ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার চমকপ্রদ ১২টি উপকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ০৬ ১১:৫৮:০৫
খালি পেটে খেজুর খাওয়ার চমকপ্রদ ১২টি উপকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: খেজুর এমন একটি ফল, যার উপকারিতা এত বেশি যে এটিকে সুপারফুড বলা যায়। অনেকেই মনে করেন, খেজুর শুধুই রমজানের সময় খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে।

বিশেষ করে, রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। এতে খেজুরের পুষ্টি শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয় এবং এর কার্যকারিতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দের প্রতিবেদনে এমনই বিভিন্ন উপকারিতার কথা উঠে এসেছে।

নিচে খেজুর খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—

হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার হজমের জন্য খুবই উপকারী। যারা নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের জন্য খেজুর দারুণ কার্যকর। এটি অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, ফলে গ্যাস্ট্রিক, গ্যাস, বদহজম দূর হয়।

মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে

খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও নিউরো-প্রোটেকটিভ উপাদান, যা স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। নিয়মিত খেজুর খেলে অ্যালঝেইমারের ঝুঁকিও অনেকটা হ্রাস পায়।

রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে

খেজুরে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীগুলোকে নমনীয় রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধে খেজুরের ভূমিকা রয়েছে।

হাড়কে শক্তিশালী করে

খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। এই খনিজগুলো হাড়ের গঠন দৃঢ় করে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।

চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়

ভিটামিন এ, লুটেনিন ও জ্যাক্সানথিন সমৃদ্ধ খেজুর চোখের কর্নিয়া সুস্থ রাখে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়তা করে। যারা সারাদিন কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের চোখের ক্লান্তি কমাতে খেজুর কার্যকর হতে পারে।

শরীরে শক্তি জোগায়

প্রাকৃতিক চিনি যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ খেজুরে থাকে। এগুলো শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। খেলোয়াড়, অফিসে ব্যস্ত কর্মী বা ক্লান্ত মানুষদের জন্য খেজুর তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস হতে পারে।

পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে

খেজুরে ভিটামিন বি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিনসহ নানা উপাদান রয়েছে, যা শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে। যাদের শরীরে রক্ত কম, তারা নিয়মিত খেজুর খেলে উপকার পাবেন।

গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী

গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে রক্ত ও পুষ্টির প্রয়োজন বেড়ে যায়। খেজুরে থাকা আয়রন ও ভিটামিন সেগুলো পূরণ করে এবং শিশুর জন্মগত বিকাশেও সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নে সাহায্য করে

খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ত্বকের শুষ্কতা ও শিথিলতা দূর করে। এটি ত্বককে ভেতর থেকে সতেজ করে এবং ব্রণ, ফুসকুড়ি ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

হাঁটুর ব্যথা ও জয়েন্টের সমস্যা কমায়

খেজুরে ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে এটি হাঁটুর জোড়ায় বল আনে এবং জয়েন্টের ব্যথা প্রশমিত করে।

ঘুম ভালো হয়

খেজুরে থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপাদান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নিঃসরণে সহায়তা করে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে ঘুমের মান উন্নত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

খেজুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

কারা খেজুর খাওয়ার আগে সাবধান হবেন

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি খেজুর খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও অতিরিক্ত খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে।

কীভাবে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী

রাতে ২-৩টি খেজুর পানি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে খেজুরের কার্যকারিতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট কিছু না খাওয়াই ভালো।

খেজুর শুধু একটি ফল নয়, এটি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রাকৃতিক ওষুধ। শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের উপকারে আসে খেজুর। তাই প্রতিদিন ৩-৫টি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করলে আপনি অনেক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন এবং শারীরিক শক্তি ও মানসিক প্রশান্তি পাবেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ