ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে থাকা স্ত্রীর নোটারি করা তালাকের নোটিশ পেলেন স্বামী

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ আগস্ট ২৪ ১২:০৯:৩৯
বিদেশে থাকা স্ত্রীর নোটারি করা তালাকের নোটিশ পেলেন স্বামী

জানা যায়, রাণীনগরের কাচারী বেলঘড়িয়া গ্রামের আজিজুল কাজীর মেয়ে রাহিমা বিবির সঙ্গে প্রায় ১৪ বছর আগে একই এলাকার রঞ্জনিয়া গ্রামের মোতালেব হোসেন মন্ডলের বিয়ে হয়। দম্পতিদের ৯ বছরের একটি ছেলে আছে। অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় প্রায় ৬ বছর আগে জর্ডানে পাড়ি জমান রাহিমা। তার পাঠানো টাকা দিয়ে মোতালেব জমিজমা কেনাসহ সংসারের ঋণ পরিশোধ করেন। এরই মধ্যে কথিত নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) পরিচয় দানকারী কাজী বেলাল হোসেন প্রবাসী রাহিমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে গত বছরের ১৯ এপ্রিল নওগাঁ নোটারি পাবলিক কার্যালয় থেকে মোতালেবকে তালাকের জন্য এফিডেভিট করে।

মেয়ে বিদেশে অথচ এফিডেভিট করে স্বামীকে তালাকের এমন নোটিশ পেয়ে হতভম্ব হয় রাহিমার পরিবার। বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেকে বাঁচাতে ৯ আগস্ট বেলাল হোসেন নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে স্বাক্ষর ও সিল মোহরযুক্ত একটি প্রত্যয়ন রাহিমার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়। প্রত্যয়নপত্রে লেখা হয়, ‘এই তালাক আমার অফিসে হয়নি বা তালাক করে নাই ইহা সত্য। যদি কেউ তালাকের কাগজ দেখিয়া থাকে বা কেউ তৈরি করে থাকে তা জাল ও ভুয়া। রাহিমার ক্ষতি সাধনের জন্যকরেছে।’

রাহিমার মা আফরোজা বিবি বলেন, ‘আমরা মুর্খ ও গরিব মানুষ। কাগজপত্র সম্পর্কে তেমন কিছুই বুঝি না। রাহিমা আমাকে বলেছে সে স্বামী তালাক করে নাই। তাহলে বেলাল কাজী কীভাবে তালাকের কাগজ তৈরি করে আমাদের দিল? কাজীর কারণেই আমার মেয়ের সংসার নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কাজীসহ এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের কঠোর শাস্তি চাই।’

মোতালেব হোসেন বলেন, ‘মাঝখানে রাহিমার সঙ্গে আমার মনমালিন্য চলছিল। কিছুদিন পর আমার পাশের বাড়িতে কাজি বেলাল নিজে এসে তালাকের কাগজপত্র দিয়ে যায়। পরে বেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বলে তালাকের পর ৩ মাস পার হয়ে গেছে। এখন বিয়ে করতে পারবে। কারণ রাহিমা যখন আমাকে তালাক দিয়েছে আমাকে তো আমার সংসার ধরে রাখার জন্য আরেকটি বিয়ে করতে হবে। তাই আমি কাজির পরামর্শে আরেকটি বিয়ে করেছি।’বেলাল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে হেয় করতে এটা করানো হইছে।’

উপজেলা মুসলিম পারিবারিক ও নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং কাজি সমিতির সভাপতি এটিএম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা সরকারি বইয়ে বেলাল হোসেন নামে তালিকভুক্ত কোনও কাজীর নাম নেই। কাজি না হয়েও বেলাল কতিপয় প্রভাবশালী মহলের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সে শুধু রাণীনগর উপজেলাতেই নয়, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় বয়স বৃদ্ধি করে বাল্য বিয়ে, দেনমোহর জালিয়াতি, মিথ্যা তালাক দেওয়াসহ ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কাজি সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দিলে তা রহস্যজনক কারণে আলোর মুখ দেখেনি। কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’

নওগাঁ জেলা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বলেন, এফিডেভিটের মাধ্যমে তালাক হয় না। বাংলাদেশ সরকার বিদেশে অবস্থান করে তালাক দেওয়ার কোনও বৈধতা দেয়নি। যদি কেউ বিদেশে অবস্থান করে তালাক দেয় তাহলে সেটা সম্পন্ন ভুয়া। এসব ভুয়া কাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ আছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে