সময় পেশিগুলো রক্তের গ্লুকোজ ব্যবহার করে। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে এবং ইনসুলিন আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

৭. রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে

হাঁটার ফলে রক্তনালীগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে। এতে উচ্চ রক্তচাপ কমে এবং হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৮. দেহের নমনীয়তা ও ভারসাম্য বাড়ে

নিয়মিত হাঁটার ফলে অস্থিসন্ধি ও পেশির নমনীয়তা বাড়ে। এতে শরীর আরও ভারসাম্যপূর্ণ হয় এবং পড়েপড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে।

৯. উদ্যম ও শক্তি ফিরে আসে

হাঁটার মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস সক্রিয় থাকে, যা শরীরে প্রাকৃতিক শক্তি উৎপাদন করে। ফলে সারাদিন থাকে প্রাণশক্তি ও উদ্যম।

১০. ঘুম হয় গভীর ও স্বস্তিদায়ক

প্রতিদিন সকালের বা বিকেলের হালকা হাঁটা মানসিক প্রশান্তি আনে এবং রাতে ঘুমের গুণমান উন্নত করে।

কীভাবে শুরু করবেন?

হাঁটার জন্য প্রয়োজন নেই ব্যয়বহুল জিম মেম্বারশিপ বা কঠিন ডায়েট প্ল্যানের। শুধু শুরু করতে হবে ছোট করে। প্রথমে দিনে ১৫-২০ মিনিট হাঁটুন, তারপর ধীরে ধীরে সময় ও পদক্ষেপ বাড়ান।

আপনি চাইলে হাঁটার সময় গান শুনতে পারেন, প্রকৃতির মধ্যে হাঁটতে পারেন, কিংবা পরিবারের কাউকে সঙ্গী করে নিতে পারেন—এতে হাঁটা হবে উপভোগ্য।

সুস্থ থাকার সবচেয়ে সহজ, প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপায় হতে পারে প্রতিদিন কিছুটা হাঁটা। এটা কেবল শরীর নয়, মনকেও রাখে সুস্থ ও চনমনে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন—প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে যান।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তরসহ):

প্রশ্ন ১: প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা কী?

উত্তর: প্রতিদিন হাঁটার ফলে হার্ট ও ফুসফুস সুস্থ থাকে, রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আসে, পেশি ও হাড় শক্তিশালী হয় এবং মানসিক চাপ কমে।

প্রশ্ন ২: দিনে কত কদম হাঁটা উচিত?

উত্তর: প্রতিদিন অন্তত ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ কদম হাঁটা শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৩: হাঁটা কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?

উত্তর: হাঁটা ক্যালোরি খরচ করে এবং বিপাকক্রিয়া বাড়ায়, ফলে এটি ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন ৪: হাঁটার সঠিক সময় কখন?

উত্তর: সকালে হাঁটা সবচেয়ে উপকারী, তবে সন্ধ্যায় হাঁটাও উপকার দেয়। মূল কথা, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলে উপকার পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৫: হাঁটার সময় কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?

উত্তর: আরামদায়ক পোশাক ও জুতা পরা, পানি খাওয়া ও সঠিক ভঙ্গিমায় হাঁটা উচিত। খুব দ্রুত বা খুব ধীরগতিতে হাঁটা এড়ানো ভালো।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ