ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

কাঁদা পেরিয়ে স্বপ্নে পা: নিজেদের টাকায় গ্রামবাসীর রাস্তা নির্মাণ

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০১ ১৬:১৫:২৬
কাঁদা পেরিয়ে স্বপ্নে পা: নিজেদের টাকায় গ্রামবাসীর রাস্তা নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার চাটমোহরের ছয় আনির বিল—যেখানে প্রকৃতি একদিকে উদার, আর অপরদিকে অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, কিন্তু তার মাঝ দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা যেন জনজীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত উপহাস করে আসছিল। বর্ষায় হোক বা শুকনো দিনে—মাঠের ধান পেছনে পড়ে থাকত, সামনে থাকত কাদা আর কষ্টের পাহাড়। অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিল মানুষ, তখনই আশার আলো জ্বালালেন তারা নিজেরাই—ইট-বালু হাতে তুলে নিলেন বদলে দেয়ার স্বপ্ন।

শনিবার (৩১ মে) সকালে চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌরনগর-বিন্যাবাড়ি গ্রামের পাশে শুরু হয় এক অনন্য ইতিহাস। মাদারি ফকিরের বাড়ি থেকে ছয় আনির বিল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে নেমে পড়েন গ্রামের মানুষ। না, কোনো টেন্ডার হয়নি, এমপি-চেয়ারম্যানের ফিতা কাটাও হয়নি—এই কাজের নেতৃত্বে আছে প্রয়োজন, আর চালিকাশক্তি স্বপ্ন।

কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, “বিলের ধান তো কেটে আনা যায় না। কাদা আর জল একাকার হয়ে যায়। গাড়ি আটকে যায়, মানুষ পড়ে গিয়ে চোট পায়। অনেক আশা করেছিলাম, কেউ আসবে সাহায্য করতে। শেষে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিলাম—রাস্তাটার দায়িত্ব আমরাই নেব।”

শুধু মকবুল নয়, গ্রামের পুরুষরা ইট টানছেন, যুবকেরা ঘাম ঝরাচ্ছেন, এমনকি নারীরাও খাবার তৈরি করে পাশে থাকছেন। যেন একটি গ্রাম, একটি হৃদয়।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাদুল হক জানালেন, “এই বিল থেকে যে ফসল ওঠে, তা আমাদের জীবিকা। অথচ সেই ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে প্রাণ যায় বলেও ভয় লাগে। এতবার বলেছি জনপ্রতিনিধিদের—কেউ কর্ণপাত করেনি। এবার আর কারও মুখ চেয়ে বসে থাকিনি। নিজেরাই শুরু করেছি।”

৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফের কণ্ঠেও ক্ষোভ, “এই মাঠে যে ফসল হয়, তা আমাদের অস্তিত্ব। অথচ সেই ফসল কাদার কারণে গরুর গাড়িতেও আনা যায় না। হাবুডুবু খেতে হয়। তাই আর অপেক্ষা নয়, নিজেরাই চাঁদা তুলে রাস্তাটা করছি।”

এই বিলজুড়ে সরকারি বিআরডিবির পাঁচটি গভীর নলকূপ আছে, আছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি—তথ্য দিলেন স্থানীয় গ্রুপ ম্যানেজার শাহীন আলম। তিনি বলেন, “৩০-৩৫ বছর ধরে রাস্তাটি পড়ে আছে একেবারে অবহেলায়। বহু নেতা এলেন, গেলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার মানুষ নিজেই তার ভাগ্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।”

এই খবর পৌঁছাতেই সাড়া দেন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, “এলাকাবাসীর এই প্রয়াস প্রশংসনীয়। আমি দ্রুতই রাস্তাটি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাবমারসিবল সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

ছয় আনির বিলের মানুষ যেন এক নতুন দিনের গল্প লিখছে—যেখানে অপেক্ষার বদলে আছে উদ্যোগ, আর অভিযোগের বদলে কাজ। নিজেদের অর্থায়নে, নিজেদের হাতে গড়া এই পথ শুধু রাস্তা নয়—এটি এক প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি, যেখানে বলা হচ্ছে:

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ