ঢাকা, রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাই থেকে সোনার গহনা কিনে এই কারণে অন্য দেশে বিক্রি করে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৮ ১৫:০৭:০৬
দুবাই থেকে সোনার গহনা কিনে এই কারণে অন্য দেশে বিক্রি করে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরটি সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য। দুবাই ভ্রমণ এখন আগের চেয়ে সহজ। এ কারণে উচ্চবিত্তরা এ শহরে গেলে অনেকেই স্বর্ণ ও গয়না কিনতে চান।

দুবাই মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সোনার সউক বা বাজারের জন্য পরিচিত। কিন্তু কেন মানুষ দুবাই থেকে সোনা ও গয়না কিনে অন্য দেশে বিক্রি করে? এর পেছনের কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মিডিয়া জানিয়েছে যে ক্রেতারা দুবাইতে সোনা এবং মূল্যবান ধাতুর গহনা কিনছেন এবং মূল্যবান জিনিসগুলি অন্য দেশে বিক্রি করছেন - বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে।

শিল্প কর্মকর্তারা বলছেন যে ক্রেতা এবং ভোক্তারা দুবাইতে বিক্রি হওয়া স্বর্ণ ও গহনার গুণমানের ওপর আস্থা রাখে। তাছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে দামের পার্থক্য থেকে ক্রেতারাও উপকৃত হন।বিশ্বের কিছু দেশ অবশ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপরে স্বর্ণ এবং গহনা ক্রয়ের ওপর কর আরোপ করে থাকে। তবে দুবাইতে স্বর্ণের গহনা কেনার ওপর কোনও কর নেই। যদি যাত্রীরা স্বর্ণ এবং গহনা বহন করার অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করেন, তাহলেই কেবল কর্তৃপক্ষ সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারে। আবার এমন ক্ষেত্রে যাত্রীদের প্রতিটি দেশের নীতির ওপর নির্ভর করে শুল্ক দিতেও বলা হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ একজন ভারতীয় পুরুষ যাত্রী যিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন তাকে ৫০ হাজার রুপি (২ হাজার ২১৩ দিরহাম) মূল্যের গহনা বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর একজন নারী যাত্রী ১ লাখ রুপি (৪ হাজার ৪২৫ দিরহাম) মূল্যের গহনা বহন করতে পারেন।

খালিজ টাইমস বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ বা বের হয়ে যাওয়ার সময় দেশটির বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীদের যারা ৬০ হাজার দিরহামের বেশি মূল্যের নগদ অর্থ, স্বর্ণ, গহনা, হীরা এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সাথে রাখেন, তাদের সেটি প্রকাশ করতে হবে।

মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের আন্তর্জাতিক অপারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামলাল আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, গ্রাহকরা দুবাইতে স্বর্ণের গহনা কিনছেন এবং অন্যান্য দেশে বিশেষ করে ভারতে গিয়ে বিক্রি করছেন। মূলত এই ধরনের কাজ প্রাথমিকভাবে মানের পার্থক্যের পরিবর্তে স্বর্ণের দামের পার্থক্যের কারণে হয়ে থাকে।’

তিনি বলেছেন, ‘দুবাইয়ের তুলনায় ভারতের মতো এশিয়ান দেশগুলোতে সোনার দাম প্রায় ১২-১৫ শতাংশ বেশি। তাই যারা এই ধরনের ক্রস-কান্ট্রি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত, তাদের জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য আর্থিক লাভ নিশ্চিত করে।’

খালিজ টাইমস বলছে, বুধবার দুবাইতে চব্বিশ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রাম ২৪৬.৫ দিরহামে (৫ হাজার ৫৭০ রুপিতে) বিক্রি হয়েছে। সেই তুলনায় একইদিনে ভারতে চব্বিশ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ছিল ৬ হাজার ৩২৩ রুপি বা ২৮০ দিরহাম।

গত মাসে ভারত গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত সোনা এবং রৌপ্যের আমদানি শুল্ক ১১ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে, যাতে এগুলো সোনা এবং রৌপ্য বারগুলোর শুল্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আর এর আগে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে মূল্যবান ধাতু ধারণকারী ব্যয়িত অনুঘটকের আমদানি শুল্ক ১০.১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৪.৩৫ শতাংশ করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।

মূলত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীরাই দুবাইতে সোনার গহনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। দুবাই জুয়েলারি গ্রুপের চেয়ারম্যান তাওহিদ আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘দুবাইয়ের গহনা তার সর্বোচ্চ মানের বেঞ্চমার্ক এবং সেরা দামের জন্য পরিচিত। আর ব্যবসার পরিমাণের ওপর ফোকাস করে থাকে দুবাইয়ের জুয়েলার্স।’

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ জুয়েলার্সের জন্য প্রতি গ্রাম মেকিং চার্জ স্থির করা থাকে এবং সেটি ভারতের মতো বাজারের তুলনায় অনেক কম। কারণ ভারতে মেকিং চার্জ সোনার দামের শতাংশে গণনা করা হয়। সোনার হারের ওঠানামা দুবাইতে গহনা তৈরির চার্জকে প্রভাবিত করে না।’

তিনি আরও বলেন, ভারতে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশটিতে গহনার দাম আরও বেড়েছে। তার ভাষায়, ‘দুবাই বিমানবন্দরে পর্যটকরা ভ্যাট ফেরত পেতে পারেন যা একটি বাড়তি সুবিধা। মোটকথা, দুবাই এখনও যেকোনও ধরনের গহনা কেনার জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী জায়গা।’

জয়লুক্কাস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জন পল আলুক্কাস বলেছেন, দুবাইয়ে স্বর্ণ ও গহনার বাজারে কঠোর মান নিশ্চিত করা এবং পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতাই বৈশ্বিক ক্রেতাদের এখান থেকে স্বর্ণ ও গহনা কিনতে আকৃষ্ট করে থাকে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে