ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের জন্য এটুকুই সান্ত্বনা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ০৮ ১৩:০৭:১৪
মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের জন্য এটুকুই সান্ত্বনা

১২ বলে দরকার ৩০ রান। শেষ ওভারটা আবার রশিদের, যিনি তখনো কোনো উইকেট পাননি। কে জানত, আগ্নেয়গিরির লাভা বের হতে চলেছে ওই দুই ওভারে? হতোদ্যম বাঙালির মুখোজ্জ্বলের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন ছোটখাটো চেহারার মুশফিকুর?

জানাতের প্রথম পাঁচটা বল বাউন্ডারি পাঠালেন তিনি চরম ঔদ্ধত্যে। এক একটি চার যেন একেকজন সমালোচনাকারীর ঠিকানা লেখা প্রতিবাদপত্র। একুশটা রান নিয়ে রাখলেন শেষ ওভারের জন্য রাখলেন মাত্র ৯টা রান। রশিদের জুজু কোন জাদুতে তখন অন্তর্হিত। ৮৪ রানের জুটি গড়ে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ তখন সিংহ বিক্রমে চলাফেরা করছেন। ৬ বলে ৯ রান। পারব আমরা পারব; এমন একটা বিশ্বাস মুশফিকেরা ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রেস বক্সের বঙ্গজ সাংবাদিকদের মধ্যেও। অপমানের জ্বালা কিছুটা হলেও একটু মিটবে। এই ভাবনায় ভর দিয়ে মনকে আশ্বস্ত করছি এই বলে যে রশিদের ওভারেই জয় ছিনিয়ে নিলে সেটাই যেন হবে ক্ষতের মধুর প্রলেপ।

অথচ সেই ভাবনা ক্ষণস্থায়ী হবে কে ভেবেছিল? রশিদের প্রথম বলেই সুইপ করে ফিরে গেলেন মুশফিক। নামলেন আরিফুল। পাঁচ বলে ৯। হয়, হয়, খুব হয়। প্রবোধ দিচ্ছি আমরা মনকে। চার বলে ৮। এ যেন হাঁটি হাঁটি পা পা এগোনো। দুই বলে ৫। শেষ বলে একটা চার। কে বলে হয় না? শেষ বলে তো ছয়ও হয়?

রশিদের শেষ বলটা আরিফুল লং অনে তুলে দিলেন। চার নয়, অবধারিত ছয় হতে চলেছে। লং অনের একটু স্কয়ারে দাঁড়ানো সফিউল্লা বলটা ধরে ভেতরে ফেললেন। মনে হলো বলটা যেন বাউন্ডারির দড়িতে লাগল। মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল পড়ি মরি করে দু রান নিয়ে তৃতীয়টির দৌড় দিয়েছেন। সেটি কমপ্লিট হলেই টাই। গোটা স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে উঠেছে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়ের খোঁজে। কিন্তু শেষ হলো না স্বপ্নময় সেই ভাবনা। রশিদের শেষ ওভারেই সব আশা শেষ হয়ে গেল। তৃতীয় ম্যাচেও হারতে হলো বাংলাদেশকে। তিনটি রান আউট শেষ করে দিল সব আশা।

গত পাঁচ দিন ধরেই প্রবল ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল, অথচ সেই এক তারিখের পর আর একবারের জন্যও দেরাদুনে ঝড় উঠল না। বৃহস্পতিবার শুরু থেকে কেন যেন মনে হচ্ছিল, বঙ্গজ বাঘেরা শেষ ম্যাচে ঝড় তুলে আহত অহংবোধে কিছুটা প্রলেপ দেবে। পেন্ডুলামের মতো দোলায় রেখেছিল সেই আশা। কিন্তু নবম ওভারে পয়েন্টে সাকিবের অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে শেনওয়ারি সেই আশায় প্রথম ঘা মারলেন। ৫৩ রানে ৪ উইকেট খোয়ানোর পর এই ধরনের আশা কর্পূরের মতো আপনা-আপনিই কর্পূরের মতো উবে যায়। যাবেই তো। কেননা তখনো রশিদ হাতই ঘোরাননি!

সাকিব আউট হলেন আউটের মতো। কিন্তু তাঁর আগের তিনজন? সৌম্য ও লিটন অবুঝের মতো রান আউট। নবির দ্বিতীয় ও দলের ষষ্ঠ ওভারে। লিটনের আউট যেন সৌম্যর আউটের অ্যাকশন রিপ্লে। তাঁদের আগে তামিম ফিরেছেন মুজিবুরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে। রশিদের মতো সমীহ মুজিবুরকেও করতে হলে স্কোর বোর্ডে তালা ঝুলিয়ে দিতে হয়। তামিম তাই শাফল করে স্কয়ারে মারতে গিয়ে বল তুলে দিলেন কভারে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে তামিমকে পকেটে পুরে মুজিবুর তাঁর কাজ সারলেন। চার ওভারে দিলেন মাত্র ২৫ রান। তাঁর থেকেও কৃপণ প্রবীণ মহম্মদ নবি। মাহমুদউল্লাহকে একটা ৬ দিয়েও তাঁর দান খয়রাত মাত্রই ২০।

সিরিজের মীমাংসা আগেই হয়ে যাওয়ায় শেষের এই ম্যাচটা এতটাই এলেবেলে হয়ে পড়ে যে খেলার আগে দুই দেশের জাতীয় সংগীতই গাওয়া হলো না। সে জায়গায় চলল মাঠে চেয়ার পেতে বিজয়ী আফগানদের ফটো সেশন। এই বিস্ময় কাটতে না কাটতে ঘোর লাগিয়ে দিলেন শাহজাদ, মেহেদি মিরাজের প্রথম ওভারেই ১৮ রান নিয়ে। ওভার শেষে মেহেদিকে বড় বেচারা বেচারা লাগল। বেচারাই তো। সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না। নাজমুল প্রথম ধাক্কা দিলেন আম্পায়ারের বদান্যতায়। নাগিন নাচ দেখালেন বটে, তবে রিপ্লেতে আমরা দেখলাম, পায়ে নয়, বলটা লেগেছিল শাহজাদের গ্লাভসে। সেটা অষ্টম ওভার। পরেরটায় নবির আউট অবশ্য ক্লিন। আবু জায়েদের ঠোকা বলটা পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়লেন। সকাল দেখে দিন সব সময় চেনা যায় না। প্রথম ওভারের ধারা বজায় থাকলে ১৪ তম ওভারে ১০০-র বদলে আফগানদের দেড় শ পেরোনোর কথা ছিল।সেটা হতে না দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই নাজমুল, সাকিব, আবু জায়েদ ও আরিফুলের। প্রথম ওভারটা বাদ দিলে ১০ রানের বেশি রান হয়েছে ওভার ১৩,১৪,১৭ ও ১৮তম ওভারে। সাব্বির, মোসাদ্দেক ও রুবেলকে বাদ দিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট যে তিনজনের ওপর ভরসা রাখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে হতাশ করেন একমাত্র মেহেদি মিরাজ। আবু জায়েদ ও আরিফুলের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। সাকিব ৪৯৯ তে থমকে ছিলেন। তাঁর শেষ ওভারের শুরুতেই সেই মাইলস্টোন পেরোলেন সাকিব। নাজমুল খেলাটা শেষ করলেন দ্বিতীয় নাগিন ড্যান্স নেচে। সাকিবের সঙ্গেই পাল্লা দিয়েছেন তিনি। চার ওভারে সাকিব ১৫ রান দিয়ে একটা উইকেট পেয়েছেন, নাজমুল একটা রান বেশি দিয়ে একটা উইকেটও বেশি নিয়েছেন।

ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা বলেই ক্রিকেট এত জনপ্রিয়। একটা মাত্র বলের খেলাও এই ক্রিকেট। তিন ম্যাচের এই সিরিজে একটাও হাফ সেঞ্চুরি নেই। এটা যেমন আশ্চর্যের, তেমনই অবিশ্বাস্য রশিদের আত্মবিশ্বাস। যদি বলা যায় সিরিজটা হলো রশিদ বনাম বাংলাদেশ, অতিশয়োক্তি নিশ্চয় হবে না। কিন্তু একই সঙ্গে যে জেদ ও পরাক্রম দেখালেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ, দশ ওভারের সম্মান রক্ষার যে লড়াইটা তাঁরা লড়লেন, দেরাদুনবাসীর কাছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এটুকু না হলে সিরিজটা বর্ণহীন ও ম্যাড়মেড়ে হয়ে যেত। এটুকুই সান্ত্বনা।-প্রথম আলো

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে