ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গর্ডন গ্রিনিজ থেকে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহেঃ বাংলাদেশের কোচদের ইতিহাস…

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ০৬ ১২:৫৮:৪৬
গর্ডন গ্রিনিজ থেকে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহেঃ বাংলাদেশের কোচদের ইতিহাস…

তাই সবকিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশের কোচদের ইতিহাস নিয়ে আমাদের আজকের এই ছোট্ট প্রচেষ্টা মাত্র। আসুন দেখে নেই বাংলাদেশের কোচদের সাফল্য ও ব্যর্থতার ইতিহাস। কেনই বা তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

গর্ডন গ্রিনিজ (১৯৯৬-১৯৯৯)

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কোচদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ক্যারিবিয়ানদের সাবেক খেলোয়াড় ‘গর্ডন গ্রিনিজ’। তাঁর হাত ধরেই আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রধান হাতেখড়ি হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালে টাইগারদের কোচ হয়ে দায়িত্ব নেন গ্রিনিজ। দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন ক্রিকেট বিশ্বে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ট্রফি জয় করে। ১৯৯৭ এর আইসিসি ট্রফি দিয়েই বাংলাদেশ আসল ইতিহাস শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার গ্রিনিজকে সম্মানসূচক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ এ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম ওয়ানডে জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ১৯৯৯ সালে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতন বিশ্বকাপ খেলেই স্কটল্যান্ড ও সেই সময়ের শক্তিশালী দল পাকিস্তানকে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে চমক দেখায়।

বাংলাদেশকে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়াটা সম্মানের ছিল না। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর দিনেই তাঁকে বরখাস্ত করে সে সময়ের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। চুক্তি শেষ হওয়ার একদিন আগেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে একপ্রকার অপমানই করেছিল বোর্ড।

বোর্ড অভিযোগ করে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে তিনি এর বিরোধিতা করেন। গ্রিনিজ নাকি আরও পরে টেস্ট স্ট্যাটাস চাচ্ছিলেন। এছাড়া খেলোয়াড়দের মাঝে তিনি নাকি গ্রপিং সৃষ্টি করেছিলেন।

এডি বারলো (১৯৯৯-২০০০)

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেগ থাকা কোচ হচ্ছেন তিনি। দক্ষিন আফ্রিকায় জন্ম নেয়া বারলো তাঁর বিদায়ের সময়ে বাংলাদেশের জন্য অঝোরে কেঁদেছেন।

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পিছনে বারলোর অবদান অনেক বেশি। তিনি যখন বাংলাদেশের কোচ ছিলেন তখন মাথায় রক্ত ক্ষরণ হয়ে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন তখন তিনি হুইল চেয়ারে বসে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ দেখেন।

ট্রেভর চ্যাপেল (২০০১-২০০২)

বিখ্যাত গ্রেগ চ্যাপেল ও ইয়ান চ্যাপেলের ছোটো ভাই হচ্ছেন ট্রেভর চ্যাপেল। তবে তিনি আসার পর থেকে সমালোচনা হয়েছে সবথেকে বেশি। তাঁর করানো পুরো কোচিং পদ্ধতিই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের সাফল্লের থেকে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। সেই সময়ের সেরা খেলোয়াড় বুলবুল আকরাম খান সহ অনেককেই দল থেকে বাদ দিয়ে প্রশ্নের মুখে পরে। শেষ পর্যন্ত চুক্তি শেষ হলে তাঁকে বাদ দেয়া হয়।

মহসিন কামাল-আলি জিয়া (২০০২-২০০৩)

বাংলাদেশ বোর্ড পাকিস্তানি এই দুই কোচকে কেন নিয়োগ দিয়েছে সেটা এখনও অবাক করার মতন একটা বিষয়। দেখে মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশকে ধ্বংস করার এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হতাশাজনক পার্ফরমেন্স আসে এই দুই পাকিস্তানি কোচের হাত ধরেই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের বাজে পারফর্মেন্স ও তাঁদের প্রশ্নবিদ্ধ কোচিংয়ের কারনেই তাদেরকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।

ডেভ হোয়াটমোর (২০০৩-২০০৭)

বাংলাদেশের আধুনিক ক্রিকেটে উন্নয়ন এসেছে তাঁর হাত ধরেই। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ জয় পেতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ছিলেন তিনি। ভঙ্গুর বাংলাদেশকে শক্তিশালী বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেন তিনি।

২০০৫ সালে হোয়াটমোরের হাত ধরেই বাংলাদেশ তাঁদের নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। ওই বছরই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে চমক দেখায় বাংলাদেশ। কেননা সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়া দল ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি।

২০০৭ বিশ্বকাপে তাঁর হাত ধরেই আবারও নিজেদের প্রমাণ করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মতন আসরে বাংলাদেশ শক্তিশালী দক্ষিন আফ্রিকা ও ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতন বিশ্বকাপের আসরে সুপার এইটে জায়গা করে নেয়। বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশে ফিরে হোয়াটমোর পদত্যাগ করেন।

জেমি সিডন্স (২০০৭-২০১১)

জেমি সিডন্স বাংলাদেশের অন্যতম সফল কোচদের মধ্যে একজন। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ অসাধারণ পারফর্মেন্স করতে থাকে। তবে তাঁর প্রতিবাদী মনোভাব বাংলাদেশ বোর্ডের পছন্দ ছিল না। বোর্ডের অনেক অনিয়ম তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রতিবাদ করেন। যার কারনে বোর্ড তাঁকে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আর রাখতে চাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভাল পারফর্ম করলেও কোচ হিসেবে বিদায় নিতে হয় তাঁকে।

অবশ্য চলে যাওয়ার দুই বছর পর আবারও বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হতে চেয়েছিলেন জেমি। কিন্তু বাংলাদেশ বোর্ড তাঁর প্রস্তাব আমলে না নিয়ে প্রত্যাখ্যান করে।

স্টুয়ার্ট ল (২০১১-২০১২)

সিডন্স চলে যাওয়ার পর স্টুয়ার্ট ল মাত্র ৩ মাসের জন্য বাংলাদেশের কোচ ছিলেন । এই তিনমাসে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি খুবই রাগী মানুষ। সেই সঙ্গে নিয়মনীতিতে বেশ কঠোর। নিয়মনীতি সবাই পছন্দ করলেও বাংলাদেশের সেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান কে সরিয়ে মুশফিককে অধিনায়ক করায় বিতর্কিত হন তিনি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাঁর থাকার কথা থাকলেও পারিবারিক কারন কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের কোচ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

রিচার্ড পাইবাস (২০১২)

ইংলিশ বংশোদ্ভুত দক্ষিণ আফ্রিকান পাইবাসও বেশি সময় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছিলেন না। বিসিবির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চুক্তি ছাড়াই অনেকটা রাগ করে বাংলাদেশের কোচিং করাতে থাকেন তিনি। তিনিও স্টুয়ার্টের মতন বিসিবির অনেক অনিয়মের প্রতিবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত হঠাৎ করেই চারমাস পর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান।

শেন জার্গেনসেন (২০১২-২০১৪)

স্টুয়ার্ট ল ও রিচার্ড পাইবাসের সহকারি হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন তিনি। পাইবাস চলে যাওয়ার কারনে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন বলেন তাঁকেই বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাঁকে।

আগের তিন কোচের মতন তাঁরও বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ ও অভিমান শুরু হয়। তিনি চলে যেতে চাইলে বাংলাদেশ বোর্ড প্রায় এক বাক্যে রাজি হয়ে যায়। তবে কি কারনে বাংলাদেশের কোচিং ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সেই উত্তর আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি।

তিনি যে এখনও বাংলাদেশ দলকে ভালবাসেন। সেটা তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার ও ফেইবুক ঘাঁটলেই বোঝা যায়। তিনি এখনও বাংলাদেশের খেলা নিয়মিত দেখেন এবং খোঁজখবর রাখেন।

চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে (২০১৪-২০১৭)

২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে শেন জার্গেনসেনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে বাংলাদেশ দলকে রীতিমতো বদলিয়ে দেন তিনি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ শক্তিশালী দল হতে শুরু করে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ একে একে ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিস এবং দক্ষিন আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজ জয় করে। ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশ শক্তিশালী এক দল হিসেবে প্রমাণ করে নিজেদেরকে।

বোর্ডের প্রিয় কোচ থাকায় সুযোগ সুবিধা বেশি পাচ্ছিলেন হাথুরু। অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে মাথা নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। সবকিছুতে স্বেচ্ছাচারিতা করতে থাকেন তিনি। তাঁর কথার উপর কেউ কথা বলতে পারতেন না। ভিতরের খবর থেকে জানা যায় টি২০ তে মাশরাফির অবসর ঘোষণা আসে তাঁর কারনেই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে দন্দে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁর চুক্তি থাকলেও দক্ষিন আফ্রিকা সফর শেষে বাংলাদেশে না এসেই পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। যোগ দেন নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাঁর প্রথম সিরিজ পরে বাংলাদেশের সঙ্গেই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে